মেসি–নেইমারকে ছাড়াও যে কারণে উজ্জ্বল পিএসজি

মেসি ও নেইমার যখন পিএসজিতে ছিলেনছবি : রয়টার্স

ফ্রেঞ্চ লিগ ‘আঁ’র শিরোপা তো যখন-তখনই জিতছে পিএসজি। ২০১২-১৩ থেকে ২০২২-২৩; এই ১১ মৌসুমে ৯ বারই ফ্রেঞ্চ লিগ ‘আঁ’র চ্যাম্পিয়ন প্যারিসের ক্লাবটি। তবে একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপার জন্য কী হাপিত্যেশই না করে যাচ্ছেন দলটির কর্মকর্তা আর সমর্থকেরা। এই ১১ মৌসুমে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতায় পিএসজির সেরা সাফল্য ২০১৯ সালের ফাইনাল খেলা।

চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে কত আশা নিয়ে পিএসজি একটি তারকাত্রয়ী দল গড়েছিল ২০২১ সালে। লিওনেল মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পে মিলে তৈরি হয়েছিল এমএনএম–ত্রয়ী। বলা যায়, আক্রমণভাগে সময়ের সবচেয়ে সেরা ত্রয়ী ছিল এটি। কিন্তু সেই ত্রয়ী পিএসজিকে কী উপহার দিল? দুটি লিগ শিরোপা জিতলেও এই ত্রয়ী নিয়ে গত দুই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিয়েছে পিএসজি।

এরপর তো ফুটবল বিশ্বে অনেকেই বলতে শুরু করেন—বিপুল অর্থ ব্যয় করে বড় নাম কিনে যে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা যায় না, সেটা হয়তো বুঝল পিএসজি! ফুটবল বিশ্বের চারদিক থেকে ছুটে আসা এসব হাস্যরস তো ছিলই, এর সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে নেইমারের চোট আর বিশ্বকাপের পর মেসির ম্লান হয়ে থাকাটা ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল পিএসজির সমর্থকদের। ঘরের মাঠের ম্যাচেও তাঁরা মেসি-নেইমারকে দুয়ো দিতে শুরু করেন।

আরও পড়ুন
মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পে, পিএসজি গড়েছিল আক্রমণ ভাগে সময়ের অন্যতম সেরা ত্রয়ী
ছবি: রয়টার্স

এরই একপর্যায়ে মেসি আর নেইমারকে নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়—তাঁরা প্যারিস ছাড়তে চান। এ নিয়ে প্যারিসের রাস্তায়, নেইমারের বাড়ির সামনে পিএসজির সমর্থকদের সে কী তুলকালাম কাণ্ড! কিন্তু প্রথমে মেসি, পরে নেইমার পিএসজি ছাড়লেন। অনেকেই আবার তখন বলতে শুরু করেন—মেসি আর নেইমারকে ছাড়া পিএসজি হয়ে যাবে নখদন্তহীন এক দল।

এমন আলোচনার মধ্যেই নতুন মৌসুম শুরু করে পিএসজি। লিগের প্রথম দুই ম্যাচে লরিয়াঁ ও তুলুজের সঙ্গে ড্র করার পর সেই আলোচনার পালে আরও বাতাস লাগে। কিন্তু এরপর টানা দুই ম্যাচ জিতে ঘুরে দাঁড়ায় পিএসজি। পরের ম্যাচটি নিসের কাছে হারলেও ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ-তে এই মুহূর্তে ১৩ ম্যাচে ৯ জয়, ১ হার ও ৩ ড্রয়ে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে তারা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নিসের পয়েন্ট সমান ম্যাচে ২৯।

চ্যাম্পিয়নস লিগেও দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পথেই আছে লুই এনরিকের পিএসজি। ৪ ম্যাচে ২ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে আছে তারা। সমান ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। তৃতীয় স্থানে থাকা এসি মিলানের পয়েন্ট ৪ ম্যাচে ৫। পিএসজি তাদের পরের ম্যাচটি খেলবে আগামীকাল। ঘরের মাঠে নিউক্যাসলের বিপক্ষে ম্যাচটি জিতলে শেষ ষোলোতে ওঠার পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে পিএসজি। নিউক্যাসলের মাঠে প্রথম লেগের ম্যাচটিতে অবশ্য ৪-১ গোলে হেরেছিল এনরিকের দল।

আরও পড়ুন
সতীর্থদের সঙ্গে গোল উদ্‌যাপনে এমবাপ্পে
ছবি: এএফপি

এরপরও যদি মেসি-নেইমার চলে যাওয়ার পর পিএসজির পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয়, তাহলে কী বলা যায়? মেসি-নেইমারকে ছাড়া উজ্জ্বলই পিএসজি। বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে নাম লেখানোর পর প্যারিসের ক্লাবটির হয়ে দুটি মৌসুম খেলেছেন মেসি। এমন নয় যে এই দুই মৌসুমের সব ম্যাচে মেসি ও নেইমার একসঙ্গে খেলেছেন। এরপরও ওই দুই মৌসুমে ফ্রেঞ্চ লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির মোট ম্যাচ মিলিয়ে যদি পারফরম্যান্সের একটি গ্রাফ করা হয়, কী পাওয়া যাবে সেখানে?

২০২১-২২ মৌসুমে ফ্রেঞ্চ লিগ ‘আঁ’ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে পিএসজি ম্যাচ খেলেছে ৪৬টি। এর মধ্যে জিতেছে ৩০ ম্যাচে। জয়ের শতকরা হার ৬৫.২২। এ মৌসুমে পিএসজি হেরেছে ৬ ম্যাচ। সেদিক বিবেচনায় হার ১৩ শতাংশের চেয়ে একটু বেশি। ২০২২-২৩ মৌসুমেও এই দুই প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৬ ম্যাচ খেলেছে পিএসজি। এবার জয় পেয়েছে ৩১টি, শতকরা হার ৬৭.৩৯। এবার হারও একটু বেশি, ৯টি-১৯.৫৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন
মেসি ও নেইমার না থাকায় পিএসজিতে এখন ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের খেলোয়াড় মাত্র একজন—এমবাপ্পে। ব্যক্তি-ঝলক কমে যাওয়ায় এনরিকেকে নির্ভর করতে হচ্ছে দলীয় খেলার ওপর। সেটা বেশ ভালোই কাজে লাগছে।

এখন যদি চলতি মৌসুমের হিসাব করা হয়, তাহলে পিএসজি লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত খেলেছে ১৭ ম্যাচ। জিতেছে ১১টি। শতকরা হার ৬৪.৭১। এর বিপরীতে পিএসজি হেরেছে ৩ ম্যাচে-১৭.৬৫ শতাংশ। নিশ্চিত করেই মৌসুম এগোতে এগোতে এটা এদিক-সেদিক হবে। তবে মেসি-নেইমারকে ছাড়া কিলিয়ান এমবাপ্পের নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত পিএসজিকে উজ্জ্বলই বলা যায়।

মেসি-নেইমারকে ছাড়াও কীভাবে পিএসজি এত ভালো খেলছে—এর কারণ বিশ্লেষণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন অনেক ফুটবল বিশ্লেষক। বেশির ভাগেরই কথা একটা—মেসি ও নেইমার চলে যাওয়ায় কিছু খেলোয়াড় মাঠে আরও বেশি স্বাধীনতা পাচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের মেলে ধরার চেষ্টা করছেন। এর প্রভাবই পড়ছে দলের সামগ্রিক খেলায়। এ ছাড়া মেসি ও নেইমার না থাকায় পিএসজিতে এখন ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের খেলোয়াড় মাত্র একজন—এমবাপ্পে। ব্যক্তি-ঝলক কমে যাওয়ায় এনরিকেকে নির্ভর করতে হচ্ছে দলীয় খেলার ওপর। সেটা বেশ ভালোই কাজে লাগছে।

এখন দেখার বিষয় পিএসজির মূল যে মনোযোগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ, সেখানে মেসি-নেইমারকে ছাড়া শেষ পর্যন্ত কী করতে পারে। এবার শেষ ষোলোর বাধা পেরোতে পারলেই একদিক থেকে সফল হবেন এমবাপ্পে আর তাঁর সতীর্থেরা। কারণ, মেসি-নেইমারকে নিয়ে গত দুই মৌসুম যে শেষ ষোলোর গণ্ডিতেই আটকে ছিল পিএসজি!

আরও পড়ুন