তিন দিনে দুই হ্যাটট্রিক ‘বুড়ো’ রোনালদোর

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গতকাল রাতে হ্যাটট্রিকের পররয়টার্স

‘উই আর নট স্লোয়িং ডাউন’—কথাটা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। সৌদি প্রো লিগে গতকাল রাতে আবহার বিপক্ষে ৮-০ গোলের বড় ব্যবধানে জিতেছে আল নাসর। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথাটি লেখেন আল নাসর তারকা। সেটি সম্ভবত সতীর্থদের প্রেরণা জোগাতে। হাতে ৮ ম্যাচ রেখে শীর্ষস্থানীয় আল হিলালের সঙ্গে ১২ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে দ্বিতীয় আল নাসর। হাল ছাড়া যাবে না—এ কথাটিই মনে করিয়ে দিয়েছেন রোনালদো ‘দ্য আলটিমেট ওয়াইন।’

আরও পড়ুন

পর্তুগিজ কিংবদন্তির সঙ্গে ওয়াইনের তুলনাটা পুরোনো। তবে এই পুরোনো কথাটাই গতকাল রাত থেকে নতুন করে ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কারণ অবশ্যই পারফরম্যান্স। আবহার বিপক্ষে ৪২ মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিক, আরও দুটি গোলও বানিয়েছেন—প্রথমার্ধে আল নাসরের ৫-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ায় রোনালদোর ভূমিকাটা একদম সরাসরি। আর গোলগুলো দেখলেও পুরোনো ওয়াইনের সঙ্গে তাঁর তুলনাটা যথার্থই লাগে!

সেই তরুণ রোনালদোকে যেমন দেখা যেত তেমন। ১১ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে যে গোলটি করলেন সেটি যে কোনো ফুটবলারের জন্য রেফারেন্স পয়েন্ট হতে পারে। মানবদেয়াল তৈরি করে পেছনে একজন ডিফেন্ডারকে শুইয়েও রেখেছিল আবহা। তবু রোনালদোকে ঠেকানো যায়নি। মানবদেয়ালের নিচ দিয়ে মেরেই বল জালে পাঠিয়েছেন।

এর ১০ মিনিট পর আবারও ফ্রি কিক থেকে গোল! এবারে অবশ্য কোনো সুযোগই দেননি আবহার রোমানিয়ান গোলকিপার সিপ্রিয়ান তাতারুসানুকে। সম্ভবত ওই গোল ঠেকানো সম্ভব না পৃথিবীর কোনো গোলকিপারের পক্ষেই। নিখুঁত ফ্রি কিকটি সিপ্রিয়ান শুধু দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে দেখলেন! ৪২ মিনিটে সতীর্থের থ্রু পাস থেকে যে চিপটি করলেন সেটারও জবাব নেই। বল বাতাসে ভাসতে ভাসতে সিপ্রিয়ানের গ্লাভস ছুঁয়ে জালে।

আরও পড়ুন

সৌদি প্রো লিগে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, গোল করা সহজ—এমন একটা কথা প্রচলিত আছে রোনালদো সেখানে যাওয়ার পর থেকে। কিন্তু গতকাল রাতে রোনালদো বক্সের বাইরে থেকে যে গোল তিনটি করলেন, সম্ভবত ইউরোপের কোনো লিগেই তা ঠেকানো সম্ভব না। পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড এই মুহূর্তে ঠিক কেমন ফর্মে সেটাও বোঝা যায় তাঁর টানা দুই হ্যাটট্রিকে তাকিয়ে। আবহার মুখোমুখি হওয়ার ৭২ ঘণ্টা আগে গত শনিবার আল তাইয়ের বিপক্ষে আল নাসরের সর্বশেষ ম্যাচেও হ্যাটট্রিক করেছেন রোনালদো। চলতি লিগে এটি তাঁর তৃতীয় হ্যাটট্রিক।

গোলের পর সতীর্থদের সঙ্গে উদ্‌যাপন রোনালদোর
রয়টার্স

৩৯ বছর বয়সী একজন মানুষ টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন—ওয়াইনের বয়সের সঙ্গে নাকি স্বাদও বাড়ে, রোনালদোও তেমন নয় কি! ক্যারিয়ারে এ নিয়ে ৬৫ হ্যাটট্রিক করলেন। এর মধ্যে ৩০টি হ্যাটট্রিক বয়স ত্রিশের কোটা ছোঁয়ার আগে। বাকি ৩৫টি হ্যাটট্রিক ত্রিশ পার করে! এই পরিসংখ্যানে তাকিয়ে কি মনে হয় না, রোনালদো ফুটবলে প্রমাণিত একটি ব্যাপার মিথ্যা প্রমাণ করে চলছেন! বলা হয়, ৩০ বছর বয়সের মধ্যে ফুটবলাররা নিজেদের সেরাটা দিয়ে দেন। রোনালদোকে দেখুন, কথাটা মিথ্যে মনে হয়!

সাদিও মানে ও আবু সুলাইহিমকে দিয়ে আরও দুটি গোল করিয়েছেন রোনালদো। এরপর প্রথমার্ধ শেষেই তাঁকে মাঠ থেকে তুলে নেন আল নাসর কোচ লুইস কাস্ত্রো। তার আগেই ক্যারিয়ারে সপ্তমবার প্রথমার্ধেই হ্যাটট্রিক তুলে নিয়েছেন। আল নাসরে যোগ দেওয়ার পর এক ম্যাচে ন্যূনতম তিন গোল করলেন এ নিয়ে পঞ্চমবার। আল নাসরের হয়ে এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৫ ম্যাচে ৩৬ গোল হয়ে গেল রোনালদোর। সর্বোচ্চ ২৯ গোল নিয়ে এবার সৌদি প্রো লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতাও রোনালদো।

এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ঘরোয়া কাপ প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিয়েছে আল নাসর। লিগ শিরোপাও আল হিলালের জেতার সম্ভাবনাই বেশি। অর্থাৎ আল নাসরের হয়ে আরও একটি মৌসুম ট্রফিশূন্যভাবে শেষ করার শঙ্কা রোনালদোর সামনে। কিন্তু পর্তুগিজ তারকা হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। সে জন্যই সম্ভবত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্টে বুঝিয়েছেন, আল নাসরের দৌড়ের গতি কিন্তু কমবে না।

আরও পড়ুন