তাহলে মেসি–নেইমার–এমবাপ্পেদের এবারও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা হচ্ছে না

বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে কাল পিএসজিকে জেতাতে পারেননি মেসি ও নেইমার। এমবাপ্পে পরে বদলি হয়ে মাঠে নামেনছবি: টুইটার

কিলিয়ান এমবাপ্পের সম্ভবত পরিসংখ্যান নিয়ে আগ্রহ নেই। পিএসজির পরিসংখ্যানে ওই পাতাটা পড়া থাকলে কাল চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলো প্রথম লেগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ১-০ গোলে হারের পর এমবাপ্পে খাওয়াদাওয়া আর ঘুমের প্রতি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিতে পারতেন না। বরং খাওয়া ও ঘুম উবে যেত!

আরও পড়ুন

জার্মান ক্লাবটির কাছে পিএসজির হারের ম্যাচে শুরু থেকে খেলেছেন নেইমার ও লিওনেল মেসি। কার্লোস সোলেরের বদলি হিসেবে এমবাপ্পে ৫৭ মিনিটে নামলেও হার এড়াতে পারেনি পিএসজি। প্রথম লেগে এই হারের পর পরিসংখ্যানের পাতায় তাকিয়ে বিদায়ের চোখ রাঙানি পাচ্ছে ফরাসি ক্লাবটি। অথচ এমবাপ্পে কি না ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘দলের প্রত্যেককে ফিট থাকার পাশাপাশি ভালো ঘুম ও খেতে হবে।’

এমবাপ্পে বদলি হয়ে নেমে গোল পেলেও তা বাতিল করে দেন রেফারি
ছবি: এএফপি

পিএসজি তারকা নিশ্চয়ই ফিরতি লেগে তাকিয়ে এমন কথা বলেছেন। ৮ মার্চ বায়ার্নের মাঠে ফিরতি লেগ। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে বাঁচামরার এই লড়াইয়ে সবাইকে ফিট ও ফুরফুরে মেজাতে পেতে এমবাপ্পের বলা কথাটির ভুল ধরা যায় না। তবে পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। পরিসংখ্যান বলছে, এই যে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার কোনো ধাপে পিএসজি ঘরের মাঠে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হারল, তাতেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে! কীভাবে সেই গল্পই বলা যাক।

ফুটবলের পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ‘মিস্টার চিপ (অ্যালেক্সিস)’ টুইটে জানিয়েছেন, ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার কোনো ধাপে ঘরের মাঠে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারের পর পিএসজি কখনোই পরের ধাপে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এর আগে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ধাপে ৬ বার ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচ হারের পর প্রতিবারই বিদায় নিয়েছে পিএসজি।

আরও পড়ুন

২০২০-২১ চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল মনে আছে? পিএসজির ঘরের মাঠে পার্ক দে প্রিন্সেসে প্রথম লেগ ২-১ গোলে জিতেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। ফিরতি লেগও ২-০ গোলে জিতে সিটিই উঠেছিল ফাইনালে। আরেকটু পিছিয়ে ২০১৪-১৫ চ্যাম্পিয়নস লিগে তাকানো যাক। সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়েছিল পিএসজি। সেবার পার্ক দে প্রিন্সেসে প্রথম লেগে বার্সেলোনার কাছে ৩-১ গোলে হারের পর ফিরতি লেগেও ২-০ গোলে হেরেছিল ফরাসি ক্লাবটি।

১৯৯৪-৯৫ চ্যাম্পিয়নস লিগেও একই রকম গল্প পিএসজির। শুধু ধাপটা ভিন্ন ছিল, সেবার সেমিফাইনালে ঘরের মাঠে এসি মিলানের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল পিএসজি। মিলান নিজেদের মাঠে ফিরতি লেগেও জয় (২-০) তুলে নিয়ে উঠেছিল ফাইনালে। ২০০০-০১ চ্যাম্পিয়নস লিগের গল্পটা একটু ভিন্ন। সেবার প্রথম গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে দ্বিতীয় গ্রুপ পর্বে উঠেছিল পিএসজি। ঘরের মাঠে দেপোর্তিভো লা করুনার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হেরেছিল ৩-১ গোলে। সেবার নিজেদের গ্রুপের (বি) তলানিতে থেকে বিদায় নিয়েছিল পিএসজি।

চ্যাম্পিয়নস লিগের বাইরে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় আরও দুবার একইভাবে বাদ পড়েছে পিএসজি। ১৯৮৪-৮৫ উয়েফা কাপের (বর্তমানে ইউরোপা লিগ) দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম লেগে স্বাগতিক হয়ে ভিডিওটোনের কাছে ৪-২ গোলে হেরেছিল পিএসজি। হাঙ্গেরির ক্লাবটির মাঠে গিয়ে ফিরতি লেগও জিততে পারেনি পিএসজি। এই উয়েফা কাপে (১৯৮৯-৯০) সেই দ্বিতীয় রাউন্ডেই আরও একবার একই পরিণতি হয়েছে পিএসজির। জুভেন্টাসের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম লেগ হারের (০-১) পর ইতালিয়ান ক্লাবটির মাঠে ফিরতি লেগও জিততে পারেনি প্যারিসের ক্লাবটি।

অর্থাৎ পার্ক দে প্রিন্সেসে কাল রাতে হারের পর মেসি-নেইমার-এমবাপ্পের এখন সামনে একটাই চ্যালেঞ্জ। ফিরতি লেগেই কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট কেটে এই পরিসংখ্যান ভুল প্রমাণ করতে হবে। সে জন্য অবশ্য ভালো ফিটনেস, ঘুম ও খাওয়াদাওয়ার প্রয়োজন আছে বৈকি!

আরও পড়ুন