‘জিদানের ঢুস’ ফিরিয়ে ক্ষমা চাইলেন কোচ

লেচ্চে কোচ রবার্তো ডি’ভার্সা ও ভেরোনা স্ট্রাইকার টমাস হেনরিএক্স

ফুটবল মাঠের সবচেয়ে আলোচিত ঢুস–কাণ্ডটি ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালের। ইতালির মার্কো মাতেরাজ্জিকে যে ঢুসটি মেরেছিলেন ফ্রান্স কিংবদন্তি জিনেদিন জিদান। এবার ইতালির ফুটবল লিগে দেখা গেল আরেকটি ঢুস–কাণ্ড।

লেচ্চের মাঠ কমুনেল ভিয়া দেল মারেতে ততক্ষণে শেষ বাঁশি বেজেছে। স্বাগতিকদের বিপক্ষে ১–০ গোলের জয় পেয়েছে হেল্লাস ভেরোনা। ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে লেচ্চে ডিফেন্ডার মারিন পনগ্রাচিচের সঙ্গে তর্কাতর্কি হচ্ছিল ভেরোনা স্ট্রাইকার টমাস হেনরির। এ সময় লেচ্চে কোচ রবার্তো ডি’ভার্সা গিয়ে তাঁদের বাদানুবাদে ঢুকে যান। কিন্তু তিনি পরিস্থিতি শান্ত করবেন কি, হেনরিকে মাথা দিয়ে ঢুস মেরে বসেন! দুজনেই লাল কার্ড দেখেছেন।

আরও পড়ুন

গতকাল রাতে অনুষ্ঠিত ম্যাচ শেষে এমন কাণ্ড ঘটানোর পর নিজ আচরণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন লেচ্চে কোচ রবার্তো ডি’ভার্সা, ‘আগামী শনিবার আমাদের একটি বড় ম্যাচ (সালেনিতানার বিপক্ষে) আছে। আমি চাইনি আমার কোনো খেলোয়াড় নিষিদ্ধ হোক।’ অর্থাৎ ডি’ভার্সা চাননি ভেরোনো স্ট্রাইকার হেনরির সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে নিষিদ্ধ হোক তাঁর খেলোয়াড় পনগ্রাচিচ। সে জন্য দুজনের কথা-কাটাকাটিতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন।

তাহলে তিনি নিজে হেনরিকে মাথা দিয়ে ঢুস মারলেন কেন? লেচ্চে কোচ এর সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তবে ১–০ গোলে হারের পর সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজ আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ডি’ভার্সা, ‘আমি তাদের বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছিলাম এবং তারপর হেনরির সঙ্গে ঘটনাটা ঘটল। ভেরোনার ম্যানেজমেন্টের কাছে আমি এর মধ্যেই ক্ষমা চেয়েছি। একজন কোচ এবং তিন সন্তানের বাবা হিসেবে যা ঘটেছে সে জন্য ক্ষমা চাচ্ছি আমি।’

২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে মার্কো মাতেরাজ্জিকে ঢুস মেরেছিলেন জিদান
এএফপি

তবে পরে ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ডি’ভার্সা দাবি করেন, হেনরিকে তিনি মাথা দিয়ে গুঁতো মারেননি। তিনি লিখেছেন, ‘হেনরির সঙ্গে মাথায় মাথায় মুখোমুখি হয়েছিলাম। কিন্তু ঢুস মারিনি। সে-ও আমাকে ঢুস দেয়নি। এখানে শারীরিক সংস্পর্শের ব্যাপার ছিল না।’ অবশ্য ইনস্টাগ্রাম পোস্টেও ম্যাচের মেজাজ ধরে রাখতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন ডি’ভার্সা।

আরও পড়ুন

হেনরি অবশ্য ঢুসের শিকার হওয়ার অভিযোগই করেছেন। ম্যাচে উত্তেজিত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটলেও গুঁতো মারা অনুচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মাঠে এমন অনেক কিছুই ছিল। তাই বলে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে মাথার গুঁতো হজম করার ব্যাপারটি বৈধতা পায় না।’ ইতালিয়ান সিরি ‘আ’ পয়েন্ট তালিকায় দুই দলই অবনমন অঞ্চলের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। ২৮ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে ১৫তম লেচ্চে। সমান ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে ১৩তম ভেরোনা।

ফুটবল মাঠে মাথা দিয়ে ঢুস মারার ঘটনা নতুন কিছু নয়। ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে জিদানের সেই ঢুস মেরে লাল কার্ড দেখার ঘটনা তো আছেই, এর আগে–পরেও একাধিকবার ঘটেছে এমন ঘটনা। ২০২২ সালের আগস্টে সিঙ্গাপুরে প্রাক্‌–মৌসুম ম্যাচে ক্রিস্টাল প্যালেস সেন্টারব্যাক জোয়াখিম অ্যান্ডারসনকে মাথা দিয়ে ঢুস মেরে লাল কার্ড দেখেছিলেন লিভারপুলর দারউইন নুনেজ।

১৯৯৮ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডস গোলকিপার এউইন ফন ডার সার আর্জেন্টিনা তারকা আরিয়েল ওর্তেগার বিরুদ্ধে ডাইভ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন মাঠে। মেজাজ হারিয়ে ফন ডার সারকে ঢুস মেরে লাল কার্ড দেখেছিলেন ওর্তেগা। ১৯৮৪ কোপা দেল রে ফাইনালে বার্সেলোনার হয়ে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মিগুয়েল সোলাকে মাথা দিয়ে ঢুস মেরে মাঠেই ভয়ংকর মারামারির জন্ম দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। পরে তাঁকে নাপোলির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন