বার্সেলোনা-ভিয়ারিয়াল ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রে, লা লিগার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত

মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামরয়টার্স

স্প্যানিশ লা লিগা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, বার্সেলোনা ও ভিয়ারিয়ালের মধ্যে নির্ধারিত লিগ ম্যাচ আগামী ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে অনুষ্ঠিত হবে। ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (উয়েফা) চলতি সপ্তাহের শুরুতে ম্যাচটি স্পেনের বাইরে আয়োজনের অনুমতি দেওয়ার পরই এ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এল।

লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস গতকাল মায়ামিতে ‘ওয়ার্ল্ড সকার সামিট’ সম্মেলনে ইএসপিএনের সাংবাদিক ফার্নান্দো পালোমোকে বলেছেন, ভিয়ারিয়াল ও বার্সেলোনার মধ্যে ম্যাচটি মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামে আয়োজনের ‘সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ’।

ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের ইতিহাসে বিদেশের মাটিতে আয়োজিত হতে যাওয়া প্রথম ম্যাচ হবে এটি। এর আগে এনএফএল এবং এনবিএ এই পদ্ধতি অনুসরণ করেছে।

লা লিগার জন্য ঐতিহাসিক পদক্ষেপ

লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই ম্যাচ একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যা লা লিগা ও স্প্যানিশ ফুটবলকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেল। আমরা জানি, এতে কিছু উদ্বেগ থাকবে, কিন্তু পুরো মৌসুমে ৩৮০ ম্যাচের মধ্যে এটি মাত্র একটি ম্যাচ। সারা বিশ্বে লাখ লাখ ভক্ত আছেন লা লিগার। তাঁদের মধ্যে অনেকেই প্রিয় দলকে একবারের জন্য হলেও সরাসরি মাঠে দেখার স্বপ্ন দেখেন। এ ম্যাচ সেই সুযোগ করে দেবে।’

তেবাসের ভাষায়, ‘এই (ম্যাচ) আয়োজনের লক্ষ্য হলো বৈশ্বিক ভক্তদের আরও কাছে পৌঁছানো। আর সেটা স্পেনের মাঠে যাঁরা প্রতি সপ্তাহে খেলা উপভোগ করেন, তাঁদের প্রতি প্রতিশ্রুতি অটুট রেখেই।’

লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস
রয়টার্স

সিজন টিকিটধারীদের ক্ষতিপূরণ দেবে ভিয়ারিয়াল

মৌসুমের সূচি অনুযায়ী ২০ ডিসেম্বর ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল ভিয়ারিয়ালের মাঠ লা সেরামিকায়। লা লিগার পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাঠ বদলের কারণে ক্লাবের সিজন টিকিটধারীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ভিয়ারিয়াল সভাপতি ফার্নান্দো রোয়িগ বলেছেন, ‘আমরা জানি, এ সিদ্ধান্তে আমাদের সিজন টিকিটধারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই তাঁদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, এটি সবার জন্য দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হবে।’

আরও পড়ুন

খেলোয়াড়দের সংগঠনের আপত্তি

স্পেনে খেলোয়াড়দের সংগঠন ‘এএফই’ লা লিগার এ সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নয়। এএফইয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশের বাইরে লিগ ম্যাচ আয়োজন ক্রীড়াকাঠামোয় প্রভাব ফেলে এবং শ্রমিক অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তোলে। তাই এমন কোনো উদ্যোগের আগে সব পক্ষের, বিশেষ করে খেলোয়াড়দের সম্মতি প্রয়োজন।’ সংগঠনটি শিগগিরই লা লিগা, বার্সেলোনা ও ভিয়ারিয়ালের সঙ্গে বৈঠক করবে।

বার্সেলোনা খুশি, রিয়াল মাদ্রিদ ও ডি ইয়ংয়ের বিরোধিতা

বার্সেলোনা সভাপতি লাপোর্তা এ আয়োজনকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ভক্তদের সঙ্গে আবারও যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। এ সুযোগের জন্য আমরা লা লিগার কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের ক্লাবের বিশ্বজুড়ে কোটি সমর্থক রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার। মায়ামির মতো শহরে অফিশিয়াল ম্যাচ আয়োজন নিঃসন্দেহে হবে এক দারুণ ফুটবল উৎসব।’

তবে সবাই এতে খুশি নয়। রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের বাইরে লিগ ম্যাচ আয়োজন প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নষ্ট করে। বার্সেলোনার ডাচ মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আমার এটা ভালো লাগছে না। ক্লাবগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে, কিন্তু খেলোয়াড়দের জন্য এটি কঠিন—দীর্ঘ ভ্রমণ, ক্লান্তি আর প্রতিযোগিতার ন্যায্যতাও ক্ষুণ্ন হয়।’

আরও পড়ুন

অবশেষে অনুমোদন

লা লিগা ২০১৭ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে একটি ম্যাচ আয়োজনের চেষ্টা করছিল। রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) কঠোর আপত্তির কারণে তা এত দিন আটকে ছিল। অবশেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আরএফইএফ অনুমোদন দেয়, পরে উয়েফাও অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয়। উয়েফার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘দেশের বাইরে লিগ ম্যাচ আয়োজনের বিপক্ষে আমরা। কিন্তু ফিফার নিয়ম এখনো যথেষ্ট স্পষ্ট নয়।’ ফিফার নেতৃত্বে এখন একটি দল নিয়মগুলো পুনর্বিবেচনা করছে, যেন ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়।

হার্ডরক স্টেডিয়ামে বার্সা-ভিয়ারিয়াল ম্যাচের পরদিন এনএফএলে মায়ামি ডলফিনস খেলবে সিনসিনাটি বেঙ্গলসের বিপক্ষে। একই মাঠে ফুটবল খেলার পরদিন আমেরিকান ফুটবল আয়োজন চ্যালেঞ্জিং হলেও আয়োজকেরা বলেছেন, প্রযুক্তিগতভাবে এটা সম্ভব।