ম্যানচেস্টার সিটি কেন ‘মিনি’ সংকটে

প্রিমিয়ার লিগে টানা চার ম্যাচে জয়হীন পেপ গার্দিওলার দলএএফপি

চেলসির সঙ্গে ৪-৪, লিভারপুলের সঙ্গে ১-১, টটেনহামের সঙ্গে ৩-৩। টানা তিন ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগির পর চতুর্থ ম্যাচে অ্যাস্টন ভিলার কাছে ১-০ গোলে হার।

এই হচ্ছে ট্রেবলজয়ী ম্যানচেস্টার সিটির সর্বশেষ চার লিগ ম্যাচের ফল, যা পেপ গার্দিওলার দলকে শীর্ষে থাকা আর্সেনালের চেয়ে ৬ পয়েন্ট দূরেই ঠেলে দেয়নি; লিগ শিরোপা ধরে রাখার সক্ষমতাকে বড়সড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। সাবেক আর্সেনাল ডিফেন্ডার মার্টিন কিওন সিটির এই ‘নড়বড়ে’ পরিস্থিতিকে অভিহিত করেছেন ‘মিনি ক্রাইসিস’ নামে। পেপ গার্দিওলার যা স্বীকার না করে উপায়ও নেই।

কিন্তু এক মাস আগেও লিগ পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকা ক্লাবটি হঠাৎ কী কারণে এমন ছন্নছাড়া? ৩৮ ম্যাচের লিগে উত্থান-পতনের মুখোমুখি প্রায় সব ক্লাবই হয়ে থাকে। সর্বশেষ তিন আসরে লিগ জেতার পথে সিটিও এক-দুই-তিনে একাধিকবার ঘোরাঘুরি করেছে। কিন্তু এবারের ‘উত্থান-পতন’ দিচ্ছে ভিন্ন ইঙ্গিত। সিটি এবারের আগে লিগে টানা চার ম্যাচ জয়হীন ছিল সর্বশেষ ২০১৭ সালের এপ্রিলে। ছয় বছরের পুরোনো তেতো স্বাদের সঙ্গে আছে অস্বস্তিকর আরও এক ‘রেকর্ড’ও। সেই ২০০৯-১০ মৌসুমের পর এবারই প্রথম শুরুর ১৫ ম্যাচে ১৭ গোল হজম করেছে সিটি।

টানা তিন ড্রয়ের পর অ্যাস্টন ভিলার কাছে হেরেই গেছে ম্যানচেস্টার সিটি
এএফপি

শুধু দল হিসেবে সিটিই নয়, কোচিং ক্যারিয়ারের গভীরতম ‘অতলের’ সঙ্গে দেখা হয়েছে গার্দিওলারও। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে এই প্রথম তাঁর অধীন খেলা দল পুরো ম্যাচে (অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে) গোলমুখে শট নিতে পেরেছে মাত্র দুটি। ভিলার বিপক্ষে সিটিকে নড়বড়ে দেখা গেছে রক্ষণেও। গার্দিওলার ক্যারিয়ারে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ২২টি শটের মুখে পড়তে হয়েছে এই ম্যাচে, যা দেখে সিটির সাবেক ডিফেন্ডার গায়েল ক্লিশি সোজাসাপটাই বলেছেন, ‘আমাদের দেখা সিটির জঘন্য ম্যাচগুলোর একটি। তারা সৌভাগ্যবান যে ২, ৩ বা ৪ গোল হজম করেনি।’

আরও পড়ুন

সিটির এমন দুরবস্থার পেছনে দৃশ্যমান কারণ দুজনের অনুপস্থিতি। বুধবার রাতে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ম্যাচটিতে কার্ডজনিত নিষেধাজ্ঞায় খেলেননি রদ্রি। গত বছর চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পাওয়া এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার চলতি মৌসুমে চারটি ম্যাচ মিস করেছেন, চারটিতেই সিটি হেরেছে। গত বছর প্রিমিয়ার লিগের প্লেমেকার অব দ্য সিজন হওয়া কেভিন ডি ব্রুইনা নেই আরও আগে থেকে। চোটে ভোগা এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এখনো মাঠে ফিরতে পারেননি।

হলান্ডের দল এখন কঠিন সময় পার করছে
রয়টার্স

এদিকে গত মৌসুমে ট্রেবল জেতানোর পথে অন্যতম ভূমিকা ছিল যাঁর, সেই ইলকায় গুন্দোয়ান সিটি ছেড়ে বার্সেলোনায় চলে গেছেন। আর রেড বুল লাইপজিগ থেকে আসা ইয়োস্কো গাভার্দিওল এখনো ইতিহাদের ক্লাবটিতে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে পারেননি। মাঝে চোটের কারণে ছিলেন না জন স্টোনসও।

আরও পড়ুন

কিছু খেলোয়াড় আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকবেন, কিছু চোট বা কার্ডের কারণে ম্যাচ মিস করবেন, আর এসবের মধ্য দিয়েই ট্রফির লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে হবে—এমনটা ভালো করেই জানেন গার্দিওলা। জানেন এটাও যে দলকে আবার জয়ের পথে ফেরাতে মূল কাজটা করতে হবে তাঁকেই। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নিজের ভূমিকার কথাই তাই তুলে ধরেছেন সিটি কোচ, ‘ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খোঁজাটা আমারই কর্তব্য। আমরা জানি, সিটি কোন মাপের দল। কোচ হিসেবে আমাকে জয়ের পথ বের করতে হবে। আমরা কিছুটা হিমশিম খাচ্ছি। তবে এর জন্যই আমি এখানে।’

সিটির অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ যথেষ্টই আছে। আছে দৃষ্টান্তও। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১৯ ম্যাচের পর শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল সিটি। এরপরও মৌসুমের বাকি অর্ধেকে জয়রথ ছুটিয়ে ৯৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ জিতেছিল গার্দিওলার দল। তখন পারলে এবার কেন নয়—এমন মন্ত্রে উজ্জীবিত হতে দ্রুতই ‘সংকট’ থেকে বেরোতে হবে সিটিকে।