ক্লাব বিশ্বকাপে গরম আর ঝড়–বৃষ্টিই শিরোনাম, ২০২৬ বিশ্বকাপে কী হবে

কুলিং ব্রেকে স্প্রিংকলার্সের পানিতে শীতল হচ্ছেন বেনফিকার নিকোলাস ওতামেন্দিরয়টার্স

দরদর করে ঘামছিলেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ড কোচ নিকো কোভাচ। ডাগআউটে দাঁড়িয়েই এই অবস্থা হয়েছিল তাঁর। হওয়ারই কথা, বাংলাদেশ সময় কাল রাতে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার দল মামেলোদি সানডাউনসের মুখোমুখি হলো বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, সিনসিনাটির তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন গরমে খেলতে অনভ্যস্ত ডর্টমুন্ড কোচ ম্যাচ শেষে বললেন, ‘এমনভাবে ঘামছি, মনে হচ্ছে মাত্রই সনা (বাষ্পস্নান) থেকে বেরোলাম।’

নিজে ডাগআউটে দাঁড়িয়ে ঘেমেনেয়ে একাকার হলেও মাঠের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের বাঁচাতে অভিনব পদ্ধতিই অবলম্বন করেছিলেন কোভাচ। বদলি খেলোয়াড়দের ডাগআউটে না রেখে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে বসেই তাঁরা টেলিভিশনে প্রথমার্ধের খেলা দেখেন। ড্রেসিংরুমে বসে খেলোয়াড়েরা খেলা দেখছেন, এমন ছবি নিজেদের এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে ডর্টমুন্ড লিখেছে, ‘টিকিউএল স্টেডিয়ামের গনগনে তাপ থেকে বাঁচাতে আমাদের বদলিরা লকার রুমে বসে প্রথমার্ধের খেলা দেখেছে। এমন কিছু আগে দেখা যায়নি, কিন্তু কী করা! এই গরমে আসলে আর কীই–বা করার ছিল।’

এই গরমে খেলে সানডাউনসকে কোভাচের দল ৪-৩ গোলে হারালেও ম্যাচের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকানরা ভালোই চেপে ধরেছিল। স্থানীয় সময় দুপুরে শুরু হওয়া ম্যাচটি নিয়ে আগে থেকেই অবশ্য উদ্বিগ্ন ছিলেন কোভাচ। ম্যাচের আগেই তিনি উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন, ‘দুই দলের জন্যই কঠিন হবে। তবে প্রতিপক্ষ দলটি এই আবহাওয়ায় খেলে অভ্যস্ত।’

শুধু কি গরম, ঝড়-বৃষ্টিও কম ঝামেলায় ফেলছে না ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপকে। এ পর্যন্ত চারটি ম্যাচ শুরু করতে দেরি হয়েছে কিংবা মাঝপথে থেমেছিল বজ্রঝড়ে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসও ভালো কিছু বলছে না। বরং শঙ্কিত হওয়ার মতোই খবর পাওয়া গেছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে। যেখানে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে তীব্র তাপপ্রবাহে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।

গরমের কারণে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বদলি খেলোয়াড়েরা কাল মামেলোদি সানডাউনস–ডর্টমুন্ড ম্যাচের প্রথমার্ধটা দেখেছে লকার রুমে বসে
এক্স/বরুসিয়া ডর্টমুন্ড

এক বছর পর এই যুক্তরাষ্ট্রই অন্যতম আয়োজক আসল বিশ্বকাপ মানে বিশ্বকাপ ফুটবলের। সেই বিশ্বকাপের পোশাকি মহড়া হিসেবেই ক্লাব বিশ্বকাপটাকে দেখছিলেন সবাই। সেই মহড়া দেখে আসল মঞ্চে কী হতে পারে, তা নিয়ে শঙ্কা হতেই পারে। ম্যাচ মাঝপথে থেমে যেতে পারে। শুক্রবারই যেমন অরল্যান্ডোতে বেনফিকা-অকল্যান্ড সিটি ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হলো নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর। কারণ, ভারী বৃষ্টি ও ঝড়। এর আগে একই শহরে সানডাউনস ও উলসানের ম্যাচটি শুরু হয়েছিল এক ঘণ্টা দেরিতে। এ ছাড়া নিউ জার্সিতে পালমেইরাস-আল আহলি (৪০ মিনিট) ও সিনসিনাটিতে সালজবুর্গ-পাচুকা (৯০ মিনিট) ম্যাচও মাঝপথে বন্ধ ছিল লম্বা সময়।

আরও পড়ুন

ফসিল ফ্রি ফুটবল নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন বলছে আগামী সপ্তাহের ১০টি ম্যাচ তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে পড়তে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, ওই সব ম্যাচে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। পরিবেশবিজ্ঞানী ডক্টর ক্রিস টাইলার বলেছেন, ২০২৬ বিশ্বকাপে বিপক্ষ দলের চেয়ে আবহাওয়া হয়ে উঠতে পারে বড় প্রতিপক্ষ, ‘এবার যাঁরা খেলছেন, তাঁদের অনেকেই ২০২৬ বিশ্বকাপেও থাকবেন। তাঁদের একটা পরীক্ষা হয়ে যাচ্ছে। টিভি দর্শকের কথা মাথায় রেখে বিকেল পাঁচটার আগে যেসব ম্যাচ শুরু হবে, সেসব ম্যাচে এমন আবহই থাকবে। প্রচণ্ড গরমই হবে আগামী বিশ্বকাপে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রতিপক্ষ।’

বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বদলি খেলোয়াড়েরা দ্বিতীয়ার্ধে ডাগআউট বসলেও রোদ থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ছাতার নিতে
রয়টার্স

বৈশ্বিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফাও এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে। ফিফা বলছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে তারা, ‘ভেন্যুর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে ফিফা। সবাই যেন নিরাপদ ও উপভোগ্য অভিজ্ঞতা নিতে পারে, সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বৈরী আবহাওয়া খেলোয়াড়দের ওপর কতটা প্রভাব ফেলছে, সেটি জানিয়েছে ফসিল ফ্রি ফুটবল, ‘আমরা সবচেয়ে চিন্তিত শার্লটের ছাদখোলা স্টেডিয়াম নিয়ে। যেখানে রিয়াল মাদ্রিদ-পাচুকা ম্যাচে ৩৮ ডিগ্রি ও বেনফিকা-বায়ার্ন ম্যাচে ৪১ ডিগ্রিতে উঠতে পারে তাপমাত্রা। খেলোয়াড় ও দর্শক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে ফিফাকে তো বেশি কিছু করতে দেখছি না।’

আরও পড়ুন

এমন গরমে খেলোয়াড়দের কী অবস্থা হয়, সেটি ভালো বোঝা যায় মার্কোস ইয়োরেন্তের কথায়। লস অ্যাঞ্জেলেসে পিএসজির কাছে আতলেতিকো ৪-০ গোলে হারের পর আতলেতিকো ডিফেন্ডার বলেন, ‘এত গরম ছিল। আমার পায়ের আঙুলগুলোতে তীব্র যন্ত্রণা ছিল, নখগুলোয় ব্যথা হচ্ছিল। অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি।’ সেই ম্যাচে তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঝড়–বৃষ্টির কারণে লম্বা সময় বন্ধ ছিল বেনফিকা–অকল্যান্ড সিটি ম্যাচ
রয়টার্স

ম্যানচেস্টার সিটি তাদের পরের ম্যাচটি খেলবে আটলান্টার মার্সিডিজ-বেঞ্জ স্টেডিয়ামে আল আইনের বিপক্ষে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়ামেই হবে ম্যাচটি। তবে সিটি কোচ পেপ গার্দিওলাও উদ্বিগ্ন আবহাওয়া নিয়ে, ‘সব দল, সব খেলোয়াড় ও ডাগআউটে থাকা সব কোচই গরম ও আর্দ্রতা নিয়ে অভিযোগ করছে। পরের বিশ্বকাপটা কিন্তু এখানেই হবে। খেলোয়াড়েরা জেনে যাবে কতটা কঠিন হবে সেটি। কন্ডিশনটা মোটেই সহজ নয়।’

আরও পড়ুন