‘মহিলা কোচ’ খোঁটা শোনা রব্বানীই সাফ চ্যাম্পিয়ন

সংবাদ সম্মেলনে গোলাম রব্বানী, পাশে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফিবাফুফে

এমন ঐতিহাসিক জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে আসবেন কে?

বেশি দিন আগের কথা নয়, গত জুলাইয়ে মেয়েদের ইউরো জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে উৎসবের আবহ এনেছিলেন ইংল্যান্ডের মেয়েরা। কোচ কথা বলার সময় মেয়েরা সেখানে ঢুকে উৎসবের মেজাজ এনে দেন। বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর অবশ্য এমন কোনো দৃশ্য চোখে পড়ল না।

সংবাদ সম্মেলনে এলেন কোচ গোলাম রব্বানী। পরে ডেকে আনা হলো বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনকে। বাকিরা? নিশ্চিতভাবেই ড্রেসিংরুমের উৎসব ফেলে কেউ আসতে চাননি কিংবা মেয়েদের উৎসব মাটি করে কোচই হয়তো কাউকে সংবাদ সম্মেলনে আনতে চাননি। অর্থাৎ ঐতিহাসিক এই জয়ের পরও কিছুটা হলেও মাটিতেই পা রাখছে বাংলাদেশ নারী জাতীয় দল।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে কোচ গোলাম রব্বানীর কণ্ঠেও অতিরিক্ত কোনো উত্তেজনা প্রকাশ পেল না। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে সবার আগে নিজ দলের খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা জানিয়ে একই কথা বলেছেন নেপালের মেয়েদের প্রতিও। জয়ের স্কোরলাইন ৩–১ হলেও ভালো খেলার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নেপালের মেয়েদের। তারপর বললেন, ‘আমরা নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি। এখন আমরা দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন। (মেয়েরা) নিজেদের সামর্থ্য দেখিয়েছে।’

গোলাম রব্বানী ২০০৯ সাল থেকে আছেন নারী দলের কোচ হিসেবে। আজ উদ্‌যাপনের কেন্দ্রে তিনিই।
বাফুফে

মেয়েদের ফুটবলে শুরু থেকেই দলের সঙ্গে আছেন গোলাম রব্বানী। ২০০৯ সাল থেকে আছেন নারী দলের কোচ হিসেবে। শুরুতে সবাই তাকে তাচ্ছিল্য করতেন। দেখা হলে উপহাস করতেন। আজ সাফের ট্রফি জয়ের পর সে সব দিনের কথা মনে করে রব্বানী বলছিলেন, ‘যখন আমি কোচিং শুরু করি তখন আমার বন্ধুরা বলতো ওই যে মহিলা কোচ যাচ্ছে। রাস্তায় যখন হেটে যেতাম আমাকে দেখে হাসাহাসি করতো। ঠাট্টা করতো আমাকে নিয়ে।’

আরও পড়ুন

সেই রব্বানীই আজ সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ। পরিশ্রমের পুরষ্কার পেয়েছেন, এমনই মনে হচ্ছে তাঁর কাছে, ‘ আমার কাছে কখনোই মনে হয়নি যে আমি কোনো নিচু কাজ করছি। আমি কাজকেই পছন্দ করতাম। আজকের যে অবস্থা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের নিয়ে, সেটা অবশ্যই ভালো লাগার কথা। আমার এতদিনের পরিশ্রম সফল হয়েছে বলব।’

আরও পড়ুন

ফাইনালে ১৪ মিনিটে শামসুন নাহারের গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে আরও একটি গোল হজম করে নেপাল। বিরতির পর একটি গোল হজম করলেও কৃষ্ণা আরও একটি গোল করায় জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। কিছু বাংলাদেশি সমর্থক বাদ দিলে গ্যালারিভর্তি নেপালের সমর্থকেরা ফাইনালে এমন পরিস্থিতি হবে, তা আঁচ করতে পারেননি।

আরও পড়ুন
রব্বানী এখন সাফজয়ী কোচ
বাফুফে

বাংলাদেশ কোচ চেয়েছিলেন আগেভাগে একটা গোল আদায় করতে। রব্বানীর ভাষায়, ‘গতকাল ভেবেছিলাম, সবাই যেহেতু বলছে মাঠে নেপালের দর্শক বেশি থাকবে, আর আমিও খেলোয়াড় থাকতে মোহামেডান–আবাহনী ম্যাচে ৫০ হাজার দর্শক দেখেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তৈরি ছিলাম। মেয়েদেরও মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি। আগেভাগে গোল পেলে নেপাল চাপে পড়বে জানতাম। সেটাই হয়েছে। নেপাল এই সাফে ফাইনালের আগ পর্যন্ত ৩ ম্যাচ খেলেছে, আমরা ৪ ম্যাচ খেলেছি। আমাদের মেয়েদের ফিটনেস এবং দৃঢ়চেতা মনোভাব সত্যই দুর্দান্ত ছিল।’

বাংলাদেশের মেয়েদের এই বদলে যাওয়ার শুরু কবে থেকে—এই প্রশ্নের উত্তরে গোলাম রব্বানী ছয় বছর পেছনে ফিরে যান, ‘রূপান্তরের শুরুটা ২০১৬ সাল থেকে, যখন আমরা থাইল্যান্ডে অনূর্ধ্ব–১৬ টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলাম...আমরা ২০১৬ সালের অক্টোবরেই অনুশীলন শুরু করি। পরের চার–পাঁচ বছর মেয়েরা বেশ কিছু বয়সভিত্তিক ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়।’

আরও পড়ুন