মেসির জন্য বছরে ৪৬১৯ কোটি টাকার প্রস্তাব সৌদির ক্লাব আল–হিলালের

পিএসজিতে দিন ফুরিয়ে আসছে মেসিরছবি: এএফপি

ইতালির সংবাদমাধ্যম ‘ক্যালসিওমের্কাতো’ এমন একটা সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল গত ৪ জানুয়ারি। সৌদি আরবের ক্লাব আল–হিলালের সঙ্গে লিওনেল মেসির চূড়ান্ত আলাপ নাকি হয়ে গেছে। অদূর ভবিষ্যতে সৌদির এ শীর্ষ ক্লাবটিতে খেলবেন মেসি। আর সেটি হবে ইতিহাসে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে।

এর সপ্তাহ খানিক পর স্পেনের সংবাদমাধ্যম ‘মুন্দো দেপোর্তিভো’ জানিয়েছিল, মেসিকে পেতে বছরে ৩০ কোটি ডলার পারিশ্রমিক দেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারে আল–হিলাল। তখনো পর্যন্ত এ সবই ছিল গুঞ্জন। কিন্তু এখন তা আর নেই। আল–হিলাল থেকে বিশাল অঙ্কের প্রস্তাবই পাঠানো হয়েছে মেসির কাছে।

আরও পড়ুন

দলবদল নিয়ে নির্ভরযোগ্য ইতালিয়ান সংবাদকর্মী ফ্যাব্রিজিও রোমানো কাল টুইট করেছেন এ নিয়ে, ‘লিওনেল মেসির জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠিয়েছে আল–হিলাল। পারিশ্রমিক বছরে ৪০ কোটি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ৬১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা) ইউরোর বেশি।’

রোমানোর টুইটে আরও তিনটি বিষয় আছে, প্রথমত, ইউরোপে থেকে যাওয়াই মেসির কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বার্সেলোনা (মেসিকে পেতে) কথা শুরু করতে এফএফপির (আর্থিক সংগতি নীতি) অপেক্ষায় আছে। তৃতীয়ত, পিএসজির (নতুন চুক্তির) নতুন চুক্তির প্রস্তাব এখনো মেসি গ্রহণ করেননি। কিছু বিষয়ে নিশ্চয়তা চেয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা।

পিএসজিতে মেসির বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে আগামী ৩০ জুন। এরপরই ফ্রি এজেন্ট হয়ে যাবেন। বার্সেলোনা তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, এ খবর জানা গিয়েছে আগেই। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মিয়ামিও নাকি আগ্রহী আর্জেন্টাইন তারকার প্রতি। আর সৌদি আরবের ক্লাবের আগ্রহী হয়ে ওঠার খবর কদিন আগ পর্যন্তও স্রেফ গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু শুধু রোমানো নয়, সৌদির সংবাদমাধ্যম ‘সৌদি গেজেট’ ও ‘ওকাজ’ও আল–হিলালের এই প্রস্তাব পাঠানোর খবর নিশ্চিত করেছে। ‘ঘনিষ্ঠ সূত্রে’র বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, মেসিকে আনুষ্ঠানিকভাবেই এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, আর্জেন্টিনাকে কাতার বিশ্বকাপ জেতানো সাতবারের বর্ষসেরা মেসি যা যা সুবিধা চান, তার সবকিছু পূরণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে এই প্রস্তাবে। আর এই প্রস্তাব সম্ভবত মেসি ও তাঁর প্রতিনিধি দলের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মেইল অনলাইন।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

গত মাসে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন মেসির বাবা হোর্হে মেসি। তখন গুঞ্জন উঠেছিল, ছেলের দলবদল নিয়ে কথা বলতেই বুঝি সেখানে গিয়েছেন। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ তখন জানিয়েছিল, মেসির বাবার সৌদিতে যাওয়া মূলত দেশটির পর্যটন বোর্ডের আমন্ত্রণে। মেসি আগেই সৌদি পর্যটন বোর্ডের দূত হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তবে এই কাজের মধ্যেই আল–হিলালের সঙ্গে মেসির সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে তখন আন্দাজ করেছিল সংবাদমাধ্যমটি।

মেসির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো গত জানুয়ারিতে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে যোগ দেন। ইতিহাসের অন্যতম সেরা এ দুই খেলোয়াড়কে উড়িয়ে এনে ঘরোয়া ফুটবল জমিয়ে তুলতে চায় সৌদি আরব। সংবাদমাধ্যম গোল ডট কম নিশ্চিত করেছে, আল নাসরে রোনালদো মৌসুম প্রতি যে বেতন ( ২০ কোটি ১৮ লাখ ইউরোর কিছু বেশি) পান, মেসি আল–হিলালে যোগ দিলে তাঁর দ্বিগুণের কাছাকাছি বেতন পাবেন।

তবে সৌদিতে গিয়ে রোনালদোর সঙ্গে পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা জাগিয়ে তোলার ইচ্ছা নেই মেসির। ইউরোপেই থাকার ইচ্ছে তাঁর। সে ক্ষেত্রে বার্সার নামটা উঠে আসে। কিন্তু কাতালান ক্লাবটি ঋণে ডুবে আছে। লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন, খেলোয়াড় ক্রয় ও নিবন্ধনের জন্য বার্সাকে অবশ্যই তাদের পারিশ্রমিকের তালিকা থেকে ২০ কোটি ইউরো ছাঁটতে হবে।

আরও পড়ুন

পিএসজিতেও মেসির ভবিষ্যৎ দেখা যাচ্ছে না। কাতারি মালিকাধীন ক্লাবটি তাঁকে রেখে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু চুক্তি নবায়ন করলে আগামী মৌসুমে তাঁর যে বেতন হবে, সেটা দিতে গেলে ক্লাবের আর্থিক হিসাব-নিকাশ ঠিক রাখতে সমস্যা হবে। সে ক্ষেত্রে অন্য ফুটবলারদের বেতন কমাতে হবে ক্লাবকে। এ কারণে তারা চাইছে মেসির বেতন ৩০ শতাংশ কমাতে।

কিন্তু মাসে ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৯ কোটি টাকা) পারিশ্রমিক পাওয়া আর্জেন্টাইন তারকা তাতে রাজি নন। চাওয়া অনুযায়ী পারিশ্রমিক না পেলে মেসি প্যারিস ছেড়ে চলে যাবেন বলেও খবর দিয়েছে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম। ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘লেকিপ’ তো জানিয়েই দিয়েছে, পিএসজিতে মেসির দিন ফুরিয়ে আসছে। দুই পক্ষের সম্পর্ক বিচ্ছেদে গড়ানোর পথে। ক্লাবটির সমর্থকেরাও দুয়ো দিচ্ছেন মেসিকে

আল–হিলালের ৪০ কোটি ইউরোর প্রস্তাবে রাজি হলে পারিশ্রমিকে আবারও শীর্ষে উঠে আসবেন মেসি। যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ‘ফোর্বস’ জানিয়েছে, পিএসজিতে গত বছর ১২ কোটি ডলার আয় করেন আর্জেন্টাইন তারকা। কিলিয়ান এমবাপ্পের আয় ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ ডলার।