তিন দলের একই লক্ষ্য—বড় টুর্নামেন্টের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা। বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে এশিয়ান কাপ, মালয়েশিয়ার সামনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান গেমস আর আজারবাইজানের সামনে ২০২৭ নারী বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। এ টুর্নামেন্টগুলোর প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই ইনফিনিক্সের পৃষ্ঠপোষকতায় আগামীকাল থেকে ঢাকায় ত্রিদেশীয় সিরিজে মুখোমুখি হচ্ছে তিন দেশের নারী ফুটবল দল। তবে তিন দলের প্রস্তুতির আড়ালেও থাকছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস।
জাতীয় স্টেডিয়ামে কাল সন্ধ্যা সাতটায় প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ খেলবে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে। দুই দিন পর একই মাঠে আজারবাইজানের প্রতিপক্ষ মালয়েশিয়া। আগামী ২ ডিসেম্বর তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও আজারবাইজান।
ত্রিদেশীয় সিরিজ সামনে রেখে আজ জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনকক্ষে আশার কথাই শুনিয়েছেন বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার, ‘আমরা অবশ্যই আজারবাইজান ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভালো খেলার চেষ্টা করব। তারা হয়তো আমাদের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে, তবু আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।’
আগামী ১ থেকে ২১ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় হবে নারী এশিয়ান কাপ। ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের তিন প্রতিপক্ষ চীন, উত্তর কোরিয়া ও উজবেকিস্তান। টুর্নামেন্টের জন্য গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছেন আফঈদা-ঋতুপর্ণারা। গত অক্টোবরে থাইল্যান্ডে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলেছে বাংলাদেশ। যদিও দুটিতেই হেরেছেন মেয়েরা।
সেই হারের শিক্ষা এ সিরিজে কাজে লাগাতে চান আফঈদা, ‘আমরা থাইল্যান্ডে দুটি ম্যাচ খেলেছি, সেখানে কী কী ভুল হয়েছে, সেটা দেখেছি। এই ম্যাচগুলোতে একই ভুল কেউ করতে চাইবে না।’
বাংলাদেশ অধিনায়কের মতো মালয়েশিয়ার অধিনায়ক নুর লিয়ানাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার আশা করছেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটা ভালো প্রতিযোগিতা। আমি জানি বাংলাদেশ ও আজারবাইজান কঠিন দল। আমরা ম্যাচগুলোতে লড়াই করার চেষ্টা করব।’
সর্বশেষ ২০২২ সালে বাংলাদেশ সফরে মালয়েশিয়া নারী দলের অভিজ্ঞতা মোটেও স্বস্তির ছিল না। দুই ম্যাচে একটিতে ড্র করলেও আরেকটিতে ৬-০ গোলে হেরেছে দলটি। সেই তিক্ততার সঙ্গী হয়েছিলেন লিয়ানাও। এবার আর তেমন কিছুর পুনরাবৃত্তি চান না তিনি, ‘আমরা দুই বছর আগে এখানে এসেছিলাম। এবার একটা ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে যেতে চাই।’
মালয়েশিয়ার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলে এক জয়, এক হার, এক ড্র পিটার বাটলারের বাংলাদেশ নারী দলের। তবে বছর দুয়েক আগের মালয়েশিয়া নারী দলের সঙ্গে এই মালয়েশিয়ার তফাত অনেক। দলটা (৯২তম) র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের (১০৪তম) চেয়ে ১২ ধাপ এগিয়ে। অবশ্য এশিয়ান কাপে এখন আর নিয়মিত নয় তারা। ৯ বার এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া দলটি ২০০১ সালের পর আর এশিয়ান কাপে খেলতে পারেনি।
বাংলাদেশ কোচ বাটলার তাই মালয়েশিয়াকে নিয়ে খুব বেশি ভাবছেন না। দলটিকে বাংলাদেশের সমকক্ষ হিসেবেই দেখছেন তিনি, ‘আমরা শারীরিকভাবে শক্তিশালী নই, মালয়েশিয়াও অনেকটা আমাদের মতোই। তবে আজারবাইজান শক্তিশালী, শারীরিকভাবেও এগিয়ে।’
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার তুলনায় র্যাঙ্কিংয়ে অনেকটাই এগিয়ে আজারবাইজান। বাংলাদেশ তাদের থেকে ৩০ ধাপ পেছনে। বাটলার অবশ্য এই পার্থক্যকেও গুরুত্ব দিতে চাইছেন না, ‘আমি র্যাঙ্কিং নিয়ে আগ্রহী নই। আমার মনে হয়, এটা অনেক সময় বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে পারে না। এটি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।’
নারী ফুটবলে আজারবাইজানের যাত্রা বেশি দিনের নয়। তবে ২০০৬ সালে রোমানিয়ার বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা দলটি গত এক দশকে দারুণ উন্নতি করেছে। জাতীয় দলের বেশির ভাগ ফুটবলারই তুর্কি, রাশিয়া, কাজাখস্তানের ক্লাবে খেলেন। বছরজুড়ে লিগগুলো চলমান থাকায় আন্তর্জাতিক বিরতি ছাড়া একসঙ্গে ক্যাম্প করার সুযোগ হয় না তাঁদের।
আগামী মার্চে ব্রাজিল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রস্তুতি এই সিরিজ দিয়েই শুরু করতে চাইছেন দলটির কোচ সিয়াসাত আসগারভ, ‘এখানে আসার আগে অন্য কোথাও ক্যাম্প করার সময় ছিল না আমাদের। আমরা সরাসরি বাংলাদেশে এসেছি, এই সিরিজেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতি নেব।’
মালয়েশিয়া চাইছে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরতে, আজারবাইজানের লক্ষ্য বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতি শুরু করা। এদিকে এশিয়ান কাপের প্রস্তুতি ছাড়াও বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল চাইবে প্রায় এক যুগ পর জাতীয় স্টেডিয়ামে তাদের ফেরাটার উপলক্ষকে রাঙাতে।