‘মাস্তান’কে ছাড়া রিয়ালের অ্যানফিল্ড–অভিযান এবং সালাহর রেকর্ডের হাতছানি
অ্যানফিল্ডে যাওয়ার ঠিক আগে হঠাৎ দুঃসংবাদ পেল রিয়াল মাদ্রিদ। লিভারপুলের বিপক্ষে আজ রাতে খেলতে পারবেন না ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো। দলের মেডিকেল বিভাগ জানিয়েছে, আর্জেন্টাইন এই মিডফিল্ডার ভুগছেন ‘স্পোর্টস হার্নিয়া’-তে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা লিখেছে, মাস্তানতুয়োনো কবে ফিরতে পারবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আজকের ম্যাচে তাঁর না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত।
গতকাল অনুশীলনেও ছিলেন না মাস্তানতুয়োনো। সাধারণত প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করে রিয়াল। কিন্তু এবার কোচ জাবি আলোনসো একটু ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন। অ্যানফিল্ডে সাংবাদিকদের সামনে কৌশল প্রকাশ না করে তিনি শেষ অনুশীলন সেরেছেন ক্লাবের নিজস্ব মাঠ ভালদেবাসে। মার্কার বিশ্লেষণ, প্রতিপক্ষ যেন শেষ মুহূর্তে কিছু বুঝে না ফেলে, সে জন্যই আলোনসোর এ সিদ্ধান্ত।
রিয়ালের বর্তমান ফর্ম অবশ্য কোনোভাবেই লুকানো যাচ্ছে না। লা লিগায় গত পরশু রাতে ভ্যালেন্সিয়াকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে তারা। এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৪ ম্যাচে এটি তাদের ১৩তম জয়। একমাত্র হারের স্বাদ লিগে। ১২৬ বছরের ইতিহাসে রিয়ালের এর চেয়ে ভালো সূচনা হয়েছে মাত্র দুবার, সর্বশেষ ১৯৬১-৬২ মৌসুমে।
এই ফর্ম নিয়ে অ্যানফিল্ডে যাচ্ছে আলোনসোর দল, যা লিভারপুলের জন্য খুব একটা সুখকর নয়। প্রিমিয়ার লিগে গত রোববার অ্যাস্টন ভিলাকে ২-০ গোলে হারালেও এর আগে এক মাসে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ছয় ম্যাচে পাঁচটিতে হেরেছে আর্নে স্লটের দল। জিতেছে কেবল চ্যাম্পিয়নস লিগে, আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে।
রিয়ালের বিপক্ষে সাম্প্রতিক ইতিহাসও লিভারপুলের পক্ষে নয়। গত বছর অবশ্য অ্যানফিল্ডেই ২-০ গোলে জিতেছিল তারা। ২০০৯ সালের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে সেটাই ছিল রিয়ালের বিপক্ষে লিভারপুলের প্রথম জয়। মাঝের আট মুখোমুখিতে সাত হার, এক ড্র।
তবু এবারের লড়াইটা শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতার নয়, পুনর্মিলনীরও। রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর এই প্রথম নিজের পুরোনো মাঠে ফিরছেন ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ড। লিভারপুলের একদম শিকড় থেকে উঠে এসে ক্লাবের হয়ে দুবার প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন তিনি। অ্যানফিল্ডের এক পাশে আজও ঝুলছে তাঁর বিশাল মুর্যাল। তাতে লেখা, ‘আমি লিভারপুলের এক সাধারণ ছেলে, যার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।’
তবে রিয়ালে যোগদানের সময় অ্যানফিল্ডের ক্লাবটির খুব একটা লাভ হয়নি—চুক্তি শেষের পর মাত্র এক কোটি ইউরোয় তাঁকে হারায় লিভারপুল। তাই ট্রেন্টের ফেরা হয়তো পুরোপুরি আবেগঘন না–ও হতে পারে। কিন্তু ট্রেন্ট নিজে এখনো আবেগে ভেজা, ‘যা–ই ঘটুক, লিভারপুলের প্রতি আমার ভালোবাসা বদলাবে না। ওখানকার স্মৃতিগুলো আমার জীবনভর থাকবে। আমাকে যেভাবেই স্বাগত জানাক, সেটি কিছু পাল্টাবে না।’
গোল পেলে উদ্যাপনও করবেন না—এমনটাও জানিয়েছেন ২৭ বছর বয়সী এই ইংরেজ ফুটবলার। তাঁর মুখে হাসি ঝরেছে পুরোনো বন্ধুদের খুদে বার্তা পেয়ে, ‘ড্রয়ের পর রোবো, মো আর ইবু আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছে। আমরা বেশ হাসাহাসি করেছি।’
রিয়াল কোচ জাবি আলোনসোর কাছেও অ্যানফিল্ড মানে স্মৃতির ভান্ডার। ২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত লিভারপুলের মাঝমাঠের ‘মস্তিষ্ক’ ছিলেন তিনি। সেই ক্লাবের হয়েই জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ও এফএ কাপ।
এই ম্যাচে কিছু রেকর্ডের হাতছানিও আছে লিভারপুলের সামনে। মাত্র ২ গোল করলেই ইউরোপের এই শীর্ষ প্রতিযোগিতায় ৫০০ গোল পূর্ণ হবে তাদের। একই সঙ্গে সালাহর জন্য এটা হতে পারে স্মরণীয় রাত—অ্যানফিল্ডে তাঁর ২০০তম ম্যাচ, আর ২ গোল করলেই আফ্রিকার প্রথম ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে ৫০ গোল পূর্ণ হবে।
তবে কাজটা সহজ নয়। রিয়াল এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৩৪ গোল করার বিপরীতে হজম করেছে মাত্র ১১। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেয়েছে ১ গোল। আলোনসো তাই সতর্ক, ‘শিরোপা জিততে হলে রক্ষণে ভালো করতে হবে। অনেক ক্লিন শিট লাগবে।’
লিভারপুলের রক্ষণ সে তুলনায় দুর্বল। ১৬ ম্যাচে ৩০ গোল করলেও হজম করেছে ২৪। বিপরীতে রিয়ালের হয়ে ১৪ ম্যাচে ১৮ গোল করা কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তুঙ্গে।
তবে দুই দলেই কিছু প্রশ্নচিহ্ন আছে। ট্রেন্ট এখনো পুরোপুরি ফিট নন—খেলবেন কি না, তা অনিশ্চিত। রিয়ালের দানি কারভাহালও চোটে আছেন, ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে খেলেননি। আজও তাঁকে দেখা না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে শুরু থেকেই রাইটব্যাকে খেলতে পারেন ফেদে ভালভের্দে। সেন্টারব্যাকে দেখা যেতে পারে এদের মিলিতাও–দিন হাউসেনের জুটি।