যে ম্যাচের শিরোনাম এমবাপ্পে বনাম পিএসজি
আজ আবার সেই পথেই দেখা হয়ে গেল/কত সুর কত গান মনে পড়ে গেল...পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানের এ লাইন দুটির মতো ফুটবলের পথ পেরোতে পেরোতে কিলিয়ান এমবাপ্পে আর পিএসজির আজ আবার দেখা হয়ে যাচ্ছে। যে পথে একদিন এমবাপ্পে আর পিএসজি হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে একই গন্তব্যে পৌঁছানো আর একই স্বপ্ন অর্জনের আশায়, আজ সেখানে দুই পক্ষের দেখা বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে। ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এমবাপ্পে আজ রিয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে দাঁড়িয়ে পিএসজির বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্নের পথ আগলে!
জীবনের এমন এক বাঁকে দাঁড়িয়ে এমবাপ্পের মনে যেমন অম্ল ও মধুর, নানা রকমের স্মৃতি ভিড় করার কথা, পিএসজি শিবিরেও তা–ই। এমবাপ্পের মনে পড়বে মোনাকো থেকে সেই ২০১৭ সালে ধারের চুক্তিতে পিএসজিতে যাওয়া। এরপর স্থায়ী চুক্তি এবং অল্প দিনেই প্যারিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠা। সেখান থেকে ক্লাবটির হয়ে একে একে জেতা ছয়টি লিগসহ ১৫টি শিরোপার কথা। একই সঙ্গে হয়তো মনে পড়বে প্যারিসের শেষ দিনগুলোয় পিএসজির সমর্থক আর কর্মকর্তাদের কাছে নায়ক থেকে ‘খলনায়ক’ হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও।
পিএসজির ক্ষেত্রেও তা–ই। এমবাপ্পের সামনে দাঁড়িয়ে কাতারি মালিকানার পিএসজি শিবিরে হয়তো পুরোনো সেই ব্যথা জেগে উঠবে আবার—যে এমবাপ্পেকে এত ভালোবাসা দিয়েছিলেন তাঁরা, সেই এমবাপ্পেই কিনা কখনো সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাতে পারেননি। তার ওপর তাঁদের ভাষায় ২০২৪ সালে পিএসজির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে রিয়ালে যোগ দিয়েছেন এমবাপ্পে। এমবাপ্পে চলে যাওয়ার পর চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জেতা পিএসজি আজ তাই চাইবে রিয়ালকে হারিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে ‘বিশ্বাসঘাতক’-এর ওপর প্রতিশোধ নিতে! কারণ? স্মৃতি বড় উচ্ছৃঙ্খল, দুহাজার বছরেও সব মনে রাখে! এ তো মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময়ের কথা!
তবে পুরোনো ক্লাবের মুখোমুখি হওয়ার আগে তাদের ক্ষোভ কমাতেই কি না কে জানে, এমবাপ্পে পিএসজির বিপক্ষে করা হয়রানির মামলা তুলে নিয়েছেন! এতে যে খুব একটা কাজ হবে, তা মনে হচ্ছে না। পিএসজির সমর্থক বা কর্মকর্তারা এমবাপ্পের রিয়ালে নাম লেখানোটাকে তাঁদের বিরুদ্ধে ফরাসি স্ট্রাইকারের ‘প্রতারণা’ হিসেবেই নিয়েছিলেন আর এর জন্য তাঁরা এমবাপ্পেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবেন না বলেই মনে হয়।
পিএসজির বিরুদ্ধে এমবাপ্পের করা হয়রানির মামলা তুলে নেওয়ার বিষয়ে ফরাসি পত্রিকা লেকিপ যা লিখেছে, সেই সুরটাও অনেকটা সে রকমই, ‘রিয়াল মাদ্রিদের স্ট্রাইকার এবং তার কাছের লোকেরা পরিস্থিতি শান্ত করে খেলায় মনোযোগ দিতে চায়।’
কিন্তু যাঁর ওপর প্রতিশোধ নিতে উদ্গ্রীব পিএসজি, সেই এমবাপ্পে আজ শুরুর একাদশে থাকবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। ক্লাব বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে অসুস্থ হয়েছিলেন এমবাপ্পে। এরপর রিয়ালের শুরুর দিকের ম্যাচগুলোয় খেলা হয়নি তাঁর, সর্বশেষ ম্যাচে খেলেছেন বদলি হিসেবে। তাঁর পজিশনে জায়গা পাওয়া গনসালো গার্সিয়া কোচ জাবি আলোনসোকে মুগ্ধ করতে পেরেছেন। চার গোল নিয়ে সেরহু গিরাসি, আনহেল দি মারিয়া ও মার্কোস লিওনার্দোর সঙ্গে যৌথভাবে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনিই।
এমবাপ্পে অবশ্য তাঁর পুরোনো ক্লাবের বিপক্ষে খেলতে উন্মুখ। সেটাও পিএসজিকে ‘দেখিয়ে দেওয়ার’ ইচ্ছা থেকেই কি না, বলা মুশকিল। কিন্তু এমবাপ্পেকে শুরুর একাদশে খেলানোর নিশ্চয়তা রিয়ালের কোচ আলোনসো দুই দিন আগে পর্যন্ত দিতে পারেননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘সে এখনো সুস্থ নয়, শতভাগ ফিট নয়। কিন্তু সে প্রতিদিনই উন্নতি করছে।’ তাহলে বিশ্বজোড়া ফুটবলপ্রেমীরা যে ‘এমবাপ্পে বনাম পিএসজি’ ব্লকবাস্টার লড়াই দেখার অপেক্ষায় আছে, সেটা কি শেষ পর্যন্ত হবে না? হবে না এমবাপ্পের সঙ্গে পিএসজির মধুর আর তিক্ততায় মোড়া সম্পর্কের যে আখ্যান, সেটির পুনরুত্থান!
বিষয়টা কি এমন হয়ে যাবে—খেলোয়াড় না থাকলে খেলব কার সঙ্গে! বাংলাদেশ সময় আজ দিবাগত রাত ১টায় পাওয়া যাবে এর উত্তর। রিয়াল-পিএসজি ম্যাচটি যে শুরু তখনই।