৩১ বছর পর ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে ‘টুপির কারিগরেরা’

লুটন এফসি উচ্ছ্বাস

বয়সের ভারে রীতিমতো নুয়ে পড়েছে ক্লাবটি! ১৩৮ বছরের পুরোনো ক্লাব বলে কথা! কিন্তু ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটি ফুটবল-অভিযাত্রায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েও একরকম ‘অচেনা’ আর আড়ালেই থেকে গেছে লুটন টাউন এফসি। কিন্তু ধৈর্য, হাল ছেড়ে না দেওয়া এবং ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা চিরায়ত রূপকথার গল্প ঠিকই আলোর ফোয়ারার নিচে নিয়ে এসেছে লুটনকে। ওয়েম্বলিতে গতকাল রাতে প্রিমিয়ার লিগে ওঠার প্লে-অফে কভেন্ট্রিকে টাইব্রেকারে ৬-৫ গোলে হারিয়ে ৩১ বছর পর আবার ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে ফিরেছে তারা। প্রিমিয়ার লিগে এবারই প্রথম।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ শুরু হওয়ার ঠিক আগের মৌসুমেও ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ স্তরে খেলেছিল লুটন। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ শুরুর বছর থেকে আর শীর্ষ স্তরের ফুটবলে ফিরতে পারেনি তারা। ৯ বছর আগেও লুটন ছিল নন-লিগ দল। এমনকি ১২ বছর ধরে চ্যাম্পিয়নশিপেও (ইংলিশ ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর) অনুপস্থিত ছিল ক্লাবটি। সেখান থেকে ফিরে আসার অনবদ্য এক গল্প লিখেছে তারা। শেষ পর্যন্ত ৩১ বছর পর নিজেদের প্রথম প্রিমিয়ার লিগ মৌসুমের দেখা পেল লুটন।

দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময়ের এই অপেক্ষা যখন শেষ হচ্ছিল, তখনো লুটনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল মর্মান্তিক এক ঘটনা। এদিন ম্যাচের ১১ মিনিটেই মাঠে অসুস্থ হয়ে লুটিয়ে পড়েন দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় টম লকিয়ার। তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। প্রিমিয়ার লিগ নিশ্চিত করার পর সতীর্থরাও উৎসবের মুহূর্তে স্মরণ করেছেন লকিয়ারকে। তবে সতীর্থকে হাসপাতালে পাঠিয়ে নিজেদের অর্জন নিয়ে উদ্‌যাপন করাটাও ভুল মনে হচ্ছিল লুটন অধিনায়ক জর্দান ক্লার্কের।

পাশাপাশি মাঠে খেলতে খেলতে লুটিয়ে পড়া লকিয়ারের জন্য তাঁদের এই লড়াইয়ে জিততেই হতো বলে মন্তব্য করেছেন ক্লার্ক, ‘কোচ আমাদের বলেছিলেন, এই ম্যাচটা তার (লকিয়ার) জন্য আমাদের জিততেই হবে। এভাবে উদ্‌যাপন করাকেও ভুল বলে মনে হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

দীর্ঘ অপেক্ষার পর লুটনের এ অর্জনে যে মানুষটির দারুণ ভূমিকা, তিনি কোচ রব এডওয়ার্ডস। মাত্র ৬ মাস আগে দায়িত্ব নিয়ে যিনি ক্লাবকে প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন। তবে অর্জনের আনন্দ ভুলে তিনিও স্মরণ করলেন নিজের প্রিয় শিষ্য লকিয়ারকে, ‘আমার অসাধারণ অনুভূতি হচ্ছে। কিন্তু আমি এই মুহূর্তে ভাবছি লকিয়ারের কথা। সে এ মৌসুমে আমাদের সেরা খেলোয়াড়।’

লুটনের খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপন
ছবি: রয়টার্স

এ দিন ট্রফি নেওয়ার মুহূর্তেও লকিয়ারের জার্সি উঁচিয়ে ধরে উদ্‌যাপন করেছেন লুটন খেলোয়াড়েরা।’ তবে যে লকিয়ারকে ঘিরে নিজেদের এত আয়োজন এবং প্রার্থনা তিনি কেমন আছেন? পরে সেই খবরও জানিয়েছে লুটন কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, লকিয়ার এখন সুস্থ আছেন এবং কথা বলছেন। দলের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড় ফিরে এলে ‘হ্যাটার্স’ খ্যাত ক্লাবটির উদ্‌যাপন নিশ্চয়ই আবার নতুন করে হবে।

আরও পড়ুন

লুটনের মজার ডাকনাম ‘হ্যাটার্স’-এর গল্পটিও অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। ‘হ্যাটার্স’-এর অর্থ মূলত টুপির কারিগর। সতেরো শতক থেকে লুটন শহরটি টুপি বানানোর জন্য বিখ্যাত। এই শহরের অনেক বাসিন্দা টুপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, যাদের আয়ের প্রধান উৎসও টুপি বানানো। আর সেখান থেকেই লুটন এফসির পরিচিতি ‘হ্যাটার্স’ নামে। তবে নতুন ইতিহাস গড়ার পর এখন কেউ চাইলে তাদের টুপিখোলা অভিবাদন জানাতেই পারে।

আরও পড়ুন

প্রিমিয়ার লিগে এসে লুটন এখন নতুন দিনের স্বপ্নও বুনতে শুরু করেছে। লম্বা সময় ধরে ফুটবলের শীর্ষ স্তরে না থাকায় ক্লাবটি অবকাঠামো এবং আর্থিক দিক থেকে বেশ পিছিয়ে পড়েছিল। কিন্তু এবার প্রিমিয়ার লিগে জায়গা পেয়ে নতুন করে যেন প্রাণ ফিরে পেল ক্লাবটি। ধারণা করা হচ্ছে, প্রিমিয়ার লিগে আসার পর এখন অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে আরও ভালো অবস্থানে যেতে পারবে তারা।

বাধভাঙা শিরোপা উচ্ছ্বাস
ছবি: রয়টার্স

পাশাপাশি অবশ্য তাদের কিছু খরচও করতে হবে। তাদের স্টেডিয়াম কেনিলওর্থ রোডকে প্রিমিয়ার লিগের উপযোগী করতে খরচ হবে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড। এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা মাত্র ১০ হাজার ৩৫৬, যা কিনা প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট মাঠ। এর আগে এত ছোট মাঠে কখনো প্রিমিয়ার লিগের কোনো ম্যাচ আয়োজন করা হয়নি।