লিভারপুলে কি আর ফিরবেন সালাহ

অ্যানফিল্ডে দর্শক অভিবাদনের জবাবে মোহাম্মদ সালাহ। পরশু ব্রাইটনের বিপক্ষে জয়ের পরএএফপি

সমস্যা তৈরি হয়েছিল। দুই পক্ষের আলোচনার পর মনে হয়েছে, সমাধান হয়ে গেছে। কারণ, পরশু রাতে ব্রাইটনের বিপক্ষে ম্যাচে লিভারপুলের স্কোয়াডে ফেরানো হয় মোহাম্মদ সালাহকে। এর আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের মূল একাদশে ছিলেন না টানা তিন ম্যাচে, চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে তো স্কোয়াডেই ছিলেন না। কিন্তু লিভারপুল কোচ আর্নে স্লট ও সালাহর মধ্যে শান্তি আলাপের পর এবং তারপর ব্রাইটন ম্যাচে তাঁর দলে ফেরায় মনে হতেই পারে এখন ‘অল কোয়ায়েট অন্য দ্য অ্যানফিল্ড ফ্রন্ট’।

সালাহকে একাদশের বাইরে রাখার কারণ ছিল তাঁর বাজে ফর্ম। চলতি মৌসুমে ২০ ম্যাচে করেছেন ৫ গোল, এর মধ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ৪ গোল করেছেন ১৪ ম্যাচে। কিন্তু উপেক্ষিত হওয়ার বিষয়টি মানতে না পেরেই বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন ৩৩ বছর বয়সী মিসরীয় ফরোয়ার্ড। বলেছিলেন, লিভারপুলে তাঁকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে এবং কেউ একজন চান না তিনি লিভারপুলে থাকেন। এরপর তো বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে ইংলিশ ফুটবলে এবং বুদ্ধিমান স্লটও বিতর্কের আগুন আর বেশি বাড়তে দেননি। সালাহর সঙ্গে কথা বলে তাঁকে স্কোয়াডে ফিরিয়ে আনেন। ২৬ মিনিটে জো গোমেজ চোটে পড়ায় বদলি হয়ে মাঠে নেমে সালাহ অবদানও রাখেন একটি গোলে।

অ্যানফিল্ডের চারপাশেই এভাবে দর্শক অভিবাদনের জবাব দেন সালাহ
এএফপি

অ্যানফিল্ডে এই ব্রাইটন ম্যাচেরই শেষ কিছু মুহূর্ত মনে করা যাক।

২-০ গোলে জয়ের পর মাঠে দাঁড়িয়ে অ্যানফিল্ডের চারটি দিকে ঘুরে দর্শক অভিবাদনের জবাব দেন সালাহ। লিভারপুল সমর্থকেরা তখন তাঁদের ‘মিসরীয় রাজা’কে নিয়ে গান ধরেন। লিভারপুলে সুদিনে এই গান সালাহর পরিচিত। মাঠের সর্বশেষ খেলোয়াড় হিসেবে টানেলে ঢোকার আগে সালাহ একবার মুখটা ঘুরিয়ে তাকালেন অ্যানফিল্ডের মাঠে। দৃষ্টি সরাসরি প্রধান স্ট্যান্ডে। সেখানে তাঁর পরিবার বসে। সালাহ একটু হাত নাড়লেন। বিদায় জানালেন? শুধুই এখনকার জন্য নাকি একেবারেই?

আরও পড়ুন

মরক্কোয় ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে আফ্রিকান কাপ অব নেশনস (আফকন)। এই টুর্নামেন্টে খেলতে সালাহ কিছুদিনের মধ্যে যোগ দেবেন মিসর জাতীয় দলে। লিভারপুল কোচ স্লটের আশা, আফকন খেলে সালাহ ফিরবেন অ্যানফিল্ডে। কিন্তু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের দাবি, ব্রাইটন ম্যাচ শেষে লিভারপুলের সমর্থকদের প্রতি সালাহর আবেগতাড়িত অঙ্গভঙ্গি এবং মাঠে ‘ল্যাপ অব অনার’–এর অংশ হওয়াটা তাঁর লিভারপুলকে বিদায় বলার ইঙ্গিতও হতে পারে।

সালাহ নতুন বিতর্ক তৈরি করতে চাননি। ৬ ডিসেম্বর লিডস ম্যাচ শেষে যে মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে স্লটকে অভিযুক্ত করেছিলেন, ব্রাইটন ম্যাচ শেষে সেই একই জায়গা দিয়ে হেঁটে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় সাংবাদিকেরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু সালাহ বলে দেন, ‘টানা দুই সপ্তাহ? না।’

জাতীয় দলের হয়ে সালাহর সামনে এখন আফ্রিকান কাপ অব নেশনস (আফকন)
এএফপি

সালাহ হয়তো পরিস্থিতিটা টের পেয়েছিলেন। তখন তাঁর কথা বলার সময় না। মাঠে কিছুক্ষণ আগেই একটি গোলে অবদান রেখে প্রিমিয়ার লিগে এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলে অবদানের রেকর্ড গড়ে এসেছেন। তখন তাঁর নয়, বরং লিভারপুল কোচ স্লটের তাঁকে নিয়ে কথা বলার মুহূর্ত। মিসর জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন শেষে সালাহকে অ্যানফিল্ডে ফিরে পেতে চান কি না—এই প্রশ্নের উত্তরে সংবাদ সম্মেলনে স্লটও বলেছেন, ‘হ্যাঁ (তাকে ফিরে পেতে চাই), সে লিভারপুলের খেলোয়াড় এবং যখনই (খেলার জন্য) প্রস্তুত থাকে তাকে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতে পছন্দ করি।’

আরও পড়ুন

স্লট সবুজ সংকেত দিলেও সালাহর পক্ষ থেকে কিন্তু এ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আবারও কথা বলা কিংবা ক্ষমা চাওয়া হয়নি। স্লটের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সালাহ লিভারপুলে থাকতে চান কি না? লিভারপুল কোচ বলেছেন, উত্তরটা এতক্ষণে সবার বুঝে ফেলার কথা। তাঁদের নিজেদের মধ্যে যে কথা হয়েছে সেটা গোপনই থাকবে এবং স্লটের প্রথম বদলি ছিলেন সালাহ।

কিন্তু আরেকটি বাস্তবতা হলো, স্লট কিন্তু সালাহকে ব্রাইটন ম্যাচে একাদশে ফেরাননি। টানা পাঁচ ম্যাচে তাঁকে একাদশের বাইরে রেখে শান্তির বার্তা দিয়েছেন কোচ। ওদিকে মিসর আফকনের ফাইনালে উঠলে লিভারপুলের হয়ে অন্তত আটটি ম্যাচে খেলতে পারবেন না সালাহ। ব্রাইটন ম্যাচ শেষে সালাহকে নিয়ে লিভারপুলের খেলোয়াড় থেকে সমর্থকদের ভাবনাটা কী হতে পারে, সেটা আন্দাজ করেছেন ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের সাবেক স্ট্রাইকার ক্রিস সাটন, ‘মোহাম্মদ সালাহর সঙ্গে এরপর কী ঘটবে—এই অনুভূতিতে নিয়ে সম্ভবত সবাই অ্যানফিল্ড ছাড়বেন। সে থাকবে না চলে যাবে? তবে স্লটের জন্য এই সপ্তাহটা ভালো কেটেছে।’

সাটন স্বীকার করেছেন, ব্রাইটন ম্যাচ শেষে সালাহ লিভারপুল সমর্থকদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা দেখে কিছু মুহূর্তে মনে হয়েছে, এটাই হয়তো লিভারপুলে তাঁর শেষ ম্যাচ। তবে সাটনের জোর বিশ্বাস, ‘এটা বিদায় নয়।’

পরিসংখ্যান বলছে, শেষ পাঁচ ম্যাচে সালাহকে একাদশে না রেখেও লিভারপুল হারেনি। অর্থাৎ ক্লাবের ইতিহাসে অন্যতম সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়াই এগোচ্ছে স্লটের দল। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ভাবনায় ছন্দে থাকা সালাহ যেকোনো কোচের কাছেই সম্পদ। স্লটের কথা শুনে কী মনে হয়? সালাহকে মাঠে ফিরিয়ে তিনি অবশ্যই সন্তুষ্ট, কারণ সালাহ ভালো খেলার পাশাপাশি বিতর্কও থেমেছে। তবে লিভারপুল কোচ কিন্তু এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে বলেননি, সংঘাতপূর্ণ সপ্তাহের পর সালাহর বিষয়ে তিনি কীভাবে এই ঘটনার উপসংহার টানলেন। স্লট কি সত্যি সত্যিই আফকন শেষে সালাহকে লিভারপুলে ফিরে পেতে চান? কিংবা সালাহ নিজেই কি ফিরতে চান লিভারপুলে?

দ্য টাইমস জানিয়েছে, সালাহ দেশের হয়ে দায়িত্ব পালনের সময় তাঁর প্রতিনিধি রামি আব্বাস লিভারপুলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসবেন। তখন কী হবে? সালাহর ভাগ্য নির্ধারণ? গত এপ্রিলে ক্লাবটির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তির সময় সালাহ বলেছিলেন, তাঁর পরিবার ইংল্যান্ডেই থিতু হয়েছে। এখন লিভারপুল ও রামি আব্বাসের আলোচনার পর কী হবে, তা সময়ের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো।