বিশ্বকাপে ইসরায়েলের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ করবে যুক্তরাষ্ট্র
চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন বলেছিল, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে। এরপরই জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ ও স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খেলাধুলায় নিষেধাজ্ঞার দাবি তোলেন। স্পেনের সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টির মুখপাত্র পাতচি লোপেস বলেন, ইসরায়েল খেললে স্পেন বিশ্বকাপ ফুটবল বয়কট করার কথা বিবেচনা করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে, ২০২৬ বিশ্বকাপে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার কোনো প্রচেষ্টা সফল হতে দেবে না।
আগামী বছর যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বিবিসি স্পোর্টকে বলেছেন, ‘ইসরায়েলের জাতীয় ফুটবল দলকে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করার কোনো চেষ্টা যেন সফল না হয়, সে জন্য আমরা অবশ্যই কাজ করব।’
ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা খুব শিগগির ইসরায়েলকে সাময়িকভাবে স্থগিত করার বিষয়ে বৈঠক করতে পারে বলে খবর পাওয়া গেছে। উয়েফার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা, উয়েফার শীর্ষ নেতৃত্ব এবার কোনো পদক্ষেপ নিতে চায়। এখনো কিছু নিশ্চিত হয়নি, তবে এক মাস আগের তুলনায় অনেক দেশের পক্ষ থেকে নতুন চাপ তৈরি হয়েছে।’
ইসরায়েল আগামী ১১ অক্টোবর অসলোয় নরওয়ের বিপক্ষে এবং ১৪ অক্টোবর উদিনেসেতে ইতালির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে। নরওয়ের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লিসে ক্লাভেনেস সম্প্রতি বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলের অংশগ্রহণ মেনে নিতে হচ্ছে, তবে গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর অমানবিক আক্রমণ উপেক্ষা করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
ইসরায়েল বর্তমানে উয়েফা আয়োজিত বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের গ্রুপে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়, শীর্ষে থাকা নরওয়ের চেয়ে তারা ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দল সরাসরি বিশ্বকাপে খেলবে, আর দ্বিতীয় দল খেলবে প্লে-অফে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যার পাঁচটি সংজ্ঞার মধ্যে চারটি ইসরায়েল করেছে বলে প্রমাণ রয়েছে। এরপর মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল ফিফা ও উয়েফার প্রতি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায়। তাদের ভাষায়, ‘খেলাধুলার জগৎকে অবশ্যই এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করতে হবে যে সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলছে।’
ইসরায়েল অবশ্য নিয়মিতভাবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটির দাবি, গাজায় তাদের অভিযান আত্মরক্ষার অংশ। তারা জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে ‘বিকৃত ও মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে গাজায় অন্তত ৬৫ হাজার ৪১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হতাহত মানুষের সংখ্যা সম্পর্কে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাও এই মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যকেই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হিসেবে উদ্ধৃত করে থাকে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই ইসরায়েলকে খেলাধুলা থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, আগামী সপ্তাহেই উয়েফা এ নিয়ে ভোটাভুটি করতে পারে। যদিও সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো বৈঠকের পরিকল্পনা অস্বীকার করেছে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী সানচেস বলেন, রাশিয়ার মতো ইসরায়েলকেও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত। তাঁর ভাষায়, ‘ইসরায়েল আর কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চ ব্যবহার করে নিজেদের ভাবমূর্তি পরিষ্কার করে তুলতে পারবে না।’ রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকেই আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে ইসরায়েল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কোনো মন্তব্য করেনি।
এরই মধ্যে গ্রিসের ক্লাব পিএওকের সমর্থকেরা ইউরোপা লিগে ইসরায়েলি দল ম্যাকাবি তেল আবিবের বিপক্ষে ম্যাচে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে, ব্যানার ধরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ব্যানারে লেখা ছিল ‘গণহত্যা বন্ধ করো’ এবং ‘ইসরায়েলকে লাল কার্ড দেখাও।’ স্টেডিয়ামে শোনা গেছে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগানও।
এমনকি ম্যাচের আগেই থেসালোনিকিতে বিক্ষোভ হয়েছে, যেখানে ভক্তরা ও আন্দোলনকারীরা ইসরায়েলের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। পরে প্রায় দুই হাজার মানুষের স্বাক্ষর করা এক আবেদন উয়েফাকে দেওয়া হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, ‘গণহত্যার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো ন্যায্য খেলা সম্ভব নয়।’
আগামী ৬ নভেম্বর ইউরোপা লিগে ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলার মাঠে খেলবে ম্যাকাবি তেল আবিব।