কখনো জিততে পারেননি যে ট্রফি, সেটা কি এবার পাবেন সালাহ
আজ থেকে মরক্কোতে শুরু হচ্ছে আফ্রিকান কাপ অব নেশনস, সালাহর মিসর এবার পড়েছে ‘বি’ গ্রুপে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাদের প্রথম ম্যাচ আগামীকাল।
তাঁর আলমারিভরা পদক আর ট্রফি। লিভারপুলের হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে শুরু করে চ্যাম্পিয়নস লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ কিংবা ঘরোয়া কাপ—জেতা বাকি নেই কিছুই। পাশাপাশি গোল করে আর সতীর্থদের দিয়ে করিয়েও গড়েছেন কত রেকর্ডের পর রেকর্ড।
কিন্তু এত সব অর্জনের ভিড়েও একটা অপূর্ণতা রয়ে গেছে মোহাম্মদ সালাহর ক্যারিয়ারে। খুব কাঙ্ক্ষিত একটা ট্রফি কখনো জেতা হয়নি তাঁর, কখনো গলায় ঝোলেনি খুব কাঙ্ক্ষিত একটা পদক। মিসরের হয়ে ‘আফ্রিকান কাপ অব নেশনস’ যে জিততে পারেননি কখনো!
আরও একবার সেই অপূর্ণতা ঘোচানোর সুযোগ পাচ্ছেন ফুটবলের ‘মিসরীয় রাজা’খ্যাত সালাহ। সত্যি বললে এ নিয়ে পঞ্চমবার এবং হয়তো এবারই শেষবার! আজ থেকে মরক্কোতে শুরু হচ্ছে আফ্রিকান কাপ অব নেশনস, সালাহর মিসর এবার পড়েছে ‘বি’ গ্রুপে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাদের প্রথম ম্যাচ আগামীকাল।
মিসর এই টুর্নামেন্টের সফলতম দল, মহাদেশীয় এই শিরোপা জিতেছে রেকর্ড সাতবার। তবে সর্বশেষ যেবার মিসর চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল (২০১০ সালে), সালাহর জাতীয় দলে অভিষেকই হয়েছে তার পরের বছর।
এর পর থেকেই যেন ভাগ্য মুখ ফিরিয়ে রেখেছে মিসরের দিক থেকে, ফলে সালাহও ফিরেছেন শূন্য হাতে। দুবার খুব কাছে গিয়েও। ২০১৭ সালে গ্যাবনে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ফাইনালে সালাহর পাস থেকেই লিড নিয়েছিল মিসর। কিন্তু শেষ মুহূর্তের গোলে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। আর ২০২২ সালে ক্যামেরুনের মাটিতে ১২০ মিনিটের লড়াই শেষে টাইব্রেকারে সেনেগালের কাছে হার মানে সালাহর দল।
২০১৯ সালেও নিজেদের মাটিতে মিসরই ছিল ফেবারিট। কিন্তু কায়রোতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় শেষ ষোলো থেকে। গত বছর আইভরি কোস্টেও গল্পটা বদলায়নি। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে মোজাম্বিকের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে একটা পয়েন্ট এনে দেন সালাহ। কিন্তু পরের ম্যাচেই চোট পেয়ে ছিটকে যান টুর্নামেন্ট থেকে। সেবারও শেষ ষোলোতে টাইব্রেকারে কঙ্গোর কাছে হেরে বিদায় নেয় তাঁর দেশ।
আমি নিশ্চিত, একদিন মিসরের হয়ে আমি আফ্রিকান কাপ অব নেশনস জিতব।
এখন বয়স ৩৩ চলছে লিভারপুল ফরোয়ার্ডের। টানা চারবারের ব্যর্থতায় খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগছে—আদৌ কি অবসরের আগে তাঁর গলায় উঠবে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই পদক? তবে সালাহর মনে নিরাশার ঠাঁই নেই। জাতীয় দলে যোগ দিয়েই খুব আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত, একদিন মিসরের হয়ে আমি আফ্রিকান কাপ অব নেশনস জিতব।’
সেটা কি মরক্কোতে হতে যাওয়া এই আসরেই? পরের আফকন ২০২৭ সালে, তত দিনে আরেকটু বুড়ো হবেন সালাহ, ফর্ম ধরে রাখার একটা ব্যাপারও তো আছে।
এবারও অবশ্য সালাহ মরক্কোর সমুদ্রতীরবর্তী শহর আগাদিরে পা রেখেছেন রাজ্যের দুশ্চিন্তা নিয়ে। লিভারপুলের হয়ে সময়টা ভালো যাচ্ছে না তাঁর। টানা তিন ম্যাচ শুরুর একাদশে সুযোগ না পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমে। বলেছিলেন, তাঁকে ‘বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে’। কোচ আর্নে স্লটের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন আর সৌদি প্রো লিগে চলে যাওয়ার গুঞ্জন মিলিয়ে সালাহ এখন খবরের শিরোনামে।
এসবের মধ্যেও অবশ্য গত সপ্তাহে ব্রাইটনের বিপক্ষে বদলি নেমে সতীর্থকে দিয়ে গোল করিয়েছেন। সেই সঙ্গে গড়েছেন দারুণ এক কীর্তি। ওয়েইন রুনিকে ছাড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগে নির্দিষ্ট কোনো ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোলে (গোল করা ও করানো মিলিয়ে ২৭৭টি) অবদানের রেকর্ড এখন তাঁর।
তারপরই আগাদিরে গেছেন মিসরের জার্সিতে নতুন অভিযানে। সর্বশেষ মিসর যেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সালাহ তখন কিশোরই ছিলেন বলা যায়। এখন তিনি মহাতারকা, সম্ভবত দেশটির ইতিহাসে সর্বকালের সেরাও। আফকন জিততে পারলে হয়তো আর ‘সম্ভবত’ কথাও ব্যবহার করতে হবে না।
ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে সালাহ কি পারবেন সেই অপূর্ণ বৃত্ত পূরণ করতে?
উত্তরটা সময়ের জিম্মায়।