গাজার শিশুদের জন্য কাঁদছেন ‘আতঙ্কিত’ গার্দিওলা
‘গাজায় আজ এত জন নিহত হয়েছে, এর মধ্যে এত জন শিশু’—প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে টেলিভিশন বা মুঠোফোনে খবরের চ্যানেল বা ওয়েবসাইটে চোখ বোলালেই আঁতকে উঠতে হয়।
প্রায় ২১ মাস হয়ে গেছে ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। যে হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনিদের জন্য কাঁদছে প্রায় পুরো বিশ্ব। পেপ গার্দিওলা তাঁদের একজন। ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ কোচ বলেছেন, গাজার নিদারুণ পরিস্থিতি দেখে দেখে তিনি যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেছেন, ভয়ও পাচ্ছেন।
৫৪ বছর বয়সী গার্দিওলাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়। সেই ডিগ্রি নিতে গিয়েই গাজা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন সিটি কোচ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার হওয়া সেই ভিডিওতে গার্দিওলা বলেন, ‘গাজায় যা দেখছি, সেটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক। যন্ত্রণায় আমার শরীর কুঁকড়ে যায়। আমি স্পষ্ট করেই বলতে চাই, এটা আদর্শের কোনো ব্যাপার নয়। আমি ঠিক কি আপনি ঠিক, ব্যাপারটা তেমন কিছুও নয়। এটা পুরোপুরিই জীবনকে ভালোবাসার, প্রতিবেশীর ভালোমন্দ দেখার বিষয়।’
গার্দিওলা বলে যান, ‘বোমার আঘাতে চার বছরের ছেলেমেয়েরা মারা যাচ্ছে, তারা মারা যাচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতাল কোথায়, সেগুলো তো ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা হয়তো মনে করতে পারি, এটা আমাদের বিষয় নয়। তবে সাবধান। পরের জন কিন্তু আমাদের কেউ হতে পারে। এরপর যে চার বছরের বাচ্চাটা প্রাণ হারাবে, সে কিন্তু আমাদেরই কেউ হতে পারে। ক্ষমা চাচ্ছি, কিন্তু আমার ছেলেমেয়ে মারিয়া, মারিয়ুস ও ভালেন্তিনার ছবি ভেসে উঠছে। গাজায় শিশুদের দুঃস্বপ্ন ঘিরে ধরার পর থেকে প্রতিদিন সকালে এসব খবর দেখে খুব ভয় লাগে।’
গাজা নিয়ে এবারই প্রথম কথা বললেও নিজের রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে কোনো রাখঢাক নেই গার্দিওলার। তিনি যে কাতালানের স্বাধীনতার পক্ষে, সেটি অনেকবারই বলেছেন। ২০১৮ সালে কারাবন্দী কাতালান স্বাধীনতাপন্থীদের সমর্থনে হলুদ ফিতা লাগিয়ে মাঠে গিয়ে ২০ হাজার পাউন্ড জরিমানা দিয়েছিলেন। এর আগে ২০১৭ সালে কাতালানের স্বাধীনতার দাবিতে বার্সেলোনায় মিছিলও করেছেন গার্দিওলা।
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় দুই কারণে ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে গার্দিওলাকে। প্রথম ও সবচেয়ে বড় কারণ অবশ্যই সিটিকে ১৮ ট্রফি জেতানো। দ্বিতীয় কারণটি তাঁর পারিবারিক গার্দিওলা সালা ফাউন্ডেশন। যে ফাউন্ডেশন অসহায় ও হতদরিদ্রদের সাহায্য করে থাকে।
নিজের বক্তৃতায় শুধু গাজা নিয়েই নয়, সুদান ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছন গার্দিওলা। সবকিছু দেখেশুনে যে নির্লিপ্ত হয়ে বসে থাকা ঠিক নয়, গল্পের মাধ্যমে সেটিও বললেন সিটি কোচ, ‘হয়তো মনে হতে পারে আমরা যেখানে বাস করি, সেখান থেকে অনেক দূরের ঘটনা। আপনি হয়তো চিন্তা করেন, আমাদের কী করার আছে। আমার একটি গল্প মনে পড়ছে। এক জঙ্গলে আগুন লাগল। সেখানে থাকা অসহায় সব প্রাণী ভয়ে কুঁকড়ে গেল। তবে ছোট একটি পাখি পাশের সাগর থেকে বারবার ঠোঁটে করে পানি নিয়ে এসে ঢালতে লাগল। তা দেখে এক সাপ হেসে বলে উঠল, “ভাই, করছটা কী? তুমি তো আগুন নেভাতে পারবে না।” পাখিটি উত্তরে বলল, “আমি জানি।” সাপটি আবার বলল, “তাহলে কেন বারবার এই কাজ করে যাচ্ছ?” “আমি শুধু নিজের কাজটা করছি,” এই বলে পাখিটি চলে গেল। পাখিটি জানত সে আগুন নেভাতে পারবে না। কিন্তু সে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারেনি।’
এরপর গার্দিওলা বলেন, চুপ করে না থাকাটাই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ, ‘এই পৃথিবী আপনাকে মনে করিয়ে দেবে, পার্থক্য গড়ার জন্য খুবই ক্ষুদ্র আপনি। তবে গল্পটা বলছে, একজনের শক্তি শুধু নিক্তিতে মাপার জিনিস নয়। এটা বিকল্প ভাবার বিষয়, সামনে এগিয়ে আসার বিষয়, চুপ করে থাকতে অস্বীকৃতি জানানোর বিষয়।’