যে ৮টি কারণে কাতার বিশ্বকাপ অনন্য

বিশ্বকাপ আয়োজনে সেজেছে কাতার রাজধানী দোহাছবি: এএফপি
৯২ বছরের যাত্রায় অনেক নতুনের জন্ম দিয়েছে বিশ্বকাপ, প্রতি আসরেই সংযোজন হয়েছে নতুন কিছুর। ব্যতিক্রম হবে না এবারও। তবে এবার কাতার বিশ্বকাপে যেন ‘নতুনের মেলা’ বসেছে। আরববিশ্বে আয়োজিত প্রথম বিশ্বকাপে দেখা মিলবে এমন অনেক কিছুর, যা আগের কোনো আসরে দেখা যায়নি। চেনা মোড়কের বিশ্বকাপে নতুন সেসব অনন্য দিক নিয়ে জানুন এবার—

শীতকালে প্রথম বিশ্বকাপ

ফিফা বিশ্বকাপের আগের সব আসরই অনুষ্ঠিত হয়েছিল জুন-জুলাইয়ে। নজিরবিহীনভাবে এবার সেটা পাল্টে গেছে। খেলা হতে যাচ্ছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। মূলত কাতারের তপ্ত জলবায়ুর কারণেই এবারের আসর শীত মৌসুমে সরিয়ে আনা হয়েছে।

ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের মৌসুমের মাঝে বিশ্বকাপ হওয়ায় খেলার মধ্যেই আছেন ফুটবলাররা, যা প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের জন্য ভালো হবে বলে মনে করেন সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক ডেভিড বেকহাম, ‘২৫টির মতো ম্যাচ খেলার পর ফুটবলাররা বিশ্বকাপে নামছেন। এ সময় তাঁদের দম থাকার কথা সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এ কারণে কাতারের মাঠে এমন খেলা দেখা যাবে, যা সম্ভবত আগের কোনো আসরে দেখা যায়নি।’

আরও পড়ুন

মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বিশ্বকাপ

কাতারই মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ, যারা ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয়, আরববিশ্বেও কাতারই প্রথম। এশিয়ায় অবশ্য এটি দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। প্রথমবার হয়েছিল ২০০২ সালে, যৌথভাবে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে।

আরববিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেছেন, ‘করোনা মহামারির পর গোটা বিশ্বকে একত্র করার প্রথম বড় টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। আরববিশ্বের ব্যতিক্রমী এক বিশ্বকাপ আয়োজন করতে কাতার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

প্রথম টেকনো বল

কাতার বিশ্বকাপে ব্যবহার করা হবে অ্যাডিডাসের তৈরি বল ‘আল রিহলা’। বাংলায় যার অর্থ ‘ভ্রমণ’। চামড়ায় তৈরি বলটিতে আছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। বলের নিখুঁত গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য এর ভেতরে ৫০০ হার্জ আইএমইউ সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

যে তথ্য ব্যবহার করে নিখুঁত সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর)। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রযুক্তিসম্পন্ন বল ব্যবহার করা হচ্ছে এবারই প্রথম।

আরও পড়ুন

প্রথম সেমি-অটো অফসাইড প্রযুক্তি

২০১৮ বিশ্বকাপে ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। কাতারে অফসাইডের সিদ্ধান্ত হবে আরও নিখুঁত। চালু হচ্ছে সেমিঅটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি। প্রতিটি স্টেডিয়ামের ছাদের নিচের অংশে ১২টি ট্র্যাকিং ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

কোনো খেলোয়াড় অফসাইড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও ম্যাচ অফিশিয়ালদের কাছে অফসাইড সংকেত চলে যাবে। গত বছর ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ এবং ফিফা আরব কাপে সেমি-অটো অফসাইড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলে এই প্রথম।

ফুটবলারদের জন্য ডেটা অ্যাপ

ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের আরও বিশ্লেষণী ও নিখুঁত তথ্য পেতে সংযোজন করা হয়েছে ডেটা অ্যাপ। ৩২টি দলের প্রতিটি ফুটবলার ম্যাচের পর নিজের খেলাসম্পর্কিত তথ্যগুলো দেখতে পারবেন। ডেটার মধ্যে থাকবে ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ কোন মুহূর্তে তিনি কেমন খেলেছেন, বল পায়ে কেমন ছিলেন, কতটুকু কী প্রচেষ্টা ছিল।

এই অ্যাপটি সম্পর্কে ফিফার ফুটবল টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন ডিরেক্টর জোহানেস হোলসমুলার বলেছেন, ‘মাঠের যারা মূল কারিগর, তাদের জন্য সম্ভাব্য সেরা প্রযুক্তির ব্যবস্থা করেছে ফিফা।’

আরও পড়ুন

প্রথম ‘অল গ্রিন’ যানবাহনব্যবস্থা

কার্বন-নিরপেক্ষ বিশ্বকাপ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল কাতারের সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগ্যাসি। এ জন্য যাতায়াতে পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক বাসের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। ইলেকট্রিক বাসগুলো ৪৪টি মেট্রোলিংক এবং ৪৮টি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট রুটে চালানো হবে। আয়োজক কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য, বিশ্বকাপের মাধ্যমে চালু হওয়া পরিবেশবান্ধব যানবাহনব্যবস্থা কাতারের যাতায়াতব্যবস্থায় টেকসই হবে।

দোহায় ‘রয়্যাল গার্ড’ সদস্যদের টহল
ছবি: এএফপি

প্রথম ‘আঁটসাঁট’ বিশ্বকাপ

কাতার বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলো একটি অপরটির খুবই কাছাকাছি। মাত্র ৫৫ কিলোমিটার জায়গার মধ্যে আটটি স্টেডিয়ামের অবস্থান। ভৌগোলিকভাবে এটিই সবচেয়ে ‘আঁটসাঁট’ জায়গার বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ ইতিহাসে আর কখনো এত অল্প জায়গার মধ্যে সব ভেন্যু ছিল না।

স্বল্প জায়গার মধ্যে সব কটি মাঠের অবস্থান থাকায় খেলোয়াড়দের ভ্রমণক্লান্তি কমবে বলে মনে করেন সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক ডেভিড বেকহাম, ‘খেলোয়াড়দের জন্য এটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। আগের বিশ্বকাপেও প্রচুর ভ্রমণ করতে হয়েছিল। ম্যাচের পর আবার প্রস্তুত হয়ে ওঠাটা সহজ নয়। এই বিশ্বকাপ খেলতে আমার ভালোই লাগত।’

আরও পড়ুন

প্রথম নারী রেফারি

এবারই প্রথম ছেলেদের বিশ্বকাপে নারী রেফারি ম্যাচ পরিচালনা করবেন। ৬৪টি ম্যাচের জন্য মোট ৩৬ জন প্রধান রেফারির নাম ঘোষণা করেছে ফিফা। এর মধ্যে নারী আছেন তিনজন। ছেলেদের বিশ্বকাপে রেফারিং করতে যাওয়া এই রেফারিরা হচ্ছেন জাপানের ইয়োশিমি ইয়ামাশিতা, ফ্রান্সের স্টিফানি ফ্রাপার্ট ও রুয়ান্ডার সালিমা মুকানসাঙ্গা।

এ তিনজনের পাশাপাশি অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ব্রাজিলের নিউজা বেক, মেক্সিকোর কারেন ডিয়াজ মেদিনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথরিন নেসবিত।