বাংলাদেশে কাজ করার চ্যালেঞ্জ কেন নিলেন ওয়েস্ট হামের সাবেক ফুটবলার

আজ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন বাফুফের এলিট একাডেমির প্রধান কোচ পিটার বাটলারবাফুফে

বাফুফের এলিট একাডেমির প্রধান কোচ হিসেবে এক বছরের নিয়োগ পেয়েছেন পিটার বাটলার। গতকাল ঢাকায়ও এসেছেন ওয়েস্ট হামের সাবেক এই ফুটবলার। ওয়েস্ট ব্রমউইচ, নটস কাউন্টি ও হ্যালিফ্যাক্স টাউনের হয়েও খেলা এই ব্রিটিশ ফুটবলারের কোচিং ক্যারিয়ারও বেশ সমৃদ্ধ।

আরও পড়ুন

‘হাই প্রোফাইল’ একজন কোচই একাডেমির জন্য এনেছে বাফুফে। ফলে বাফুফের কর্তারা বেশ তৃপ্ত। কমলাপুর স্টেডিয়ামে এলিট একাডেমির ফুটবলারদের সঙ্গে আজ পরিচিত হয়েছেন ৬১ বছর বয়সী বাটলার। ৫২ জন ফুটবলারের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আমার জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ।’

চ্যালেঞ্জ উতরানোর পথও তাঁর জানা, ‘আমি মিয়ানমারে একাডেমির কোচ ছিলাম। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ছিলাম। এশিয়া-আফ্রিকায় কাজ করেছি। লাইবেরিয়া-বতসোয়ানার কোচ হিসেবে কাজ করেছি। এসব অভিজ্ঞতাও কাজে আসবে এখানে।’
বাটলারের বিশ্বাস, তরুণদের উন্নয়নই ফুটবলে উন্নয়নের পথ। বাংলাদেশেও তাঁর লক্ষ্য তরুণদের সামনে এগিয়ে নেওয়া। তবে তরুণদের উন্নয়ন যে ধারাবাহিক একটা প্রক্রিয়া, সেটাও মনে করিয়ে দেন বাটলার। রাতারাতি ১০-২০ ভাগ উন্নতি করে ফেলবে বাংলাদেশ, সেটাও মনে করেন না তিনি। বাটলারের ভাষায়, ‘প্রতিদিন শিখতে হবে।’

খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন বাটলার
বাফুফে

এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবল যে এগিয়েছে, তা–ও বাটলারের অজানা নয়।

বাটলার বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, তরুণেরাই ভবিষ্যৎ। সর্বশেষ লাইবেরিয়া জাতীয় দলের কোচ ছিলাম। তার আগে বতসোয়ানার কোচ। আমার সময় বতসোয়ানা ফিফার তালিকায় ৮৬–তে আসে। আসলে তরুণদের ওপর সব সময়ই আমার বিশ্বাস থাকে। এটাও বিশ্বাস করি, তরুণেরাই বাংলাদেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ। তবে মনে রাখতে হবে, ফুটবল উন্নয়ন ধারাবাহিক একটা প্রক্রিয়া। আমাদের ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যেতে হবে।’

কেউ কেউ মনে করে, এই কাজটার জন্য (বাংলাদেশের একাডেমির কোচ) অতি যোগ্যতাসম্পন্ন কোচ আমি। তবে আমি এর সঙ্গে একমত নই।
পিটার বাটলার

বাংলাদেশে এসেছেন কী বার্তা নিয়ে? ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে নিজের বেড়ে ওঠার কথা উল্লেখ করে বাটলার তাকালেন ফেলে আসা পথে, ‘ইয়র্কশায়ারে ক্রিকেটময় একটা পরিবেশে বেড়ে উঠেছি। যেখানে ফুটবলও ছিল। তার মধ্যেই পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। সেটা পূরণও করেছি। ওয়েস্ট হামের মতো দলে খেলেছি। ইংল্যান্ডে আমি ৫০০-এর বেশি ফুটবল ম্যাচ খেলেছি।’

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এর নিচু স্তর মিলিয়ে খেলোয়াড়ি জীবনে ইংল্যান্ডে মোট ৯টি ক্লাবে খেলেছেন বাটলার। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত খেলেছেন ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেডের হয়ে। ওয়েস্ট ব্রমউইচ আলবিওনে খেলেছেন ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত। বাটলার উঁচু স্তরে ফুটবল খেলেছেন, কোচিং–জীবনও সমৃদ্ধ। তাই প্রশ্নটি জাগেই—বাংলাদেশে এসেছেন কেন?

তরুণদের নিয়ে কাজ করতে চান বাটলার। আজ কমলাপুর স্টেডিয়ামে
বাফুফে

উত্তর শুনুন বাটলারের মুখেই, ‘কেউ কেউ মনে করে, এই কাজটার জন্য (বাংলাদেশের একাডেমির কোচ) অতি যোগ্যতাসম্পন্ন কোচ আমি। তবে আমি এর সঙ্গে একমত নই।’ বাটলার কেন একমত নন, কমলাপুর স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘আপনি সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শিখতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি, এই তরুণদের (পাশে থাকা) সহায়তা করতে পারি। এখানে কোচ আছে, তাদের মধ্যে নিজের জ্ঞানটা ছড়িয়ে দিতে পারলে সেটা দারুণ হবে। আমি বিশ্বাস করি, এই ফুটবলার, কোচরা আমার কাছে যেমন শিখতে পারবে, আমিও তাদের কাছে শিখতে পারব।’

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে বাটলারের প্রাথমিক ধারণা কেমন ছিল জানতে চাইলে বলেন, কিছু মানুষের কাছে বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে জেনেছেন। বাংলাদেশ ফুটবলে উদীয়মান দেশ। এখানে ফুটবল নিয়ে কাজ করার একটা সুযোগ তাঁর জন্য। সেটারই অংশ হিসেবে ৬৪ জেলায় তাঁর পক্ষে যে যাওয়া অসম্ভব, সেটাও বলেছেন। তবে আঞ্চলিক কোনো টুর্নামেন্ট বা কোনো কর্মসূচি আয়োজন করা হলে অবশ্যই ঢাকার বাইরে যাবেন বলে জানিয়েছেন বাটলার।

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৮৩তম অবস্থানে বাংলাদেশ। এখান থেকে বাংলাদেশ কি পারবে র‌্যাঙ্কিংয়ে আরও ওপরে উঠে আসতে? উত্তর শুনুন বাটলারের মুখেই, ‘জাতীয় দল আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। আমার কাজ ভিন্ন। আমি খেলোয়াড় তৈরির কাজে মনোযোগ দেব। নিশ্চয়ই আমি এখানে সাফল্য পেতে চাই। সাফল্য বলতে আমি বুঝি প্রতিটি ম্যাচ জেতা। এখানে ফল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।’

একাডেমির খেলোয়াড়দের সঙ্গে বসেছিলেন বাটলার
বাফুফে

অনেক দেশে কাজ করার সুবাদে নিজেকে আন্তর্জাতিক কোচ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বাটলার। শুধু ইংলিশ ঘরানা নিয়ে পড়ে নেই, জানিয়েছেন সেটাও। তিকিতাকা নিয়েও কাজ করার কথা জানিয়েছেন। ইংলিশ ঘরানার ফুটবল মানেই যে বাতাসে ভাসানো দীর্ঘ পাস ও শরীরনির্ভর খেলা, সেটা তিনি মনে করেন না। উদাহরণ দিলেন, ‘ওয়েস্ট হাম সত্তর, আশির দশকে দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে, যেটা আপনি ভাবতেও পারবেন না। আসলে ম্যাচে সেরাটা দেওয়াই মূল কথা। নিজেদের তুলে ধরাই গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও পড়ুন

কোচ তো আনা হলো। কিন্তু মাঠ? বাটলারের অধীন তরুণ খেলোয়াড়েরা অনুশীলন করবেন কমলাপুর স্টেডিয়ামের জরাজীর্ণ টার্ফে। তাতে কতটা উন্নতি করা সম্ভব? নেই অন্য অনেক সুবিধাও। শুধু উঁচু মানের কোচ আনলেই হয় না, আরও অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়। সেসব নেই বাফুফের। এ প্রসঙ্গে বাটলারের পাশে দাঁড়িয়ে বাফুফের সহসভাপতি ও ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান আতাউর রহমান ভূঁইয়া অহসায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছেন, ‘কমলাপুরের মাঠের অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু এর মধ্যেই চলতে হবে। এই টার্ফ বদলে নতুন টার্ফ দেবে ফিফা। আশা করি, সেটা অনুমোদন পেয়ে যাব সামনের সপ্তাহে। টার্ফের কাজ চলার সময় প্রয়োজনে আমরা মাঠ ভাড়া নেব।’

বাফুফে একাডেমির এই কোচকে কি লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে? আতাউরের ভাষায়, ‘মাত্র তো এলেন। আরও কথা হবে। তবে চাওয়া একটাই, ছেলেদের ভালো একটা জায়গায় পৌঁছে দেওয়া। আমরা তাঁকে আনতে অনেক চেষ্টা করেছি। তাঁর আগ্রহের চেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল আমাদের। আমরা চেয়েছি একজন ভালো কোচ। আশা করি, তিনি ভালো কিছু দেবেন। তাঁর পারফরম্যান্স দেখতে পাবেন।’