অপেশাদার ‘হারকিউলিস’ যখন ‘আয়াক্স দ্য গ্রেটের’ ঘাতক

যোগ করা সময়ে ম্যাটস গ্রোটেনবার্গের গোলেই জিতেছে হেরকিউলিস। গোলের পর তাঁর উদ্‌যাপনএএফপি

আয়াক্সের সেই দিন আর নেই। কিন্তু ইউরোপের মঞ্চে নেদারল্যান্ডসের সবচেয়ে সফল ক্লাবটির নাম এখনো সগৌরবে উচ্চারিত হয়। ডাচ ফুটবলে শীর্ষ লিগ তারা জিতেছে রেকর্ড ৩৬ বার। তাদের ২০ বার ডাচ কাপ জয়ও রেকর্ড। ইউরোপিয়ান কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতাও চারবার জিতেছে আয়াক্স, নেদারল্যান্ডসের আর কোনো ক্লাব যা করতে পারেনি।

আরও পড়ুন

অর্থাৎ গ্রিক পুরাণের যোদ্ধা ‘আয়াক্স দ্য গ্রেট’ অবলম্বনে ক্লাবটির নাম রাখা মোটেও বাড়াবাড়ি নয়। সেই যে পুরাণের রাজা তেলামনের ছেলে, ট্রয় যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এবং হোমারের ইলিয়ডে যাঁকে ভীষণ সাহসী যোদ্ধা বলা হয়েছে; যার নামে লেখা হয়েছে গ্রিক কবিতা। ট্রয় যুদ্ধে অ্যাকিলিসের পর দ্বিতীয় সেরা গ্রিক বীর আখ্যাও দেওয়া হয়েছে আয়াক্স দ্য গ্রেটকে। সেই বীরের নাম নিয়েই ১২৩ বছর আগে যাত্রা শুরু করা ক্লাবটি গতকাল রাতে ডাচ কাপে আশ্চর্য পতন দেখল। সেটাও কার কাছে? রূপক অর্থে বলতে পারেন, গ্রিক বীরদের মধ্যে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, সেই হারকিউলিসের কাছে!

কিন্তু বাস্তবের এই হারকিউলিসের সঙ্গে গ্রিক পুরাণের সেই হারকিউলিসের অর্জন, ক্ষমতা ও সামর্থ্যের ব্যবধান আকাশ-পাতাল বললেও কম বলা হয়। এই হারকিউলিসের নাম ইউএসভি হেরকিউলেস। ডাচ উচ্চারণ এমন হলেও নামটা জিউসপুত্রের কাছ থেকে ধার করা, তা না বললেও চলে। তো অপেশাদার এই ডাচ ক্লাবই গতকাল রাতে গ্রিক বীর হারকিউলিসের মতো অসাধ্য সাধন করেছে। শেষ ৩২–এর ম্যাচে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে বিদায় করেছে আয়াক্সকে!

১৪১ বছর আগে যাত্রা শুরু করা ইউএসভি হেরকিউলিসের এই অবিশ্বাস্য জয়ের গভীরতা বোঝা যায় কিছু তথ্যে। ক্লাবটি চতুর্থ বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং এবারের মৌসুমে পয়েন্ট তালিকায় আছে দশম স্থানে। কিন্তু এই ক্লাবই ডেভিড হয়ে কিনা হারিয়ে দিল ডাচ ফুটবলের গোলিয়াথকে! বাইবেলের সেই গল্পে দৈত্য গোলিয়াথের সেই হারের যেমন তুলনা নেই, তেমনি ডাচ কাপে আয়াক্সও এই প্রথম হারল কোনো অপেশাদার দলের কাছে। এই টুর্নামেন্টে এর আগে অপেশাদার দলগুলোর বিপক্ষে ২৯ বারের সাক্ষাতে কখনো হারেনি ইয়োহান ক্রুইফ, মার্কো ফন বাস্তেন, জারি লিটমানেন, ডেনিস বার্গক্যাম্পদের স্মৃতিধন্য এই ক্লাব।

আরও পড়ুন

ম্যাচের ৮২ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল আয়াক্স। শেষ চেষ্টা তাঁরা করেছিল এবং তাতে মিলেছিল আশার ঝলকও। ৮৩ ও ৮৯ মিনিটে আয়াক্সকে গোল এনে দেন ব্রায়ান ব্রোবি ও চুবা আকপম। কিন্তু কপালে হার লেখা থাকলে ঠেকায় কে!

যোগ করা সময়ের ৩ মিনিটে হেরকিউলিসের ম্যাটস গ্রোটেনবার্গের গোলে কপাল পুড়েছে আয়াক্সের। আর তাতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে হেরকিউলিসের কোচ রেনে ফন ডার কোইজের অনুমানও। এ ম্যাচের আগে হেরকিউলিস কোচ তাঁর খেলোয়াড়দের বলেছিলেন, আয়াক্সের বিপক্ষে তাঁদের জেতার সম্ভাবনা মাত্র ২ শতাংশ। সত্যিই ফুটবল কী না পারে!

স্মরণীয় এক জয়ের পর হেরকিউলিসের খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপন
এএফপি

আয়াক্সের সমর্থকেরা অনুযোগ করে বলতে পারেন, হাতি গর্তে পড়লে চামচিকাও লাথি মারে! ১৯৫৬ সালে ডাচ শীর্ষ লিগ চালুর পর থেকে কখনো অবনমনের শিকার না হওয়া আয়াক্সের এবারের মৌসুমটা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। লিগে মৌসুমের শুরুতে অবনমন অঞ্চলে ছিল তারা। এখন পঞ্চম স্থানে উঠে এলেও শীর্ষে থাকা পিএসভি আইন্দহফেনের সঙ্গে ২৩ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে। বাদ পড়েছে ইউরোপা লিগের গ্রুপ পর্ব থেকেও। ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা এই ক্লাব প্রতিযোগিতার গ্রুপ পর্বে ৬ ম্যাচের মাত্র ১টিতে জিতেছিল আয়াক্স। ক্লাবটির এমন দুর্দশা আরও প্রকট হলো ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমের পর ডাচ কাপ থেকে দ্রুততম বিদায়ের মধ্য দিয়ে।

আরও পড়ুন

যদিও আয়াক্স কোচ জন ফন্ত স্কিপ ডাগআউটে বসে নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে অন্যতম বড় এই বিপর্যয় দেখতে পারেননি। ছেলের বিয়ে খেতে তিনি গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। আর এদিকে ঘটেছে সর্বনাশের চূড়ান্ত! আয়াক্সের সহকারী কোচ মিকায়েল ভালকানিসের কাছে হারটি এতটাই অপ্রত্যাশিত যে শুধু বলেছেন, ‘এমন কিছু ঘটা উচিত নয়...এটা খুবই হতাশার। মৌসুমটা খুব কঠিন যাচ্ছে, অনেক কাজ বাকি।’

মৌসুমটা মোটেও ভালো যাচ্ছে না আয়াক্সের
এএফপি

কিন্তু যেটা ঘটেছে—মুদ্রার অপর পিঠে হেরকিউলিসের জন্য সেটাই আবার চিরস্মরণীয় এক অর্জন এবং তাতে বড় অবদান জোড়া গোল করা ২২ বছর বয়সী উইঙ্গার টিম পিয়েতার্সের। ম্যাচ শেষে ইএসপিএনকে বলেছেন, ‘এটা (জয়) বিশ্বে হইচই ফেলে দেবে। আমরা ৬-০ ব্যবধানে হারলে সেটা হতো প্রত্যাশিত ফল। আমার সামনে এখনো পড়াশোনা শেষ করার ডেডলাইন ঝুলছে। তবে বিকালে লাইব্রেরিতেই সেটা শেষ করেছি।’