মুন্নাকে কি ভুলে যাবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের সাবেক ফুটবলার মোনেম মুন্নাফাইল ছবি

সারা বছর কেউ খবর রাখে না—চোখেমুখে রাজ্যের হতাশা নিয়েই কথাটা বলছিলেন কিংবদন্তি ফুটবলার কিংব্যাকখ্যাত মোনেম মুন্নার সহধর্মিণী সুরভী মোনেম।

মুন্না চলে যাওয়ার ২০ বছর পূর্তি আজ। অথচ তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কারও। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে) দৃশ্যমান কিছু করেনি। বাফুফের সহসভাপতি ফাহাদ করিম বলেছেন, ভবিষ্যতে মুন্নাসহ দেশের নামকরা ফুটবলারদের স্মৃতি সংরক্ষণে আর্কাইভ করার পরিকল্পনা আছে তাঁদের, ‘আমরা অবশ্যই আর্কাইভ করব। যেখানে মুন্নার মতো কিংবদন্তি ফুটবলাররাও থাকবেন। তাঁরা তো আমাদের রত্ন। দেশের ইতিহাস যাতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারে, সে ব্যবস্থা অবশ্যই থাকবে।’

আমি মরে গেলে মুন্নাকে নিয়ে বলারও কেউ থাকবে না। আমার ছেলে–মেয়ে এতটা ইতিহাস জানে না। তবে আমরা মাঝেমধ্যে বললে মন দিয়ে শোনে। বোঝার চেষ্টা করে।
সুরভী মোনেম

জীবনের শেষ দিনগুলো ধানমন্ডির শেরেবাংলা রোডের ৪৯/এ নম্বর বাড়ির ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটে কাটিয়েছেন এই মহানায়ক। কাল সেখানে গিয়ে পা রাখতেই চোখে পড়ল কতশত স্মৃতি। ঘরের দেয়ালের পশ্চিম পাশে বড় করে টাঙানো অনেক ছবি। শোকেসে থরেথরে সাজানো ক্রেস্ট, সম্মাননা স্মারকসহ আরও কিছু স্মৃতি-স্মারক। এগুলোই এখন মুন্নার পরিবারের বড় সম্পদ।

মোনেম মুন্নার জার্সির সামনে স্ত্রী ও পুত্র
শামসুল হক

ছেলে আজমান সালিদ, কন্যা ইউসরা মোনেমকে স্ত্রীর কোলে তুলে দিয়ে ২০০৫ সালের আজকের দিনেই কিডনি জটিলতায় না–ফেরার দেশে পাড়ি জমান মুন্না। আজ মুন্না-সুরভীর বিবাহবার্ষিকীও। এমন দিনে স্বামীর পুরোনো ছবির অ্যালবামে হাত রেখে স্ত্রী সুরভীর মুখে আক্ষেপ ঝরে, ‘আমি মরে গেলে মুন্নাকে নিয়ে বলারও কেউ থাকবে না। আমার ছেলে–মেয়ে এতটা ইতিহাস জানে না। তবে আমরা মাঝেমধ্যে বললে মন দিয়ে শোনে। বোঝার চেষ্টা করে। ছেলেটা প্রায়ই আবাহনীতে যায়, কোনো ফুটবলারের সঙ্গে দেখা হলে মুন্নাকে নিয়ে কথা বলা শুরু করে। ও বাবাকে অনেক মিস করে, আমি প্রতিনিয়ত তা টের পাই।’

আরও পড়ুন
১৯৯৫ সালে তাঁর অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ ফুটবল দল প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি জেতে। ১৯৯২ সালে আবাহনীর সঙ্গে ২০ লাখ টাকার চুক্তি করে আলোড়ন ফেলেছিলেন মুন্না। কলকাতা ইস্ট বেঙ্গলে আলো কাড়েন। নতুন প্রজন্মের ফুটবলাররাও মুন্নাকে সেভাবে চেনেন না। কেউ শুনেছেন তিনি বড় মাপের ফুটবলার, কেউ জেনেছেন তাঁর অনেক নামডাক।

মুন্না ছিলেন দেশের ফুটবলে ধ্রুবতারা। ১৯৯৫ সালে তাঁর অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ ফুটবল দল প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি জেতে। ১৯৯২ সালে আবাহনীর সঙ্গে ২০ লাখ টাকার চুক্তি করে আলোড়ন ফেলেছিলেন মুন্না। কলকাতা ইস্ট বেঙ্গলে আলো কাড়েন। কিন্তু এই মহাতারকাকে দেশের মানুষ যেন ভুলতে বসেছে। নতুন প্রজন্মের ফুটবলাররাও মুন্নাকে সেভাবে চেনেন না। কেউ শুনেছেন তিনি বড় মাপের ফুটবলার, কেউ জেনেছেন তাঁর অনেক নামডাক। কাল যেমন জাতীয় দলের তরুণ ফরোয়ার্ড পিয়াস আহমেদ নোভা বললেন, ‘আমি কখনো তাঁর খেলা দেখিনি। তাঁকে নিয়ে সেভাবে জানিও না। তবে ক্লাবের বড় ভাইদের মুখ থেকে তাঁর কথা শুনেছি।’ আরেক তরুণ শেখ মোরছালিনের কথায়, ‘শুনেছি উনি নামকরা ফুটবলার ছিলেন। তাঁর খেলা দেখা হয়নি। ইচ্ছা আছে বই পড়ে হলেও তাঁর সম্পর্কে জানার।’

আরও পড়ুন
১৯৯০ বেইজিং এশিয়ান গেমসে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মোনেম মুন্না। ছবিতে তাঁকে জাপানের অধিনায়কের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যাচ্ছে
ছবি: মোনেম মুন্নার পারিবারিক অ্যালবাম থেকে

ওপার বাংলার কেউ এপারে এলে জানতে চান মুন্নার পরিবারের কথা। কিন্তু মুন্নার চলে যাওয়ার দুই দশকেও তাঁর পরিবারের চাওয়াগুলো পায়নি পূর্ণতা। মুন্নার সহধর্মিণীর স্বপ্ন ছিল ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডের ব্রিজে প্রয়াত তারকার একটি প্রতিকৃতি বসানোর, নারায়ণগঞ্জে মুন্নার নামে একটি স্টেডিয়াম করার। সেসবের কিছুই হয়নি। যা–ও ৮ নম্বর রোডের ব্রিজে একটি নামফলক রয়েছে, সেটিও মাঝেমধ্যে নানা পোস্টারে ঢাকা পড়ে। এ নিয়ে সুরভীও কম দৌড়ঝাঁপ করেননি। নিজেই বলেন, ‘...এ জন্য আমি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলাম। তিনি (জাহিদ আহসান রাসেল) অনুমোদনও করেছিলেন। এরপর কেন হয়নি, জানি না।’

জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আজমল হোসেন বিদ্যুৎ জানিয়েছেন, মুন্নার জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জে আজ স্থানীয় সোনালী অতীত ক্লাব ও মোনেম মুন্না স্মৃতি সংসদ শোক র‍্যালি ও কাঙালিভোজের আয়োজন করবে।

আরও পড়ুন