বিদেশি কোচের জন্য দরজা খোলা ব্রাজিলের

রিও ডি জেনিরোয় ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) সদরদপ্তরফাইল ছবি: এএফপি

জাতীয় দলের জন্য বিদেশি কোচ নয়, দেশের কোচ নিয়োগ দেওয়া অলিখিত নিয়ম ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে। এবার সম্ভবত সে নিয়ম ভাঙতে পারে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ)। বিদেশি কোচের জন্য দরজা খোলা—এমন কথাই বলেছেন সিবিএফ সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ।

ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘ল্যান্স’-এর আগে চারজন বিদেশি কোচের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল। তখন জানানো হয়েছিল, জিনেদিন জিদান, কার্লো আনচেলত্তি, লুইস এনরিকে ও জোসে মরিনিও আছেন সিবিএফের এই তালিকায়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়ার পর কোচের পদ ছেড়ে দেন তিতে। সিবিএফের সঙ্গে কাতার বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তি ছিল তিকের। অর্থাৎ নতুন কোচ বাছাইয়ে পর্যাপ্ত সময়ই পেয়েছে সিবিএফ। কিন্তু এর মধ্যেও তিতের শূন্যতা পূরণ করতে না পারায় নতুন কোচের সন্ধান করতে দেশের সীমানার বাইরেও পা রাখতে আপত্তি নেই রদ্রিগেজের।

১৭ জানুয়ারি সিবিএফ এ নিয়ে সিবিএফ সভাপতির বক্তব্য আজ প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি। রদ্রিগেজ বলেছেন, ‘(কোচের) জাতীয়তা নিয়ে আমাদের কোনো পছন্দ-অপছন্দের সংস্কার নেই। আমরা একজন সম্মানিত কোচ চাই, যিনি খেলোয়াড়দের খেলাকে মানসম্মত জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন। আমরা সেটাই করতে চাই, ব্রাজিল যা সব সময় করার চেষ্টা করেছে—খুব আক্রমণাত্মক খেলা।’

ব্রাজিলের কোচ হওয়ার সম্ভাবনায় এর আগে আনচেলত্তি, এনরিকে, মরিনিও ও জিদানের নাম আলোচনায় এসেছে
ছবি: টুইটার

একুশ শতকের শুরুর দিকে ইংল্যান্ড ছাড়া বেশির ভাগ বড় জাতীয় দলগুলোই বিদেশ কোচ এড়িয়ে চলেছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের কোচ ছিলেন সুইডিশ সভেন গোরান এরিকসন। তাঁর জায়গায় ইতালিয়ান ফাবিও কাপেলোকে কোচ করে এনেছিল ইংল্যান্ড। ২০১২ সালে কাপেলো সরে দাঁড়ানোর পর আবারও ইংলিশ কোচ নিয়োগের পথে ফিরে এসেছে ইংল্যান্ড।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

ব্রাজিলিয়ান কোচ লুই ফেলিপে স্কলারির অধীনে ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিল ‘সেলেসাও’রা। স্কলারির পর থেকে তিতে পর্যন্ত মোট ৮ জন ব্রাজিলিয়ান কোচ নিয়োগ দিয়েছে সিবিএফ। তিতে সরে দাঁড়ানোর পর ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবল থেকে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার মতো বেশ কয়েকজন কোচের নাম উঠে এসেছিল। ফ্লুমিন্সের কোচ ফার্নান্দো দিনিজ, পালমেইরাসের কোচ আবেল ফেরেইরা, গ্রেমিও-র কোচ রেনাতো গাউচো ও দরিভাল জুনিয়রের নাম আলোচনায় এসেছে।

কিন্তু তাঁদের কেউ সেভাবে সমর্থন পাননি। এ নিয়ে স্কলারি সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমাদের (ব্রাজিলিয়ান কোচ) যোগ্যতা আছে। কিন্তু এখনকার তুলনায় আগে আমরা বেশি কোচ তৈরি করেছি। নতুন প্রজন্ম...পর্যাপ্ত শিরোপা জিততে পারেনি।’

সিবিএফ সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ
ফাইল ছবি: এএফপি

শুধু জিদান, এনরিকে, মরিনিও ও আনচেলত্তি নয়, নেইমারদের সম্ভাব্য কোচের তালিকায় আর্জেন্টিনার মার্সেলো গ্যালার্দো ও মরিসিও পচেত্তিনোর নামও উঠে এসেছে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমে। তবে আনচেলত্তি নিজেই এর আগে ব্রাজিলের কোচ হওয়ার সম্ভাবনায় জল ঢেলেছেন, ‘আগ্রহী হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমার অবস্থান পরিষ্কার। আমি এখনো এখানে (রিয়াল মাদ্রিদ) আছি। আর আমি কখনো রিয়ালকে বলতে যাব না, তাদের সঙ্গে আমার রোমাঞ্চকর অভিযাত্রাটা শেষ হয়েছে।’

পেপ গার্দিওলা কয়েক বছর আগে বলেছিলেন, ম্যানচেস্টার সিটি কোচের দায়িত্ব ছাড়ার পর তিনি কোনো জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে চান। তখন ব্রাজিলের পরবর্তী কোচ হিসেবে গার্দিওলাকে দেখেছেন অনেকেই। পরে গার্দিওলা নিজেই সে সম্ভাবনা নাকচ করেছেন।

সিবিএফ সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ চাচ্ছেন, মার্চের মধ্যেই নতুন কোচ ঠিক করতে, ‘গত বছরের শেষ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২৬ জন কোচের নাম শুনেছি। আমরা এর মধ্য থেকেই কয়েকজনকে বাছাই করব।’

তবে সিবিএফ সভাপতির জন্য বিশ্বমানের কোচ নিয়োগ দেওয়া সহজ হবে না। ইউরোপের ক্লাবগুলোর লোভনীয় বেতন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও লিগ শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ছেড়ে খুব কম কোচই ব্রাজিলের দায়িত্ব নিতে আসতে আগ্রহী হবেন। এ ছাড়া অন্য সমস্যা আছে। বিদেশি (গ্রিঙ্গো) কোনো কোচকে ব্রাজিলিয়ানরা মেনে নেবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। গত ডিসেম্বরে এ নিয়ে চালানো জরিপে ৪৮ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান ‘গ্রিঙ্গো’ (বিদেশি) কোচ নিয়োগের বিপক্ষে ভোট দেন। ৪১ শতাংশ এর পক্ষে ভোট দেন। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই জরিপের আগে যে সর্বশেষ জরিপ চালানো হয়েছিল তাতে আরও বেশিসংখ্যক ব্রাজিলিয়ান বিদেশি কোচ নিয়োগের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।

খেলাধুলাভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘লুদোপেদিও’র সম্পাদক ও ঐতিহাসিক ভিক্টর ফিগোলস এএফপিকে বলেছেন, ‘ব্রাজিলে সবাই মনে করে, যেহেতু আমরা বিশ্বের সেরা ফুটবল খেলি, তাই বিদেশি কোচের কাছ থেকে শোনার প্রয়োজন নেই খেলাটা কীভাবে খেলতে হবে।’

ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে বিদেশি কোচ যে আসেনি, তা নয়। ১৯২৫ সালে ব্রাজিল জাতীয় দলের দায়িত্ব সামলেছেন উরুগুয়ের র‌্যামন প্লাতেরো। ১৯৪৪ সালে ব্রাজিলের ফ্লাভিও কস্তার পাশাপাশি ‘সেলেসাও’দের দায়িত্বে ছিলেন পর্তুগালের জোর্জে গোমেজ দা লিমা।

এমনকি আর্জেন্টাইন কোচও ছিলেন ব্রাজিল ফুটবল দলের দায়িত্বে। ১৯৬৫ সালে খুব অল্প সময়ের জন্য ব্রাজিলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন ফিলিপো নুনেজ। বেশির ভাগ ব্রাজিলিয়ান দেশের কোচ নিয়োগের পক্ষে ভোট দিলেও ভিক্টর ফিগোলস মুদ্রার অপর পিঠটাও দেখিয়েছেন, ‘আমরা যেহেতু গ্রেট খেলোয়াড়ের জন্ম দিই, তাই গ্রেট কোচও তৈরি করি—এমন একটা ভাবমূর্তি আছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে। কিন্তু ধারণাটি সত্য নয়। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে কিন্তু ব্রাজিলিয়ান কোচেরা শীর্ষ দশেও নেই।’