রিয়ালের ‘মাস্তান’ বললেন, মেসিই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়
জন্মদিনে এর চেয়ে ভালো উপহার আর কী হতে পারে!
গতকাল ১৮তম জন্মদিন ছিল ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনোর। এই দিনেই তাঁকে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দিল রিয়াল মাদ্রিদ।
আর্জেন্টিনার এই ‘বিস্ময় বালক’কে গত জুনে রিভার প্লেট থেকে কিনেছে রিয়াল। তখন জানা গিয়েছিল, চুক্তিটি ৬ কোটি ৩২ লাখ ইউরোর—ট্রান্সফার ফির হিসাবে আর্জেন্টিনা থেকে দলবদল করা ফুটবলারদের মধ্যে মাস্তানতুয়োনোই সবচেয়ে দামি! তাঁর সঙ্গে চুক্তি ছয় বছরের। রিলিজ ক্লজ ১০০ কোটি ইউরো।
লা লিগার ক্লাবটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিতে ১৮ বছর বয়স হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন মাস্তানতুয়োনো। গতকাল সে অপেক্ষা ঘুচে যাওয়ায় রিয়ালও দেরি করেনি। তাদের অনুশীলন গ্রাউন্ড ভালদেবেবাসে আর্জেন্টাইন এই ‘মাস্তানের’ সঙ্গে ছয় বছরের চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সেরেছে রিয়াল, অর্থাৎ চুক্তিপত্রে সই করেছেন মাস্তানতুয়োনো। এর আগে তাঁর মেডিকেল পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়।
রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর ৩০ নম্বর জার্সি হাতে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান মাস্তানতুয়োনো। এরপর কথা বলেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে।
৩০ নম্বর জার্সি কেন বেছে নিলেন, সেই ব্যাখ্যায় আর্জেন্টাইন প্লেমেকার বলেন, ‘(রিয়াল) সভাপতির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ৩০ নম্বর জার্সি পরতে পারব কি না। এটা আমার কাছে খুবই বিশেষ (জার্সি), যা আমি রিভার প্লেটে থাকতে পরেছি। এখানেও এটা পরতে মুখিয়ে ছিলাম এবং সভাপতি অনুমতি দিয়েছেন।’
২০২১ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে গিয়ে ৩০ নম্বর জার্সি পরে খেলেছেন মাস্তানতুয়োনোরই দেশের কিংবদন্তি লিওনেল মেসি। সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়া এই ফুটবলার রিয়ালের সংবাদ সম্মেলনে বসে মেসিকে বিশ্বসেরা বলতে একটুও কার্পণ্য করেননি, ‘মেসি আমার চোখে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়।’
পিএসজিও মাস্তানতুয়োনোকে কেনার চেষ্টায় করেছিল। মাস্তানতুয়োনো নিজেই জানিয়েছেন, পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে তাঁর সঙ্গে কথাও বলেছিলেন এ নিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রিয়ালে যোগ দেওয়ার কারণ হিসেবে এই খেলোয়াড় সামনে টেনে এনেছেন ক্লাবটির কোচ জাবি আলোনসোকে। আলোনসোর এক ফোনেই মাস্তানতুয়োনো রিয়ালে নাম লেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। শুনুন তাঁর মুখেই, ‘(কোচ আলোনসো) আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে কোচ আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। অবশ্যই আলাপটা ব্যক্তিগত ছিল। কিন্তু তিনি আমাকে খুব প্রভাবিত করেন। এতে আমি অনেক আত্মবিশ্বাস পাই এবং যেভাবে তিনি এসব করেছেন, তা আমার কাছে অনেক কিছু।’
মাস্তানতুয়োনোকে ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে বিশ্ব ফুটবলে অন্যতম সেরা প্রতিভা’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন রিয়াল সভাপতি পেরেজ। তাঁর প্রসঙ্গে রিয়াল কিংবদন্তি আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর কথাও টানেন পেরেজ। মাস্তানতুয়োনোর মতো ডি স্টেফানোও আর্জেন্টাইন, তাঁর মতোই রিভার প্লেট ও রিয়ালে খেলেছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার।
আজই প্রথম রিয়ালের অনুশীলনে যোগ দেবেন মাস্তানতুয়োনো। ক্লাবটিতে নিজের খেলার পজিশন নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়, বাঁ পায়ের। প্রায় সব সময়ই ডান প্রান্তে খেলি।’
নিজের ১৮তম জন্মদিন শুধু রিয়ালের অনুশীলন মাঠে নয়, আরও এক জায়গায় কাটিয়েছেন মাস্তানতুয়োনো। ‘দ্য দি মারিয়া রেস্টুরেন্ট’, যেটি মাদ্রিদে অবস্থিত। সেখানে তিনি মোমবাতি নিভিয়ে ও কেক কেটে জন্মদিন উদ্যাপন করেন। মাস্তানতুয়োনোর মা–বাবা তখন সেখানে ছিলেন, যেমনটা ছিলেন ভালদেবেবাসে তাঁর পরিচিতি অনুষ্ঠানেও।
সন্তানের হাতে রিয়ালের জার্সি দেখে বাবা–মায়ের চোখও ভিজেছে। রিয়ালে সংবাদ সম্মেলনে ক্লাবটিতে নিজের ‘রোল মডেল’ নিয়ে আনহেল দি মারিয়ার প্রসঙ্গও তুলেছেন মাস্তানতুয়োনো, ‘আলফ্রেড ডি স্টেফানোকে দেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু দি মারিয়া ও হিগুয়েইনকে দেখেছি, তাঁরা মাথায় গেঁথে আছেন।’ মাস্তানতুয়োনোর আগে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানো সর্বশেষ আর্জেন্টাইন ছিলেন আনহেল দি মারিয়া (২০১০ সালে)।
বুয়েনস এইরেসের আজুল শহরে জন্ম মাস্তানতুয়োনোর। শৈশবে অবশ্য ফুটবল ও টেনিস—দুটোতেই আগ্রহ ছিল তাঁর। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইনদের সবচেয়ে বড় আবেগ ফুটবলকেই বেছে নেন।
২০১১ সালে রিভার দি আজুলের বয়সভিত্তিক দলে নাম লিখিয়ে মাস্তানতুয়োনোর প্রাতিষ্ঠানিক ফুটবলযাত্রা শুরু। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। এরপর ক্লাব সেমেন্তোতে এক বছর থেকে তিনি চলে যান আর্জেন্টিনার সেরা ক্লাবগুলোর একটি রিভার প্লেটে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলে খেলেন। গত বছরই ক্লাবের মূল দলে অভিষেক হয় তাঁর। গত ফেব্রুয়ারিতে রিভার প্লেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতা হিসেবে রেকর্ড গড়ে সবার নজরে পড়েন। অনেকের চোখেই তিনি পরবর্তী মেসি।
লা লিগার নতুন মৌসুমে আগামী মঙ্গলবার রাতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওসাসুনার মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ।