ইয়ামালকে ছেড়ে দেওয়া হলো জাতীয় দল থেকে, আবার মুখোমুখি বার্সেলোনা–স্পেন
লামিনে ইয়ামালকে নিয়ে বার্সেলোনা ও স্পেনের বিরোধ ক্রমেই বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বিরতির আগে এই উইঙ্গারকে নিয়ে আবার ঘোলাটে হলো পরিস্থিতি। ইয়ামালের চোট থাকায় জর্জিয়া ও তুরস্কের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দুটি ম্যাচে তাঁকে স্পেন দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
১৮ বছর বয়সী ইয়ামালকে গত সপ্তাহে স্পেন দলে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু গত সোমবার বার্সেলোনায় একটি ছোটখাট চিকিৎসা-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় ইয়ামালকে, যা রয়্যাল স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) জানা ছিল না। আরএফইএফ জানিয়েছে, বার্সেলোনা এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না জানানোয় তারা ‘বিস্মিত’ হয়েছে। ইয়ামালের বিশ্রাম প্রয়োজন জেনে তারা তাঁকে ৭ থেকে ১০ দিনের ছুটি দিয়েছে এবং বার্সেলোনায় ফিরে যাওয়ার অনুমতিও দিয়েছে।
আরএফইএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় দলের অনুশীলন শুরুর দিন গত সোমবার দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে আমরা জানতে পারি, ইয়ামাল সেদিন সকালে তার কুঁচকির ব্যথার চিকিৎসার জন্য ইনভেসিভ রেডিওফ্রিকোয়েন্সি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছেন। এ খবর জানার পর আরএফইএফের চিকিৎসক দল বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই চিকিৎসা-প্রক্রিয়া জাতীয় দলের মেডিকেল টিমকে আগেভাগে না জানিয়ে করা হয়েছে। সোমবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে প্রাপ্ত একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানা যায়, যেটি ইয়ামালকে ৭ থেকে ১০ দিনের বিশ্রাম দেওয়ার পথে নিয়ে গেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ও খেলোয়াড়ের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ইয়ামালকে বর্তমান দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরএফইএফ।’
স্পেনের কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে বার্সেলোনার আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি সংবাদমাধ্যম আরএনইকে বলেছেন, ‘কিছু বিষয় বা প্রক্রিয়া আছে, যা আরএফইএফের বাইরে সম্পন্ন হয়। এমনটাই হয়, এটাই বাস্তবতা। আমাদের সেটি মেনে নিতে হবে। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আমি আগে কখনো হইনি। আমার মনে হয় না, বিষয়টা খুব স্বাভাবিক। অবশ্যই আমি অবাক হয়েছি, যেমনটা অন্য সবাইও হয়েছে।’
স্প্যানিশ এই কোচ যোগ করেন, ‘আপনি কিছু শুনবেন না, বিস্তারিত কিছু জানতেও পারবেন না। আমি আবারও জোর দিয়ে বলছি, যখন বিষয়টি একজন খেলোয়াড়ের স্বাস্থ্য ও ফিটনেসের সঙ্গে সম্পর্কিত, তখন সত্যিই অবাক না হয়ে উপায় থাকে না।’
এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বার্সা ও স্পেনের মধ্যে চলমান টানাপোড়েন যেন আরও এক ধাপ বাড়ল। দুই পক্ষের মধ্যে এ বিরোধ শুরু হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে। সেবার স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বুলগেরিয়া ও তুরস্কের বিপক্ষে খেলতে ইয়ামালকে ব্যথানাশক চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। ফলে তাঁর কুঁচকির পুরোনো সমস্যাটা আরও বেড়ে যায়। এরপর বার্সেলোনার হয়ে ভ্যালেন্সিয়া, হেতাফে ও রিয়াল ওভিয়েদোর বিপক্ষে লিগ ম্যাচ এবং নিউক্যাসলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচে খেলতে পারেননি ইয়ামাল।
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গত মাসে ফ্লিক বলেন, ‘সে জাতীয় দলের সঙ্গে ব্যথা নিয়ে খেলতে গিয়েছিল এবং কোনো অনুশীলনও করেনি। তারা তাকে খেলানোর জন্য ব্যথানাশক চিকিৎসা দিয়েছিল। দুই ম্যাচে সে ৭৩ ও ৭৯ মিনিট খেলেছে। এমনকি দুই ম্যাচের মধ্যে অনুশীলনও করতে পারেনি। এটাকে খেলোয়াড়ের যত্ন নেওয়া বলে না। বিষয়টি নিয়ে খুবই হতাশ।’
ফ্লিকের কথার জবাবে দে লা ফুয়েন্তে বলেন, ‘(ফ্লিকের) ওই মন্তব্যে আমি সত্যিই বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ, তিনিও একসময় জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। আমি ভেবেছিলাম, তাঁর সেই সহমর্মিতা থাকবে। আমি আবারও বলছি, তিনি (জাতীয় দলের) কোচ ছিলেন এবং জানেন খেলোয়াড়েরা কেমন আচরণ করে। তাই আমাকে সবচেয়ে অবাক করেছে এই বিষয়টা—একজন সাবেক কোচের কাছ থেকে এমন কথা শোনা।’
বার্সেলোনার হয়ে এ মৌসুমে ১১ ম্যাচে ছয় গোল করার পাশাপাশি আরও ছয়টি গোল করিয়েছেন ইয়ামাল। ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চার ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে ‘ই’ গ্রুপের শীর্ষে স্পেন। এ পথে তারা ১৫ গোল করার বিপরীতে একটি গোলও হজম করেনি। আগামী শনিবার জর্জিয়ার মুখোমুখি হওয়ার পর মঙ্গলবার তুরস্কের বিপক্ষে খেলবে স্পেন।