বাংলাদেশের মেয়েদের সাফের বৃত্ত পূরণের পালা
শুরুটা হয়েছিল ২০১৭ সালে; অনূর্ধ্ব–১৫ সাফ জিতে। সর্বশেষ ঘরের মাঠে অনূর্ধ্ব–২০ পর্যায়ে আরেকটি শিরোপার দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। সব মিলিয়ে প্রায় আট বছরে সাফের নয়টি ট্রফি। এর মধ্যে শুধু বাদ আছে অনূর্ধ্ব–১৭ সাফ শিরোপাটাই। এবার সেই বৃত্তও পূরণের অপেক্ষা।
বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপাল—এই চার দেশ নিয়ে ২০ থেকে ৩১ আগস্ট ভুটানের থিম্পুতে হবে অনূর্ধ্ব–১৭ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে এক দল অন্য দলের সঙ্গে দুটি করে ম্যাচ খেলবে। এরপর সর্বোচ্চ পয়েন্টধারীর হাতে উঠবে ট্রফি।
এই টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। গতবার তাঁরা নেপালে অনূর্ধ্ব–১৬ পর্যায়ে শিরোপা জেতে। এবার ইয়ারজান–অর্পিতাদের লক্ষ্য অনূর্ধ্ব–১৭ পর্যায়ের ট্রফিটাও উঁচিয়ে ধরা। সেই লক্ষ্য নিয়েই গতকাল ভুটানে গেছে বাংলাদেশ দল। যাওয়ার আগে অধিনায়ক অর্পিতা জানিয়ে দিয়েছেন লক্ষ্যের কথাও, ‘আমাদের প্রস্তুতি খুবই ভালো। নতুন–পুরোনো ফুটবলারদের নিয়ে দলটা ভালোই হয়েছে। প্রতিটা ম্যাচ জিততে চাই।’
২০ আগস্ট প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভুটান। এক দিন বিরতি দিয়ে ২২ আগস্ট ভারতের সঙ্গে খেলা। ২৪ ও ২৭ আগস্ট এর পরের দুই ম্যাচেই প্রতিপক্ষ নেপাল। ২৯ আগস্ট আবার ভুটানের সঙ্গে দেখা হবে, ৩১ আগস্ট শেষ ম্যাচ ভারতের সঙ্গে। সবগুলো ম্যাচই হবে থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে।
সাফের বয়সভিত্তিক নারী ফুটবলে বিভিন্ন সময়ে বয়সের সীমার পরিবর্তন হয়েছে। ২০২৩ সালের আগে অনূর্ধ্ব-১৭ কোনো টুর্নামেন্টই ছিল না। ২০১৭ সাল থেকে চারটি টুর্নামেন্ট হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৫ পর্যায়ে। ২০২৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ প্রথম টুর্নামেন্ট হওয়ার পরের বছর খেলা হয় অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ে।
অনূর্ধ্ব–১৫ থেকে ১৭–এর মতো অনূর্ধ্ব–১৮ থেকে ২০ পর্যায়েও নানা সময়ে বয়সের সীমার পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব–১৮ পর্যায়ে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টটিই যেমন এখন পর্যন্ত ১৮ পর্যায়ে দুবার হয়েছে। অনূর্ধ্ব–১৯ ও অনূর্ধ্ব–২০ পর্যায়েও দুবার।
বয়সের সীমায় এই পরিবর্তন এএফসিকে অনুসরণ করেই করে দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশন (সাফ)। কাল প্রথম আলোকে এমনই জানিয়েছেন সাফের সাধারণ সম্পাদক পুরুষোত্তম ক্যাটেল, ‘এটি এএফসির প্রতিযোগিতার বাছাইপর্বের ধরন অনুযায়ী করা হয়। কোন বছর কোন বয়সের টুর্নামেন্ট করা হবে, সেটা নির্ভর করে এএফসির বাছাইপর্বের ওপর। সাধারণত আমরা চেষ্টা করি এএফসির বাছাইপর্বের আগে এটি করতে, যাতে দলগুলোও সেভাবে প্রস্তুত থাকতে পারে। এবার যেমন এএফসির অনূর্ধ্ব–২০ বাছাইপর্ব ছিল, তাই আমরাও সাফ অনূর্ধ্ব–২০ আয়োজন করেছি।’
২০১৭ থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নারী ফুটবলে নয়টি শিরোপার সাতটিই এসেছে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে। অন্য দুটি সিনিয়র সাফে, ২০২২ সালে প্রথমবার জেতা সাফ শিরোপা গত বছর ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। বেশির ভাগ শিরোপাই এসেছে সাবেক কোচ গোলাম রব্বানীর হাত ধরে। ২০২৩ সালে তিনি কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর দায়িত্ব পান জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ফুটবলার সাইফুল বারী। ২০২৪ সালের মার্চে কোচ হন পিটার বাটলার। কোচ বদল হলেও বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্যের ধারা থামেনি। বাটলারের অধীনে এরই মধ্যে মেয়েরা জিতেছেন দুটি শিরোপা।
যদিও বরাবরের মতো গতকালও বাটলার দাবি করেছেন, মেয়েদের সাফল্য নিয়ে গর্ব হলেও শিরোপার হিসাব তিনি রাখেন না, ‘আমি শিরোপার হিসাব রাখি না। তবে মেয়েদের এমন উন্নতি আমাকে আনন্দ দেয়। তারা এভাবে এগোলে কোনো সাফল্যই অধরা থাকার কথা নয়।’
২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত নারী দলের কোচের দায়িত্বে থাকা গোলাম রব্বানীও আশাবাদী, ‘এখন তো আমাদের মেয়েরা ভালো করছে। আমরা অবশ্যই ফেবারিট। এবার বৃত্ত পূরণের আশা করতেই পারি।’
সিনিয়র ও অনূর্ধ্ব–২০ দলের সাম্প্রতিক সাফল্য থেকে এই দল অনুপ্রেরণা খুঁজে নেবে বলেই আশা রব্বানীর। দুটি দলই প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে কোয়ালিফাই করেছে। সেদিকে ইঙ্গিত করে রব্বানী বলেন, ‘বড়দের দেখে ছোটরাও উজ্জীবিত। যে দলটা ভুটানে গেল, তাদের মধ্যে অর্পিতা, প্রীতি, আলফি…এরা খুবই ভালো মানের খেলোয়াড়। সেরা গোলকিপার ইয়ারজানও আছে।’