মেসিকে ছাড়বে না মায়ামি, মায়ামি ছাড়বেন না মেসিও

লিওনেল মেসিরয়টার্স

এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরই তাহলে ইন্টার মায়ামিতে মেসি-অধ্যায় শেষ হচ্ছে না।
গল্পটা চলবে আরও বেশ কিছুদিন, অন্তত আরও এক বছর, হয়তো তারও বেশি। ক্রীড়াবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য অ্যাথলেটিকের সাংবাদিক ডেভিড অর্নস্টাইনের দাবি, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের সবকিছু গুছিয়ে এনেছে ইন্টার মায়ামি। মৌখিকভাবে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে। এখন শুধু কাগজপত্রে সই করা বাকি। তার মানে, আগামী বছর মায়ামির নতুন স্টেডিয়াম উদ্বোধনের সময় এই ক্লাবের জার্সিতেই দেখা যাবে অধিনায়ক মেসিকে।

আরও পড়ুন

এটা শুধু মায়ামির জন্যই সুখবর নয়; মেসির চুক্তি নবায়নের বড় প্রভাব পড়বে পুরো মেজর লিগ সকার (এমএলএস) এবং সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়া সংস্কৃতির ওপরও। মায়ামি এখন যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি ক্লাব হয়ে উঠেছে, যে ক্লাব প্রতিপক্ষ অনেক দলের জন্য উদাহরণ। ক্লাবের অন্যতম মালিক ও ব্যবস্থাপনাপ্রধান জর্জ মাস অবশ্য দাবি করেছেন, ‘আসলে এখন অনেক ক্লাব আমাদের ঈর্ষা করে।’ যে দলে মেসির মতো সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন খেলেন, সেটা প্রতিপক্ষের ঈর্ষা জাগাবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। তবে মাঠে সাফল্যের পাশাপাশি মেসিকে ঘিরে মায়ামি যেভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাচ্ছে, সেটাও ঈর্ষণীয়।

মায়ামির জার্সিতে এমসির এমন উদযাপন দেখা যাবে আরও কিছুদিন
রয়টার্স


এমএলএসের এক ক্রীড়া পরিচালক দ্য অ্যাথলেটিককে বলেছেন, ‘মেসি আসার পর থেকে আমাদের লিগ নিয়ে সারা বিশ্বের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। এমনও শোনা যাচ্ছে, কেউ কেউ লিগটিকে নাকি এখন “মেসি লিগ সকার” বলেও ডাকছে। তবে এই নামকরণ যেন নেতিবাচক না হয়ে পড়ে, সেটাও ভাবতে হবে।’
জর্জ মাস অবশ্য সে রকম কিছু আশঙ্কা করছেন না। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে মেসির আগমন আশীর্বাদের মতো। এতে শুধু মায়ামি, এমএলএসই নয়, পুরো যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াঙ্গনই লাভবান হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। আর এ কারণে মেসির চুক্তি নবায়ন নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বাস তাঁর।

আরও পড়ুন

বিখ্যাত স্প্যানিশ ধারাভাষ্যকার আন্দ্রেস কান্তরের সঙ্গে এফডিপি রেডিওতে এক সাক্ষাৎকারে মাস জানিয়েছেন, মেসিকে এমএলএসে আনতে যেমন চার বছর ধরে পরিকল্পনা করে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল, তাঁকে মায়ামিতে ধরে রাখার কাজটা এত কঠিন হয়নি। মায়ামির জন্য সিদ্ধান্ত ছিল খুবই সহজ, মেসিও রাজি হয়েছেন সানন্দেই। মাস বলেছেন, ‘আশা করছি, আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারব সবাইকে। আমাদের সবার স্বপ্ন এখন নতুন স্টেডিয়ামে মেসিকে খেলতে দেখা; আগামী বছর মার্চেই হয়তো শুরু হবে নতুন স্টেডিয়ামের পথচলা। আমি বিশ্বাস করি, সেখানে প্রথম ম্যাচেই আমাদের অধিনায়ক মেসিকে দেখা যাবে।’

ব্যবসায়িকভাবেও তো এমএলএসে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছেন মেসি
রয়টার্স


মেসির চুক্তি নবায়নের খবর নিঃসন্দেহে স্বস্তি দেবে এমএলএস কমিশনার ডন গারবার এবং অন্যান্য ক্লাবের মালিকদেরও। শুধু মাঠে নয়, ব্যবসায়িকভাবেও তো এমএলএসে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছেন মেসি। এমনকি আর্জেন্টিনার মতো ফুটবলপাগল দেশেও, যেখানে একসময় এমএলএসকে গুরুত্বই দেওয়া হতো না, এখন ইন্টার মায়ামি অনেকের পছন্দের ক্লাব। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মেসির এই চুক্তি নবায়নের খবর আসতে পারে বিশাল এক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা হয়ে। বিশেষ করে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডা যৌথভাবে আয়োজন করবে এবং ধরে নেওয়া যায়, সেই সময় মেসি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার দলের অধিনায়ক হিসেবেও থাকবেন, ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে নানাভাবে বিপণনের দিগন্ত আরও প্রসারিত হবে।

আরও পড়ুন

মাস তো বললেনই, ‘যখন আমেরিকার ফুটবল ইতিহাস লেখা হবে, তখন পেলে, বেকহামের পাশাপাশি থাকবে মেসির নামও। এই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাথলেট এখন একজন আর্জেন্টাইন ফুটবলার—সেটাই মেসির আসল প্রভাব। মাত্র সাত মাসেই তিনি সুপার বোলের বিজ্ঞাপনে জায়গা করে নিয়েছেন। ইন্টার মায়ামি এখন যে কোনো ৮০ হাজার আসনের স্টেডিয়ামে ভরা গ্যালারির সামনে খেলার আশা করতে পারে।’
এমন প্রভাব যাঁর, তাঁকে কি আর সহজে ছাড়বে মায়ামি!

আরও পড়ুন