বিশ্বকাপে ভিনিসিয়ুসদের সঙ্গে জাতীয় সংগীত গাইতে চান আনচেলত্তি
২০২৬ বিশ্বকাপ সামনে রেখে ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি শুধু মাঠের প্রস্তুতিই নিচ্ছেন না, মাঠের বাইরে ভিন্ন এক লক্ষ্যেও প্রস্তুত হচ্ছেন তিনি।
২০২৬ বিশ্বকাপ সামনে রেখে এখন প্রস্তুতিতে পূর্ণ মনোযোগী ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি। তবে আনচেত্তি যে শুধু ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তা নয়, বিশ্বকাপে ভিনিসিয়ুসদের সঙ্গে ব্রাজিলের জাতীয় সংগীত গাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন এই ইতালিয়ান কোচ।
গতকাল ফিফাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জাতীয় সংগীত গাওয়ার ইচ্ছা, বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ও লক্ষ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন আনচেলত্তি। ব্রাজিলের জাতীয় সংগীতে মুগ্ধ আনচেলত্তি ফিফাকে বলেন, ‘জাতীয় সংগীত শোনা এবং সেলেসাওয়ের (ব্রাজিল দলের) হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা যেকোনো খেলোয়াড় বা কোচের জন্যই খুব বিশেষ এক অনুভূতি। আমি এটা শিখতে চাই। খেলোয়াড়দের সঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য আমার হাতে এক বছর সময় আছে। আমি সত্যিই এটা করতে চাই।’
২০২২ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর টালমাটাল অবস্থার ভেতর দিয়ে গেছে ব্রাজিলের ফুটবল। বিরোধিতা হয়েছে বিদেশি কোচ নিয়োগ দেওয়া নিয়েও।
এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়ে ব্রাজিলে গিয়ে রিও ডি জেনিরোর জীবন কেমন উপভোগ করছেন, জানতে চাইলে আনচেলত্তি বলেন, ‘অনেক কিছুই ভালো লেগেছে। কারণ, এটা ক্লাবের কাজের চেয়ে ভিন্ন। রিওর মতো সুন্দর শহর আছে, আর এখানকার মানুষের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসাও অসাধারণ। সত্যি বলতে, এখানে শেষ কয়েকটা দিন দারুণ কেটেছে, আমি খুব ভালো বোধ করছি। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) আর খেলোয়াড়দের জন্যই সবকিছু এত সুন্দরভাবে চলছে। আমরা ইতিমধ্যে বিশ্বকাপের জন্য খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছি, তাই প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় পাচ্ছি। এ সময়টা আমি সত্যিই উপভোগ করছি।’
আনচেলত্তি ক্লাব ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের কোচ একজন। এরপরও কোচিং ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে ৬৬ বছর বয়সী আনচেলত্তি বলেছেন, ‘আমি ভেবেছি, ব্রাজিল ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল এবং যাদের বিশ্বকাপ শিরোপা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি, তাদের কোচিং করানোটা দারুণ এক সুযোগ হবে। ব্রাজিল দলকে কোচিং করানোর চিন্তাটাই ছিল রোমাঞ্চকর। সুযোগটা যখন এল, আমি গ্রহণ করলাম। অবশ্যই আমি রিয়াল মাদ্রিদকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ তারা আমাকে এই নতুন অভিজ্ঞতা উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছে।’
নতুন অভিজ্ঞতা? এর ব্যাখ্যায় আনচেলত্তি যোগ করেন, ‘আমি আগেও জানতাম যে এখানে ফুটবলের প্রতি প্রবল আবেগ আছে, কিন্তু সরাসরি এসে যা দেখলাম, সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক স্তরের ব্যাপার, বিশেষ করে জাতীয় দল ঘিরে। মানুষের মধ্যে ব্রাজিলের হলুদ জার্সির প্রতি গভীর ভালোবাসা কাজ করে। যখন ব্রাজিল খেলে, পুরো দেশ যেন থেমে যায়, সবাই ম্যাচেই মনোযোগী থাকে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়েরা এমনিতেই মেধাবী। প্রতিভা যেন তাদের ডিএনএতেই আছে।’
ব্রাজিল ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও পথটা একেবারে সহজ ছিল না। নিজেদের ইতিহাসে এবারের বাছাইপর্বেই সবচেয়ে বাজে ফুটবল খেলতে দেখা গেছে ব্রাজিলকে। এরপরও বাছাইপর্বের বাধা উতরে যেতে পেরে আনন্দিত আনচেলত্তি, ‘(বাছাইপর্বের বাধা পেরোতে পেরে) খুব ভালো লেগেছে, যদিও আগের কোচদেরও এতে অবদান আছে। এটা মোটেও সহজ ছিল না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা পেরেছি। প্যারাগুয়েকে হারানোই ছিল যোগ্যতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট এবং আমরা তা করতে পেরেছি। আমরা সবাই ভীষণ খুশি।’
২০০২ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। এর পর থেকেই ষষ্ঠ বিশ্বকাপের খোঁজে আছে দলটি। আনচেলত্তির অধীনে এবার যেকোনো মূল্যে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ জিততে চায় তারা।
বিশ্বকাপ সামনে রেখে সমর্থকদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন এবং কী দিতে চান, জানতে চাইলে আনচেলত্তি বলেন, ‘আগের মতোই একটাই আশা, ওরা আমাদের দারুণ সমর্থন দেবে। আর আমার মনে হয়, সেলেসাওদের হয়ে আমাদের দায়িত্ব হলো ব্রাজিলিয়ানদের সেই আনন্দটা ফিরিয়ে দেওয়া। যে আনন্দের জন্য তারা দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে অপেক্ষা করছে। বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ।’
দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাই শেষে ২০২৬ বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে প্রীতি ম্যাচ খেলা শুরু করেছে ব্রাজিল। ১০ অক্টোবর সিউলে প্রীতি ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৫–০ গোলে হারায় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এরপর ১৪ অক্টোবর টোকিওতে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে জাপানের কাছে ৩–২ গোলে হারে আনচেলত্তির দল।
আগামী মাসে ইউরোপে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। লন্ডনের এমিরেটস স্টেডিয়ামে আগামী ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় সেনেগালের মুখোমুখি হবে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এরপর ১৯ নভেম্বরে ফ্রান্সের পিয়েরে–মাউরি স্টেডিয়ামে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে নভেম্বরে শেষ প্রীতি ম্যাচটি খেলবে আনচেলত্তির দল।