‘স্পেনের হয়ে খেললে মেসির দুটি বিশ্বকাপ থাকত’

আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জিতে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অপূর্ণতা ঘুচিয়েছেন মেসিফিফা

জন্ম আর্জেন্টিনায় হলেও স্পেনে বেড়ে উঠেছেন লিওনেল মেসি। দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় দুই দেশের হয়েই খেলার সুযোগ ছিল তাঁর। কিন্তু মেসি বেছে নিয়েছেন জন্মভূমি আর্জেন্টিনাকে।

আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের পর ১৫ বছরেও কিছুই জিততে না পারায় মেসিকে কম তোপের মুখে পড়তে হয়নি। অভিমানে একবার তো অবসরও নিয়েছিলেন। তবে ২০২১ সাল থেকে ক্যারিয়ারের বাকি অপূর্ণতাগুলো ঘুচতে শুরু করে। আলবিসেলেস্তেদের হয়ে একে একে জেতেন কোপা আমেরিকা, ফিনালিসিমা ও বিশ্বকাপ। এখন আর ক্যারিয়ারে অপূর্ণতা বলতে কিছু নেই মেসির।

তবে স্পেনের সাবেক ডিফেন্ডার মারিয়ানো পেরনিয়া মনে করেন, মেসির বিশ্বকাপ জয়ের অপেক্ষা অনেক আগেই ফুরাত, এমনকি আরেকটি বিশ্বকাপ বেশি থাকত, যদি তিনি স্পেনের হয়ে খেলতেন।

পেরনিয়ার চোখে মেসি আর জিদান সেরা ফুটবলার
ইনস্টাগ্রাম

৪৬ বছর বয়সী পেরনিয়াকে খুব বেশি মানুষের চেনার কথা নয়। তবে একটি কারণে পেরনিয়া বিশেষ একজন হয়ে আছেন। আর্জেন্টিনায় জন্ম কিন্তু খেলেছেন স্পেন জাতীয় দলের হয়ে—এমন ১৩ জন ফুটবলারের একজন তিনি। বিংশ শতাব্দীতে আর্জেন্টিনায় জন্ম নিয়ে একবিংশ শতাব্দীতে স্পেনের হয়ে খেলা একমাত্র ফুটবলার পরিচয়টা তাঁর বিশেষত্ব আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

সেই পেরনিয়া সম্প্রতি ক্রীড়াবিষয়ক ওয়েবসাইট ফ্ল্যাশস্কোরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘যদি মেসি স্পেনের হয়ে খেলত, ওর এত দিনে দুটি বিশ্বকাপ জেতা হয়ে যেত। একটি ২০১০ সালে, যেটি স্পেন জিতেছিল। মেসি ওই দলের সদস্য হলে সেও এর অংশ হতো। আরেকটি পরেরবারই (২০১৪ সালে)। কারণ, ওই সময় সে সেরা ছন্দে ছিল।’

জন্ম আর্জেন্টিনায় হলেও স্পেনের হয়ে খেলেছেন পেরনিয়া
এক্স

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ২০১৪ বিশ্বকাপে ট্রফি–ছোঁয়া দূরত্ব থেকে ফিরতে হয়েছিল মেসিকে। মারাকানায় ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের শেষ দিকে মারিও গোৎসের গোলে হৃদয় ভাঙে মেসির। আর্জেন্টিনাকে ১–০ ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় জার্মানি।
২০১৪ বিশ্বকাপের পর ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকা ফাইনালেও হেরে যায় আর্জেন্টিনা। টানা তিন বছর শিরোপার খুব কাছে গিয়েও জিততে না পারায় অনেক আর্জেন্টাইনই মেসির ওপর মনক্ষুণ্ন হয়েছিলেন। ‘মেসি আর্জেন্টিনার নয়, বার্সেলোনার’—এমন কথাও শুনতে হয়েছে।

আরও পড়ুন

সে সময়ের প্রসঙ্গ টেনে পেরনিয়া বলেছেন, ‘আর্জেন্টিনায় এমন এক সময় এসেছিল, যখন আমরা মেসিকে জাতীয় দলে দেখতে চাইতাম না। কারণ, সে সময় ওর ব্যাপক সমালোচনা চলছিল। এমনকি তাকে বিশ্বকাপে আর না খেলার কথাও বলা হয়েছিল। এটা একধরনের পাগলামি ছিল।’

২০১৪ সালে বিশ্বকাপ ট্রফির পাশ দিয়ে এভাবেই হেঁটে গেছেন মেসি। কিন্তু ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি
ফিফা

স্পেনের হয়ে ২০০৬ বিশ্বকাপে খেলেছেন পেরনিয়া। একই বছর আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন মেসি। পেরনিয়ার দাবি, মেসি চাইলে ওই বিশ্বকাপে দুজন সতীর্থ হিসেবেও খেলতে পারতেন, বিশ্বকাপ জয়ের জন্য ২০২২ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো না, ‘ওর যে প্রতিভা, তাতে প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বকাপেই ট্রফি জেতা উচিত ছিল।’

মেসি কীভাবে এত বড় মাপের ফুটবলার হয়ে উঠলেন, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন পেরনিয়া, ‘সে কখনোই শিখতে চাওয়া বন্ধ করেনি। যদিও বাইরে থেকে মনে হয়েছে, সে সব জানে। সে-ই বিশ্বসেরা, এটা নিজেও জানত। এরপরও কখনোই ঢিলেঢালা ভাব দেখায়নি। সব সময় নতুন কিছু করতে চাইত। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে নিজেকে নিখুঁতভাবে গড়ে তুলেছে।’

আরও পড়ুন

খুব অল্প বয়সেই মা-বাবার সঙ্গে আর্জেন্টিনা থেকে স্পেনে পাড়ি দিয়েছিলেন মেসি। শারীরিকভাবেও ছিলেন অসুস্থ। হরমোনজনিত সমস্যা ছিল তাঁর। যে কারণে শারীরিক উচ্চতা বাড়ছিল না। মেসির মা-বাবা স্পেনে বসবাস শুরু করেছিলেন মূলত ছেলের চিকিৎসার জন্যই। সেই সময়ই বার্সেলোনার চোখে পড়েছিলেন মেসি। বার্সাই তাঁর চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করে। মেসি মহাতারকা হয়ে উঠেছেন স্পেনে থেকেই। তাই চাইলেই তিনি স্পেনের হয়ে খেলতে পারতেন।

২০০৯ সালে কোপা দেল রের ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে মেসি ও পেরনিয়া। মেসি তখন খেলতেন বার্সেলোনায়, পেরনিয়া খেলতেন আতলেতিকো মাদ্রিদে
এএফপি

স্পেনকে ২০১০ বিশ্বকাপ জেতানো কোচ ভিসেন্তে দেল বস্ক তো মেসিকে তাঁর দলে পেতে আপ্রাণ চেষ্টাও চালিয়েছেন। কিন্তু মেসি কিছুতেই রাজি হননি। তাঁর মনেপ্রাণে ছিল শুধু আর্জেন্টিনা।

২০২২ সালে এ ব্যাপারে দেল বস্ক বলেছিলেন, ‘আমি মেসিকে চোখের সামনে বেড়ে উঠতে দেখেছি। সে সব সময়ই দুর্দান্ত ফুটবলার, অসম্ভব প্রতিভার অধিকারী। আমি ওকে স্পেনের পক্ষে খেলানোর সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করেছি। কিন্তু ওর মনে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা তীব্র। সে আর্জেন্টিনাকেই বেছে নিয়েছে।’