আরব্য রজনীতে মেসি–রোনালদোদের ৯ গোলের রোমাঞ্চ

এক ফ্রেমে মেসি–রোনালদোছবি: ইনস্টাগ্রাম

আরব্য রজনীর রূপকথা বুঝি একেই বলে! প্রীতি ম্যাচ হলেও লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর এই দ্বৈরথ উত্তাপ ছড়াচ্ছিল আগে থেকেই। সেই উত্তাপ রোমাঞ্চে রূপ নিয়েছে ম্যাচ শুরু হতেই। প্রথম মিনিট থেকে শুরু হয় টান টান উত্তেজনার এক লড়াই। শুরুতেই গোল করলেন মেসি। জবাব দিয়ে ম্যাচে সমতা ফেরান রোনালদো।

পিএসজি ও রিয়াদ অল স্টারের প্রীতি ম্যাচটি ৪৫ মিনিট শেষ হওয়ার আগে হয়ে ওঠে ‘অপ্রীতিকর’। লাল কার্ড দেখেন পিএসজির জোয়ান বের্নাত। এরপর যোগ করা সময়ে নেইমারের পেনাল্টি মিস এবং বিরতিতে যাওয়ার আগে আবার রোনালদোর দ্বিতীয় গোল।

আরও পড়ুন

৯০ মিনিটের এই ম্যাচকে অবশ্য কেউ চাইলে ৬০ মিনিটের খেলাও ধরে নিতে পারে। এরপর যে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকা তারকারা আর মাঠেই ছিলেন না। প্রথমার্ধের ২-২ গোলের পর এ সময়ের মধ্যে হলো আরও তিন গোল। স্কোরশিটে নাম লেখান রামোস-এমবাপ্পেও।

এরপর রোনালদো-মেসিসহ একাধিক তারকা নেমে গেলে কমে যায় ম্যাচের উত্তাপ। শেষ পর্যন্ত ৫-৪ গোলে পিএসজি ম্যাচটা জিতলেও সব ছাপিয়ে গেছে মেসি-রোনালদোর জাদুর ছোঁয়া। যতক্ষণ এ দুজন মাঠে ছিলেন সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন।

রোনালদোর গোল উদ্‌যাপন
ছবি: এএফপি

এদিন মেসি-রোনালদো-নেইমার-এমবাপ্পেদের উপস্থিতিতে এমনিতে তারকার অভাব ছিল না। তবে এই তারার মেলায় আরেকটি চমক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বলিউড অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন।

ম্যাচ শুরুর আগে বলিউডের ‘শাহেনশাহ’খ্যাত এই অভিনেতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় দুই দলের খেলোয়াড়দের। এ সময় অমিতাভের সঙ্গে ছিলেন পিএসজির মালিক নাসের আল-খেলাইফিও।

আরও পড়ুন

রিয়াদের কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই মেসির কাছ থেকে বল কেড়ে নেন রোনালদো। তবে বল হারানোর জবাবটা ম্যাচের তিন মিনিটের মাথায় গোল করেই দেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। নেইমারের সহায়তায় দারুণ এক শটে বল জালে জড়ান ‘এলএম টেন’।

গোল খেয়ে জেগে ওঠার চেষ্টা করে অল স্টার। একটু পর রোনালদোর শট ঠেকিয়ে দেন কেইলর নাভাস। রোনালদোর দল ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও, পিএসজির প্রতিটি আক্রমণে তৈরি হচ্ছিল হুমকিও।

গোল করছেন মেসি
ছবি: এএফপি

তবে পিএসজির সেই হুমকি সামলে অল স্টার একাদশ অবশ্য ধীরে ধীরে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে নিজেদের খেলা। একাধিকবার আক্রমণে গিয়ে পিএসজি রক্ষণে ভীতিও ছড়ায় তারা। ম্যাচের ১৬ মিনিটে অবশ্য নেইমারকে ঠেকিয়ে অল স্টারকে দ্বিতীয় গোল খাওয়া থেকে বাঁচান সৌদি গোলরক্ষক।

এর মাঝে হুটহাট দেখা মিলছিল মেসি-রোনালদোর পায়ের ঝলকেরও। দু-একবার কাছাকাছি গিয়ে গোল না পেলেও গোল ঠেকানোর কাজটা অবশ্য বেশ ভালোভাবেই করছিল অল স্টার। ২৫ মিনিটে মেসির পাস থেকে এমবাপ্পে গোল করলেও অফসাইডের ফাঁদে পড়ে বাতিল হয় সেই গোল।

আরও পড়ুন

৩২ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে রোনালদোকে ফাউল করে বসেন পিএসজি গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। নিজের আদায় করা পেনাল্টিতে লক্ষ্য ভেদ করে ম্যাচে সমতা ফেরান ‘সিআর সেভেন’। এর মাঝে ৩৯ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন পিএসজির জোয়ান বের্নাত। তবে ৪৩ মিনিটে গোলে পিএসজিকে এগিয়ে দেন মার্কিনিউস। এ সময় জমে ওঠে খেলা। নেইমারের পেনাল্টি ঠেকান আল-ওয়াইস। আর বিরতিতে যাওয়ার আগমুহূর্তে নিজের দ্বিতীয় গোল করে সমতা ফেরান রোনালদো।

মেসি–রোনালদো
ছবি: এএফপি

বিরতির পরও জমে ওঠে রোমাঞ্চ। দুই দলই চেষ্টা করছিল এগিয়ে যাওয়ার। এর মাঝে ৫৩ মিনিটে এমবাপ্পের দুর্দান্ত অ্যাসিস্টে গোল করে পিএসজিকে ৩-২ গোলে এগিয়ে দেন সার্জিও রামোস। এই গোলের জবাব দিতেও খুব বেশি সময় নেয়নি অল স্টার। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে দুর্দান্ত এক হেডে লক্ষ্য ভেদ করেন জাং হিউং-সু।

একটু পর ডি-বক্সের ভেতর হাতে বল লাগিয়ে পিএসজিকে পেনাল্টি উপহার দেয় অল স্টার। গোল করে পিএসজিকে ৪-৩ গোলে এগিয়ে দেন এমবাপ্পে। ৬২ মিনিটে অবশ্য রোনালদো, মেসি এবং এমবাপ্পে তিনজনই নেমে গেলে শান্ত হয়ে আসে খেলার উত্তাপ। ৭৯ মিনিটে একিতিকের গোলে ব্যবধান ৫-৩ করে পিএসজি। শেষ দিকে অল স্টার আরও এক গোল শোধ করলেও এড়াতে পারেনি ৫-৪ গোলের হার।