ম্যারাডোনার মেয়ের দাবি চিকিৎসকেরা ‘বিভ্রান্ত’ করেছিলেন তাঁদের
‘অবহেলাজনিত কারণে ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যু’ নিয়ে বিচারকাজ চলছে আর্জেন্টিনার আদালতে। মঙ্গলবার সেই আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রয়াত আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির মেয়ে দালমা ম্যারাডোনা। সাক্ষ্য দিতে গিয়ে ম্যারাডোনার বড় মেয়ে বলেছেন তাঁর বাবার চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসকেরা তাঁকে ও তাঁর বোনদের বিভ্রান্ত করেছিলেন। এ ছাড়া যে বাড়িতে ম্যারাডোনা মারা গেছেন, সেই বাড়ির পরিবেশও বসবাসের অযোগ্য ছিল দাবি দালমার।
ম্যারাডোনার পাঁচ সন্তানের সবচেয়ে বড় জন দালমা তাঁর মা ক্লদিয়া ভিয়াফানেকে নিয়ে মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দিতে যান। দালমা বিচারকের সামনে চিকিৎসকেরা কীভাবে তাঁদের বিভ্রান্ত করেছেন, সেই বর্ণনা দেন, ‘তাঁরা আমাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা (হোম হসপিটালাইজেশন) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু সে রকম কিছুই করা হয়নি। তাঁরা আমাদের এমন কিছু বিশ্বাস করিয়েছিলেন, যেসব তাঁরা কখনোই করেননি। আর এমনটা করতে গিয়ে তাঁরা নির্দয়ভাবে আমাদের বিভ্রান্ত করে গেছেন, প্রতারণা করেছেন।’
আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬০ বছর বয়সে মারা যান। মস্তিষ্কে জমাট বাধা রক্ত অস্ত্রোপচারের পর বুয়েনস এইরেসের উপকণ্ঠে একটি বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল ম্যারাডোনাকে।
মঙ্গলবার সাক্ষ্যে দালমা বলেন, ওই বাড়িটা চিকিৎসা দেওয়ার মতো উপযোগী ছিল না, ‘জঘন্য পরিবেশ ছিল বাড়িটার। প্রস্রাবের গন্ধে টেকা যাচ্ছিল না। বিছানাও খুব নোংরা ছিল। সেখানে একটা বহনযোগ্য টয়লেট ছিল। আলো প্রবেশে বাধা দিতে জানালাগুলো ঢাকা ছিল। সেখানে কিছুই ছিল না। ভয়ংকর অবস্থা ছিল। রান্নাঘরটাও জঘন্য ছিল।’
ম্যারাডোনার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে তাঁর চিকিৎসাসেবায় জড়িত সাতজনের বিচার চলছে। এঁদের মধ্যে একজন নিউরোসার্জন ও একজন মনোবিদও আছেন। যদি তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ মেলে, সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
আদালতে নিউরোসার্জন লিওপোলদো লুকে, মনোবিদ আগুস্তিনা কোসাচভ ও কার্লোস দিয়াজকে চিহ্নিত করে দালমা বলেন, ‘বাবা হাসপাতালে থাকতে না চাওয়াতেই এই চিকিৎসকেরা বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলেন। স্বেচ্ছায় হাসপাতালে থাকা, জোর করে হাসপাতালে রাখা ও বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া—এই তিনটা বিকল্প ছিল। তবে তাঁরা আমাদের বুঝিয়েছিলেন বাড়িতে রেখেই শুধু চিকিৎসা করানো সম্ভব। তাঁরা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ২৪ ঘণ্টাই সেবা দেওয়ার, বলেছিলেন ব্লাডপ্রেসার ও চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সব সময়ই নার্স থাকবে।’
দালমা দাবি করেন যে বাড়িতে রেখে ম্যারাডোনাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়, সে বাড়িতে তাঁকে ঢোকার অনুমতি দেননি চিকিৎসকেরা। ম্যারাডোনার মৃত্যুর পরেই শুধু সে বাড়িতে যেতে পারেন দালমা। ম্যারাডোনা মারা যাওয়ার পর সেই বাড়িতে গিয়ে হওয়া অভিজ্ঞতার কথা বলার পর আবেগাপ্লুত দালমা চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি প্রতিটি মুহূর্তে বাবার অভাব অনুভব করি। যেটি সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা দেয়, এটা জানা যে তাঁরা (চিকিৎসকেরা) নিজেদের কাজটা করলে হয়তো এমন কিছু হতো না।’
সব শেষে দালমা বলেন, এমন কিছু হতে পারে জানলে তিনি অন্য ব্যবস্থাই নিতেন, ‘বাবা যে অবহেলার স্বীকার হয়েছে, সেটি মনে পড়লেই যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাই। যদি জানতাম এমন কিছু হবে, আমি হয়তো সবকিছু ভিন্নভাবে সামলাতাম। কিন্তু আমি এমন কিছু কল্পনাও করতে পারিনি।’