জিদান খেলেছেন ফ্রান্সের হয়ে, তাঁর ছেলে কেন আলজেরিয়া দলে

ফ্রান্সের বদলে আলজেরিয়া জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন লুকা জিদানএএফপি

‘আগের হাল যেদিকে যায়, পিছের হালও সেদিকে ধায়।’

সব ক্ষেত্রে কথাটা ঠিক না হলেও বাংলাদেশে প্রবাদটি বেশ প্রচলিত। অর্থ অনেকটাই এমন, পরিবারের অগ্রজরা যে পথে যান, অনুজরাও সে পথই ধরেন। জিনেদিন জিদানের প্রবাদটি শোনার কথা নয়। শুনলে ফরাসি কিংবদন্তিও হয়তো বলতেন, আমার পরিবারের ক্ষেত্রেও কথাটি পুরোপুরি সঠিক নয়।

জিদান ফরাসি ফুটবলে তো বটেই, ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ফুটবলার। একসময়ের মিডফিল্ড মায়েস্ত্রো। তাঁর চার সন্তান—এনজো জিদান, লুকা জিদান, থিও জিদান ও এলিয়াজ জিদান। চার ছেলে ফুটবলার হলেও সবাই কিন্তু তাঁদের বাবার মতো মিডফিল্ডার হননি। এনজো ও থিও মিডফিল্ডার হলেও লুকা গোলকিপার এবং এলিয়াজ সেন্টার ব্যাক।

আরেকটু গভীরে তাকানো যায়। বাবার মতো এনজো, লুকা, থিও ও এলিয়াজ ফ্রান্সের বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন। কিন্তু তাঁদের কাউকেই এখন পর্যন্ত ফ্রান্স জাতীয় দলে দেখা যায়নি। ৩০ বছর বয়সী এনজো আর সেই সুযোগ পাবেন কি না সন্দেহ। ২৩ বছর বয়সী থিও ও ২০ বছর বয়সী এলিয়াজের সেই সুযোগ আছে।

আরও পড়ুন

আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত জিদান ফ্রান্সেরও নাগরিক (জন্মসূত্রে)। তাঁর স্ত্রী ভেরোনিক ফার্নান্দেজ স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত। অর্থাৎ জিদানের ছেলেদের তিনটি দেশের জাতীয় দল বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। এখন তাঁর চার সন্তানের মধ্যে সবার আগে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া ছেলেটি কিন্তু বাবা কিংবা মায়ের দেশ বেছে নেননি।

বাবা জিদানের সঙ্গে ছেলে লুকা
লুকা জিদানের ইনস্টাগ্রাম থেকে

লুকা জিদান জাতীয় দল হিসেবে বেছে নিয়েছেন আলজেরিয়াকে। তাঁর এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে প্রেরণাও কিন্তু মা–বাবা নন। জিদানের বাবা স্মাইল জিদান মানে দাদার কথাতেই আলজেরিয়াকে জাতীয় দল হিসেবে বেছে নেন ২৭ বছর বয়সী গোলকিপার লুকা।

আলজেরিয়ার হয়ে এরই মধ্যে দুটি ম্যাচ খেলেছেন লুকা। আফ্রিকান কাপ অব নেশনসে আলজেরিয়ার সর্বশেষ ম্যাচে ‘ক্লিনশিট’ রাখেন। সুদানের বিপক্ষে আলজেরিয়ার ৩-০ গোলে জয়ের সেই ম্যাচ দিয়ে আফ্রিকার মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অভিষেক হয় লুকার।

আলজেরিয়ার হয়ে এরই মধ্যে দুটি ম্যাচ খেলেছেন লুকা। আফ্রিকান কাপ অব নেশনসে আলজেরিয়ার সর্বশেষ ম্যাচে ‘ক্লিনশিট’ রাখেন।

গ্যালারিতে বসে ম্যাচটি দেখেন ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ ও ইউরো জেতানো জিদান। ছেলের পারফরম্যান্স দেখে তাঁর সন্তুষ্ট হওয়ার কথা। বাবার সঙ্গে তুলনা যেন না ওঠে, সে জন্য মিডফিল্ডার না হয়ে গোলকিপার হয়েছেন লুকা। ফ্রান্সের বয়সভিত্তিক দলে বিভিন্ন পর্যায়ে খেলা লুকার জন্য আলজেরিয়া জাতীয় দল বেছে নেওয়াটা একটু অবাক করার মতোই। বিশেষ করে ২৭ বছর বয়সে।

আরও পড়ুন

আলজেরিয়া জাতীয় দল বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে বিইন স্পোর্টস ফ্রান্সকে লুকা বলেন, ‘আলজেরিয়ার কথা ভাবলে দাদাকে মনে পড়ে। সেই শৈশব থেকে আমাদের পরিবারে আলজেরিয়ান সংস্কৃতি চালু আছে। জাতীয় দলে খেলার আগে আমি তার (দাদা) সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমার এই পদক্ষেপে খুবই খুশি হন। যতবারই আমি আন্তর্জাতিক ডাক পেয়েছি, তিনি ফোন করে বলেছেন, দারুণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমাকে নিয়ে তিনি গর্বিত।’

ছেলের খেলা দেখতে গ্যালারিতে এসেছেন জিদান
এএফপি

লুকা জানিয়েছেন, তাঁর বাবা জিদানও আলজেরিয়া জাতীয় দলে খেলার সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছেন, ‘তিনি আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। বলেছেন, সাবধান, এটা তোমার সিদ্ধান্ত। আমি পরামর্শ দিতে পারি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা তোমার।’ লুকা আরও বলেন, ‘(আলজেরিয়া) কোচ ও ফেডারেশন সভাপতি যোগাযোগ করার পর এটা পরিষ্কার হয়ে যায়, আমি আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। এরপর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা আমাকে নিয়ে সন্তুষ্ট।’

রিয়ালের বয়সভিত্তিক দলে ক্যারিয়ার শুরু করা লুকা এখন স্পেনের দ্বিতীয় বিভাগের দল গ্রানাডায় খেলেন। ক্লাব ফুটবলে জার্সিতে ‘লুকা’ নাম নিয়ে খেললেও জাতীয় দলে ‘জিদান’ নামে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লুকা, ‘(আলজেরিয়া) জাতীয় দলে যোগ দিয়ে দাদাকে সম্মান করার বিষয়টি আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরের (ম্যাচে) জার্সিতে নামটা হবে তার জন্য।’