আবাহনীর আছে দিয়াবাতে ও দুই ‘ম’
২০০৭ সালে পেশাদার যুগে প্রবেশের পর নিয়মিতই হয়ে আসছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ। ২৬ সেপ্টেম্বর শুরু আরেকটি লিগ। ১০ দলের লিগ সামনে রেখে কোন দল কাদের ভরসায় মাঠে নামছে, কারা আলো ছড়াবেন, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই-বা থাকতে পারেন কারা—তা নিয়েই এ ধারাবাহিক। আজ দ্বিতীয় পর্ব—
বিকেলের আলোয় ক্লাব–সংলগ্ন মাঠে ঢুকতেই চোখে পড়ল পরিচিত দৃশ্য। মারুফুল হক নিজের জগতে ডুবে আছেন। যেন ফুটবলারদের চোখে প্রত্যাশার আলো মাখিয়ে দিচ্ছেন! ফুটবলাররা কীভাবে গা গরম করবেন, কোন ছকে অনুশীলন চলবে—সবকিছুই হাতে ধরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তখনো অবশ্য কোচ জানতেন না, প্রিমিয়ার লিগ শুরুর প্রথম দিনেই অপেক্ষা করছে বড় এক পরীক্ষা, রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ম্যাচ। গত লিগে যারা হয়েছিল চতুর্থ, আর আবাহনী হয়েছিল রানার্সআপ।
আবাহনীর কাছে পরীক্ষা অবশ্য নতুন কিছু নয়। গত বছরের ৫ আগস্ট দেশে সরকার বদলের পর ক্লাবটিতে হামলা-লুটপাট হয়। সব ট্রফি নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেই ধাক্কায় গত মৌসুমে লিগের প্রথম পর্বে কোনো বিদেশি ছাড়াই খেলেছিল আবাহনী। দ্বিতীয় পর্বে দুজন আনা হলেও আবাহনী ছিল কম শক্তির। বলা যায়, সাদামাটা একটা দলকে রানার্সআপ করেন মারুফুল।
আমি শুধু খেলার জন্য কোনো দলে যাই না। আবাহনীতে এসেছি কিছু জেতার জন্য। প্রতিটি মৌসুমেই আমার লক্ষ্য থাকে দলকে চ্যাম্পিয়ন করা আর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া।সুলেমান দিয়াবাতে, আবাহনী স্ট্রাইকার
এবার শক্তির বাড়িয়েছে আবাহনী। নতুন মৌসুমে সবচেয়ে বড় নাম মালির স্ট্রাইকার সুলেমান দিয়াবাতে। ২০১৮ থেকে গত মৌসুম পর্যন্ত মোহামেডানের হয়ে খেলেছেন শতাধিক ম্যাচ, করেছেন ৯০টির বেশি গোল। গত লিগে মোহামেডানের জার্সিতে ১৯ গোল করে হয়েছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। পেয়েছেন লিগের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। বয়স ৩৪ হয়ে গেলেও এই স্ট্রাইকারকে ঘিরেই নতুন মৌসুমে স্বপ্ন আঁকছে আবাহনী।
দিয়াবাতেও তৈরি নতুন দলকে সাফল্যে ফেরাতে। ক্লাব মাঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমি শুধু খেলার জন্য কোনো দলে যাই না। আবাহনীতে এসেছি কিছু জেতার জন্য। প্রতিটি মৌসুমেই আমার লক্ষ্য থাকে দলকে চ্যাম্পিয়ন করা আর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া।’
আবাহনীর শক্তি এবার শুধু দিয়াবাতে নন, সঙ্গে আছেন দুই তরুণ ‘ম’—জাতীয় দলের জার্সিতে আলো ছড়ানো শেখ মোরছালিন আর গত লিগের সেরা গোলকিপারের পুরস্কার পাওয়া মিতুল মারমা। বসুন্ধরা কিংসে নিয়মিত খেলার সুযোগ না পাওয়া মোরছালিন আবাহনীতে এসেছেন বেশি ম্যাচ খেলার আশায়। চান নিজেকে মেলে ধরতে। দিয়াবাতের সঙ্গে জুটি গড়ে উঠবে, এমন আশাও তাঁর, ‘দিয়াবাতে দারুণ স্ট্রাইকার। তাঁর সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া হলে আশা করি গোল করাতে পারব, করতেও পারব।’
গত মৌসুমে ফেডারেশন কাপ ও লিগ মিলিয়ে ২২ ম্যাচের ১৬টিতেই ক্লিনশিট মিতুল মারমার। খেয়েছেন মাত্র ৮ গোল। এবারের লক্ষ্যটাও অভিন্ন তাঁর, ‘ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ব্যক্তিগত লক্ষ্য থাকবে গোল না খাওয়া।’ এ মৌসুমে আবাহনী ছেড়েছেন মিডফিল্ডার মোহাম্মদ হৃদয় ও স্ট্রাইকার সুমন রেজা। তবে বাকি মূল খেলোয়াড়দের ধরে রেখেছে দলটি। গোলপোস্টে মিতুল ছাড়াও আছেন প্রিতম ও পাপ্পু হোসেন। মাঝমাঠে মোরছালিনের সঙ্গে জাতীয় দলের কাজেম শাহ। স্ট্রাইকার হিসেবে যোগ হয়েছেন জাতীয় দলের আল আমিন। অনুশীলনে আত্মবিশ্বাসী দেখায় কোচ মারুফুল হককে, ‘আমাদের গোলকিপার ও রক্ষণভাগ অপরিবর্তিতই আছে। এটা বিরাট সুবিধা। আক্রমণে দিয়াবাতে, মাঝমাঠে মোরছালিন, রক্ষণে ইয়াছিন আর গোলে মিতুল—এই চারজন হতে পারে দলের চার বিভাগের সেরা।’
বিদেশি সংগ্রহে অবশ্য ঘাটতি আছে ধানমন্ডির দলটির। তিন বিদেশি নিবন্ধন করানো হলেও আপাতত শুধু দিয়াবাতেকেই আনা হয়েছে। বাকি দুজনকে এখনই আনার সম্ভাবনা কম। আবাহনীর পুরো পরিকল্পনাই এখন ঘুরছে এক বিদেশিকে কেন্দ্র করে। ২০১৭-১৮ মৌসুমের পর আর প্রিমিয়ার লিগ জেতেনি আবাহনী। প্রায় আট বছরের খরা দূর করা কঠিন হলেও দিয়াবাতে-মোরছালিন-মিতুলদের নিয়ে অসম্ভবও নয়!