ফুটবল–বাণিজ্যের আশায় বাংলাদেশে আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেট

আবাহনীর ডিরেক্টর ইন চার্জ কাজী নাবিল ও ম্যানেজার সত্যজিত দাস রুপুর সঙ্গে রিভারপ্লেটের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফুটবল কমিটির সভাপতি সেবাস্তিয়ান পেরেজ এস্কোবারছবি: বাফুফে

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ক্রিস্টাল বলরুমে সারি সারি সাজানো টেবিল। একেকটি টেবিলের ওপর রাখা একেক রকমের পণ্য। কোনো টেবিলে মধু, কোনো টেবিলে রাখা চকলেট। সব কটি পণ্যই আর্জেন্টিনার। লাতিন আমেরিকার দেশ থেকে বাণিজ্য করতে এই ব্যবসায়ীরা এখন ঢাকায়। কক্ষটির একেবারে শেষ সারির টেবিলের ওপর রাখা আর্জেন্টিনার অন্যতম সেরা ক্লাব রিভার প্লেটের জার্সি, সুভেনির, লোগো–সংবলিত ব্যাজ। ফুটবল নিয়েও যে ‘বাণিজ্য’ করতে চায় ক্লাবটি!

আরও পড়ুন

কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মানুষের ফুটবল উন্মাদনা ছুঁয়ে গেছে আর্জেন্টিনাকে। বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনার পতাকায় যেমন ছেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ, তেমনি আর্জেন্টিনার রাস্তায় দেখা গেছে লাল-সবুজ পতাকা। আর্জেন্টিনার মানুষ এখন বাংলাদেশকে আপন ভাবছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও গভীর করতে আজ ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করেছে আর্জেন্টাইন দূতাবাস। বাংলাদেশের মানুষের ফুটবল উন্মাদনা কাজে লাগানোর পরিকল্পনাও করছে সে দেশের ক্লাবগুলো। সেই চিন্তাভাবনার অংশ হিসেবেই আর্জেন্টিনার অন্যতম শীর্ষ ক্লাব রিভার প্লেটের কর্মকর্তারা গতকাল এসেছেন বাংলাদেশে।

বসুন্ধরা ক্লাবের সেক্রেটারি বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিকের সঙ্গে রিভার প্লেটের এক কর্মকর্তা
ছবি: বাফুফে

আজ রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বাংলাদেশের শীর্ষ চার ক্লাব বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী লিমিটেড, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন রিভার প্লেটের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফুটবল বিভাগের সভাপতি সেবাস্তিয়ান পেরেজ এস্কোবার। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবটির সঙ্গে আলোচনা করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসেনি তারা।

রিভার প্লেট ফুটবল একাডেমি থেকে উঠে এসে বিশ্বের নানা প্রান্তে খেলছেন আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলাররা। এবারের বিশ্বকাপজয়ী দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানির বর্তমান ক্লাব রিভার প্লেট। এই ক্লাব থেকে উঠে এসেছেন ক্লদিও ক্যানিজিয়া, হার্নান ক্রেসপো, গঞ্জালো হিগুয়েইন, এনজো ফার্নান্দেজ, পাবলো আইমার, হুলিয়ান আলভারেজদের মতো ফুটবলার।

রিভার প্লেটের নিজস্ব ২৫টি ফুটবল একাডেমি আছে। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার বাইরে আছে ৫টি। এবার বাংলাদেশেও একটি একাডেমি খুলতে আগ্রহী ক্লাবটি। পাশাপাশি আর্জেন্টিনা থেকে কোচ আর টেকনিক্যাল স্টাফও যাতে বাংলাদেশের ক্লাবগুলো নিতে পারে, সে ব্যাপারেও সহযোগিতার পরিকল্পনা করছে রিভার প্লেট।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

সেবাস্তিয়ান পেরেজ এস্কোবার বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে খুশি, ‘প্রথমবারের মতো আমরা লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের বাইরে এসেছি। আমরা জানি, বাংলাদেশ ফুটবলপাগল জাতি। শুধু তা–ই নয়, বাংলাদেশে অনেক আর্জেন্টিনার সমর্থক আছে এবং সে কারণেই মূলত আমরা এখানে এসেছি। ক্লাবগুলোর সঙ্গে  দারুণ আলোচনা হয়েছে। আমরা এখানে কিছু একাডেমি করতে আগ্রহী। আর্জেন্টিনা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এখানে ফুটবলকে যেভাবে দেখা হয়, ফুটবলের প্রতি এখানকার মানুষের যে অনুভূতি, সেটা আমাদের মতোই। তো আমরা ভাবলাম, ওই অনুভূতি ভাগাভাগি করি। এখানে ছোট ছেলেদের ফুটবল শেখানো সম্ভব হলে দারুণ কাজ হবে।’

মোহামেডানের পক্ষ থেকে ইমতিয়াজ সুলতান জনি ও আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্সের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন সেবাস্তিয়ান পেরেজ এস্কোবার
ছবি: বাফুফে

ফুটবল উন্নয়নে আবাহনী থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে রিভার প্লেটের কাছে। সভা শেষে আবাহনীর ডিরেক্টর ইন চার্জ কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে রিভার প্লেট ক্লাব যদি বিভিন্নভাবে অংশীদারত্ব তৈরি করে, তাহলে ফুটবলের জন্য সেটা ইতিবাচক হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভবিষ্যতে আমরা এখান থেকে অর্থবহ কিছু পাব। তাদের বলেছি আবাহনীর কাছে প্রস্তাব দিতে। সেটি পেলে আমরা গুরুত্বসহকারে তা দেখব।’

মোহামেডান থেকে এসেছিলেন ক্লাবটির স্থায়ী সদস্য ইমতিয়াজ সুলতান জনি। রিভার প্লেটের আগ্রহ নিয়ে সন্তুষ্ট তিনি, ‘আসলে ফুটবলকে ওপরে তুলতে এবং গোটা ফুটবল–কাঠামো শক্তিশালী করতে একাডেমি দরকার। এমনিতেই লাতিন ফুটবলের জনপ্রিয়তা অনেক ওপরে। এখন যদি ছয়-সাত বছরের ফুটবলারদের আমরা প্রশিক্ষণ দিতে পারি, তাহলে নিঃসন্দেহে সেটি ভালো হবে। এমনিতেই আমাদের শারীরিক গড়ন অনেকটাই লাতিনদের মতো। যদি তাদের একাডেমিগুলো এখানে হয়, তাহলে অনেক বড় পাওয়া হবে আমাদের।’