মেসিকে ফেরাতে এবার যা বিক্রির চিন্তা করছে বার্সেলোনা

আগামী মৌসুমে বার্সেলোনায় ফিরতে পারেন লিওনেল মেসিছবি : টুইটার

লিওনেল মেসি আর বার্সেলোনা সমার্থকই হয়ে উঠেছিল। মেসি চিরকাল বার্সায় থেকে যাবেন এমন ধারণাই ছিল অনেকের। কিন্তু লা লিগার বেতনসীমা–সংক্রান্ত নীতির গ্যাঁড়াকলে নিজেদের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়ের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে পারেনি বার্সা। বাধ্য হয়ে কাতালান ক্লাবটির সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করেন মেসি। দুই বছরের চুক্তিতে নাম লেখান পিএসজিতে। চোখের জলে ক্যাম্প ন্যু থেকে বিদায় নেওয়ার সময় মেসি বলেছিলেন, ‘আমি আবার ফিরে আসব।

প্রিয় প্রাঙ্গণে প্রত্যাবর্তনের সময়টা কি এবার এসেই গেছে? আর মাত্র আড়াই মাস। এর মধ্যে পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না হলে ফ্রি এজেন্ট (মুক্ত খেলোয়াড়) হয়ে যাবেন মেসি। তখন বার্সায় ফিরতে আর কোনো বাধা থাকবে না তাঁর। গত মাসে ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘ফুট মেরকাতো’ জানিয়েছে, বার্সায় ফেরার কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। এবার স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক ‘মার্কা’ আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলছে, মেসিকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে বার্সা।গতকাল নিজেদের অনলাইন সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘মার্কা’, যার শিরোনাম ‘দৃষ্টিসীমায় লিভার: মেসি বার্সার কাছাকাছি’।

বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক, ‘ইকোনমিক লিভার’ ব্যাপারটা আসলে কী?

২০২১ সালের মার্চে হোয়ান লাপোর্তা দ্বিতীয় দফা বার্সেলোনার সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বহুবার এই শব্দযুগল তাঁর মুখে শোনা গেছে। এটা এমন এক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ক্লাবের বিভিন্ন স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির আংশিক কিংবা পুরোটা বিক্রি করে দ্রুততম সময়ে নগদ অর্থ জোগাড় করা হয়। এই অর্থ দিয়ে ধার শোধ করা, খেলোয়াড় কেনা ও অন্যান্য দায় মেটানো হয়। বার্সা যাবতীয় অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে গত মৌসুম থেকে ‘ইকোনমিক লেভার’ পদ্ধতি বেছে নিচ্ছে।

আগামী মৌসুমের খরচ জোগাতে আরেকটি ইকোনমিক লিভার সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বার্সা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা
ছবি : টুইটার

বার্সার ‘ইকোনমিক লিভার’ মোট সাতটি। এর মধ্যে চারটির নাম বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এখন পর্যন্ত এই কয়টি ইকোনমিক লেভার সক্রিয় রেখেছে তারা। সেগুলো হলো—১. বিক্রয়ের অনুমোদন ও আমদানিকৃত পণ্যের ৪৯.৯% বিক্রি, ২. লা লিগার টিভি স্বত্বের ২৫% বিক্রি, ৩. বিক্রয়ের অনুমোদন, আমদানিকৃত পণ্য ও স্টুডিও মিলিয়ে ২৪.৫% বিক্রি এবং ৪. শুধু স্টুডিওর আরও ২৪.৫% বিক্রি।

আরও পড়ুন

বার্সার ক্রীড়া পরিকল্পনা বোর্ড জানিয়েছে, আগামী মৌসুম চলতে ২০ কোটি ইউরো (২ হাজার ৩২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকার কিছু বেশি) লাগবে। এই অর্থ বিভিন্ন খাত থেকে আয়ের মাধ্যমে ও ব্যয় কমিয়ে জোগাড় করবে তারা। ক্লাবটি তাদের অর্থনৈতিক কার্যকারিতা পরিকল্পনা শিগগিরই লা লিগা কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করবে। অঙ্গীকারপত্র প্রদান সাপেক্ষে লিগ কমিটি সবুজ সংকেত দিলে দলবদলের বাজারে যোগ দিতে আর কোনো বাধা থাকবে না। চাইলে মেসিকেও ফেরাতে পারবে বার্সা।

গত বছরের আগস্টে লা লিগার নতুন মৌসুম শুরুর আগমুহূর্তে অরফিউস মিডিয়ার কাছে নিজেদের স্টুডিওর ২৪.৫% বিক্রি করে বার্সা। সেখান থেকে তারা পেয়েছে ১০ কোটি ইউরো (১ হাজার ১৬৩ কোটি ৬২ লাখ টাকার কাছাকাছি)। এই অর্থের একাংশ দিয়ে বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলারের নাম নিবন্ধন করিয়েছে তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমের জন্য কনটেন্ট তৈরি, বিশ্বজুড়ে সমর্থকদের জন্য উপহার ও স্মারক তৈরি এবং বিক্রির কাজ করে থাকে বার্সা স্টুডিও।

মেসিকে ফেরাতে এখন তারা স্টুডিওর আরও কিছু মালিকানা বিক্রি করতে চাচ্ছে। স্টুডিওর মালিকানার এই অংশই পঞ্চম ইকোনমিক লিভার কি না, সেটা অবশ্য নিশ্চিত করেনি ‘মার্কা’। তবে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, স্টুডিওর মালিকানা ৪৯%-এর বেশি বিক্রি করতে পারবে না বার্সা। দুটি অডিওভিজ্যুয়াল বিশেষজ্ঞ কোম্পানি এরই মধ্যে কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা ২০ কোটি ইউরোর বেশি দিতে চেয়েছে। এই অর্থ পেলে অনায়াসে আগামী মৌসুম পার করে দিতে পারবে কাতালান ক্লাবটি। লা লিগার বেতনসীমা–সংক্রান্ত নীতি মেনে মেসিকে পারিশ্রমিকও দিতে পারবে তারা।

মেসির ফেরার আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বার্সা সমর্থকেরা
ছবি : টুইটার

তবে দুটি আলাদা কোম্পানির কাছে স্টুডিওর মালিকানার বাকি অংশ বিক্রি করলে কিছুটা ঝামেলায় পড়বে বার্সা। চুক্তি অনুযায়ী, স্টুডিওর প্রথম ২৪.৫% কেনা অরফিউস মিডিয়াকে বাদ দিয়ে অন্য কারও কাছে বাকি মালিকানা বিক্রি করলে সেটার লভ্যাংশ তাদের দিতে হবে অথবা বাকি মালিকানাও অরফিউস মিডিয়ার কাছেই বিক্রি করতে হবে। অরফিউস মিডিয়ার কর্ণধার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাউমে রুরেস ২৪.৫%-এর মালিক হয়ে যাওয়ায় বার্সা কর্তৃপক্ষকে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেই সবকিছু করতে হবে। আবার রুরেস চাইলে অধিক মুনাফার আশায় নিজের বর্তমান মালিকানাও চড়া দামে বিক্রি করতে পারবেন।

দুইয়ে-দুইয়ে চার মিললেই আগামী মৌসুম চালানোর খরচ এখনই জোগাড় করতে পারবে বার্সা। বেতনসীমা–সংক্রান্ত ঝামেলা দূর হলে মেসিও বার্সায় ফিরতে আরও আগ্রহী হবেন। কিন্তু জটিলতা রয়ে গেলে হয়তো মার্কিন মুলুকে যাবেন আর্জেন্টাইন তারকা। আবার প্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদোর পদাঙ্ক অনুসরণ করে যেতে পারেন সৌদি আরবেও। সৌদির ক্লাব আল হিলাল যে মেসিকে রোনালদোর চেয়েও দ্বিগুণ বেতন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে!

আরও পড়ুন