বাজির প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও দুঃস্বপ্নের নাম আর্লিং হলান্ড

অবিশ্বাস্য ছন্দে থাকা হলান্ড প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের জন্য যেন মূর্তিমান আতঙ্কছবি : টুইটার

২০২০ সালে এক খেলোয়াড়কে পেতে যখন ৪০টি ক্লাব লড়াইয়ে নেমেছিল, তখনই সবাই বুঝে ফেলেছেন বিশ্ব ফুটবলে এসে গেছেন ভবিষ্যতের মহাতারকা। সেই খেলোয়াড় আর কেউ নন, আর্লিং ব্রট হলান্ড।

নরওয়েজীয় এই ‘গোল মেশিন’ সে সময় চাইলেই টাকার সাগরে ডুব দিতে পারতেন। কিন্তু নিজেকে আরও পরিণত করে তুলতে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো পরাশক্তি ক্লাবের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে। জার্মান ক্লাবটিতেও ম্যাচের প্রায় সমানুপাতিক (৮৯ ম্যাচে ৮৬ গোল) হারে গোল করেছেন। একাধিকবার চোট বাধা হয়ে না দাঁড়ালে নির্দিষ্ট এক ক্লাবের হয়ে গোলের সেঞ্চুরিটাও হয়তো পূরণ করে ফেলতেন। তবে যেটুকু করেছেন, সেটাই তাঁকে ডর্টমুন্ড থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।

৬৯২ কোটি টাকায় হলান্ডকে গত বছর ডর্টমুন্ড থেকে নিয়ে আসে ম্যানচেস্টার সিটি। আরও বড় প্রস্তাব পেলেও বাবা আলফি হলান্ডের সাবেক ক্লাবকেই নিজের নতুন ঠিকানা বানাতে চেয়েছিলেন। জন্মভূমি নরওয়ের ক্লাব মোলদে থেকে অস্ট্রিয়ার রেড বুল সাল্‌জবুর্গ, এরপর জার্মানির ডর্টমুন্ড হয়ে ব্রিটিশ মুলুকে—চার বছরে চার দেশের চার ক্লাবে খেলে ফেলেছেন হলান্ড। কিন্তু গোল–সামর্থ্য কমেনি; বরং বেড়েই চলেছে।

সিটির সর্বশেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন হলান্ড
ছবি : টুইটার

ক্লাব ক্যারিয়ারে এখনো ২০০ গোল হয়নি আর্লিং হলান্ডের। মূল দলে খেলার ৮ বছরে ২০৯ ম্যাচে গোল ১৬৬টি। যেভাবে খেলে চলেছেন, তাতে সিটি স্ট্রাইকার কোথায় গিয়ে থামবেন? ক্লাব সতীর্থ কেভিন ডি ব্রুইনা তো বলেই দিয়েছেন, হলান্ডের পক্ষে ৮০০ গোল করা খুবই সম্ভব মনে হচ্ছে।

৮০০! একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল কিনা, সেটাই সময়ই বলে দেবে। এই মাইলফলক ছুঁতে গেলে যে ২০৩৭ সাল পর্যন্ত প্রতি মৌসুমে কমপক্ষে ৪২টি করে গোল করতে হবে। তবে ইংলিশ ফুটবলে নিজের অভিষেক মৌসুমে যা করেছেন, তাতেই বাজিকর প্রতিষ্ঠানগুলোর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

আরও পড়ুন

প্রিমিয়ার লিগে ১৯ ম্যাচেই ২৫ বার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছেন হলান্ড। লিগের এক মৌসুমে অ্যান্ড্রু কোল ও অ্যালান শিয়ারারের সর্বোচ্চ ৩৪ গোলের রেকর্ড ভেঙে দেওয়া এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। হ্যাটট্রিকেও হয়তো শিয়ারারকে ছাড়িয়ে যাবেন হলান্ড। সাবেক ব্ল্যাকবার্ন স্ট্রাইকারের এক মৌসুমে করা রেকর্ড পাঁচ হ্যাটট্রিক থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে ২২ বছর বয়সী তারকা। যার শেষটি করেছেন গত রোববার উলভারহাম্পটনের বিপক্ষে।

হলান্ডের এই গোলবন্যা এরই মধ্যে বাজির সাইটগুলোর জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়েছে দাঁড়িয়েছে। শুধু বেটফ্রেডই লোকসান গুনেছে ১১৫ কোটি টাকা। স্কাই বেট, কোরাল, ল্যাডব্রোকসের মতো বাজিকর প্রতিষ্ঠানগুলোরও একই দশা। হলান্ডকে নিয়ে বারবার বাজির দর পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে তারা। বেটফ্রেডের মুখপাত্র পিটার স্পেনসার বলেছেন, ‘জুয়াড়িদের কাছে হলান্ড প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল খেলোয়াড়। শুধু প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের জন্য নয়, বাজিকরদের জন্যও দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

আরও পড়ুন

২০২২–২৩ প্রিমিয়ার লিগে হলান্ড কমপক্ষে ৪০ গোল করবেন—এর বিপরীতে স্কাই বেট মৌসুমের শুরুতে বাজির অনুপাত দিয়েছিল ২৫০: ১। মানে, হলান্ড ৪০ গোল করবেন—এর পক্ষে কেউ ১ টাকা বাজি ধরলে তিনি ২৫০ টাকা পাবেন। বাজির সেই দর নেমে এখন হয়েছে ১ : ১।

হলান্ডের অবিশ্বাস্য ফর্ম দেখে ল্যাডব্রোকস গত বছরের অক্টোবরেই এই দর ৫০: ১ থেকে ৬: ৪-এ নামিয়ে এনেছে। কোরালের রেট ৬৬: ১ থেকে হয়েছে ১০: ১১। এই ওয়েবসাইট তো এখন হলান্ডের ৫০ গোলের সম্ভাবনা নিয়েও দর দিয়েছে ৮ : ১।

ডেভিড স্টিভেনস নামে এক মুখপাত্র এটাকে ‘অবিশ্বাস্য বাজির দর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হলান্ড পুরো দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে কোনো খেলোয়াড়, এমনকি শিয়ারার, কোল বা হ্যারি কেইনরাও তাঁদের সেরা সময়ে গোল করা, এমনকি হ্যাটট্রিক করার বাজিতে এত এগিয়ে ছিল না। যেকোনো ম্যাচ শুরুর সময়ই হলান্ডের গোল করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটা অভূতপূর্ব কিছু নয়, কিন্তু ম্যাচের পর ম্যাচ এমন হওয়াটা তো অবশ্যই। একবার সে টানা তিন ম্যাচ গোল করতে পারেনি। সেই দিনগুলো আমাদের জন্য আনন্দময় ছিল। সে গোল পেলেই আমাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়, কারণ সে অনেকগুলো বাজির সঙ্গে জড়িয়ে আছে।’

বলকে বশ মানিয়ে ফেলেছেন হলান্ড
ছবি : টুইটার
আরও পড়ুন

আজ রাতেই এফএ কাপের চতুর্থ রাউন্ডে আর্সেনালের মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার সিটি। এই ম্যাচে হলান্ড হ্যাটট্রিক করবেন—এর বিপরীতে ৯: ১ দর দিয়েছে কোরাল। তাঁর সতীর্থ হুলিয়ান আলভারেজের ক্ষেত্রে এই দর ৫০: ১। হলান্ডকে নিয়ে জুয়াড়িরা এখন এতটাই আশাবাদী যে, তাঁরা বেশিরভাগ বাজি এই স্ট্রাইকারের পক্ষে ধরেন।

শুরুর দিকে হলান্ডের গোল করার পক্ষে বাজিগুলোর দর অনেক বেশি ছিল। সেই সময়ে যারা হলান্ডের পক্ষে বাজি ধরেছেন, তারা অনেকেই এখন বড় লাভ করতে যাচ্ছেন। স্টিভেন ম্যাকইনারনিই যেমন ২০ পাউন্ড বাজি ধরে এখন ২৫০০ পাউন্ড পাওয়ার পথে আছেন। ৩৭ বছর বয়সী ম্যাকইনারনি বাজিটা ধরেছিলেন গত বছর জুলাইয়ে হলান্ড সিটিতে আসার এক মাস পর।

হলান্ড প্রিমিয়ার লিগে ৪০ গোল করবেন--এর পক্ষে তখন বাজির দর ছিল ২৫০ : ১। লিগে সিটির এখনো ১৮ ম্যাচ বাকি। এই ১৮ ম্যাচে হলান্ড ১৫ গোল করলেই জিতে যাবেন তিনি। বাজি ধরার সময়ও যে ব্যাপারে ম্যাকইনারনির মনে কোনো সংশয় ছিল না, ‘কেউ যখন অনলাইনে এই বাজির কথা বলেছিল, আমার মনে হয়েছিল, এটা তো টাকা ছাপানোর মতো। আমি জানতাম সে অনেক গোল করবে, কারণ সে আর্লিং হলান্ড। আমার হয়তো আরও বেশি বাজি ধরা উচিত ছিল। এটা ছিল অনেক বছর পর আমার ধরা কোনো বাজি। যদিও আমি এটাকে বাজি বলতে রাজি নই।’

হলান্ড এমনই এক গোলমেশিন যে, ইংল্যান্ডের শীর্ষ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড তিনি ভেঙে দেবেন, এর পক্ষে অন্তত দুজন জুয়াড়ি বাজি ধরেছেন। অথচ রেকর্ডটি ৬০ গোলের। ১৯২৭–২৮ মৌসুমে যা করেছিলেন এভারটন কিংবদন্তি ডিক্সি ডিন।

হলান্ড মুড়িমুড়কির মতো গোল করতে শুরু করার পর ওই বাজিটা বাজারে আসায় এর দর ১০০ : ১।  একজন বাজি ধরেছেন ১০ পাউন্ড। যার মানে হলান্ড ৬০ গোল করলে তিনি পাবেন ১০০০ পাউন্ড। অবাস্তব মনে হচ্ছে? হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, আর্লিং হলান্ডে বিশ্বাস নেই!