এই দশকে লা মাসিয়ার সেরা ছয় ফুটবলার

ফুটবল ইতিহাসে, কিংবা আসলে খেলাধুলার ইতিহাসেই সবচেয়ে বিখ্যাত একাডেমি কোনটা? উত্তর: সম্ভবত বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়া একাডেমি। এই একাডেমি থেকে শুধু যুগে যুগে বার্সেলোনার সেরা ফুটবলাররাই উঠে আসেননি, তাঁরা হয়েছেন ফুটবল ইতিহাসেরও অন্যতম সেরা।

এখন পর্যন্ত, লা মাসিয়াই একমাত্র একাডেমি, যেখান থেকে উঠে আসা তিন ফুটবলার একসঙ্গে ব্যালন ডি’অরের মঞ্চে সেরা তিন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। ২০১০ সালে লা মাসিয়ার ইতিহাসের তিন সেরা লিওনেল মেসি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও জাভি হার্নান্দেজ ছিলেন সেই মঞ্চে। পুরস্কারটা অবশ্য ঘরে তুলেছিলেন মেসি।

২০২০-এর পর বার্সা চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। সেই অন্ধকার থেকে আবার দলটা আলোর মুখ দেখেছে লা মাসিয়ার ছেলেদের কৃতিত্বেই। নতুন মৌসুমের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতেও দেখা যাচ্ছে, নতুন একঝাঁক প্রতিভাবান তরুণ উঠে আসছে একাডেমি থেকে।

চলুন জানা যাক, চলতি দশকের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা এমন ছয় প্রতিভার গল্প।

আরও পড়ুন

মার্ক কাসাদো

মার্ক কাসাদো
এএফপি

বার্সেলোনায় অভিষেক: নভেম্বর ২০২২

গত মৌসুমে যখন বার্সেলোনার মিডফিল্ডে নতুন একজন খেলোয়াড় লাগবে বলে চারদিক থেকে আওয়াজ উঠেছিল, নতুন কোচ ফ্লিক সেসব কানে না নিয়ে বেছে নেন বার্সা আতলেতিকের (বার্সেলোনা বি দল) সাবেক অধিনায়ক মার্ক কাসাদোকে। গাভি, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং আর বার্নাল চোটে পড়লে মূল দলে জায়গা পান কাসাদো। পেদ্রির পাশে খেলে নজর কাড়েন সবার।

কাসাদো একেবারে লা মাসিয়ার প্রথাগত মিডফিল্ডার। ঠাসা জায়গায় বল পেলেও ঘাবড়ে যান না, বরং দুর্দান্ত পাসের জায়গা বের করে নিতে পারেন। বল পায়ে আত্মবিশ্বাসী, অবিরাম দৌড়াতে পারেন। কখন কোথায় থাকতে হবে জানেন। ঠিক যেন সের্হিও বুস্কেতসের ছায়া। এত ভালো খেলেছেন যে স্পেনের জাতীয় দলেও ডাক পেয়ে গেছেন এরই মধ্যে। বোঝাই যাচ্ছে, কাসাদো বার্সার মিডফিল্ডে ভবিষ্যতে সবচেয়ে বড় আস্থা হতে চলেছেন।

ফারমিন লোপেজ

ফারমিন লোপেজ
এএফপি

বার্সেলোনায় অভিষেক: আগস্ট ২০২৩

যেন লা মাসিয়ার ছাঁচে গড়ে ওঠা আধুনিক যুগের ‘নাম্বার টেন। কৌশলী পাস, জায়গা বুঝে ঢুকে যাওয়া আর শট নেওয়ার টাইমিং—সবই দারুণ ফারমিন লোপেজের। কোচ হিসেবে জাভির শেষ মৌসুমে বার্সেলোনার নিয়মিত একাদশে জায়গা করে নেন। এরপর ২০২৪ ইউরোতে স্পেন দলে ডাক পেলেও মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। কিন্তু এক মাস পর অলিম্পিকে ৬ গোল করে, ৬ গোল করিয়ে এবং টুর্নামেন্ট–সেরা হয়েই স্পেনকে এনে দেন সোনা।

ইংল্যান্ডের অনেক ক্লাবই আগ্রহ দেখালেও ফারমিন থেকে গেছেন বার্সায়। যদি নিয়মিত খেলার সুযোগ পান, তাহলে শীর্ষ প্লে–মেকার হয়ে ওঠা সময়ের ব্যাপার।

আরও পড়ুন

আলেহান্দ্রো বালদে

আলেহান্দ্রো বালদে
এএফপি

বার্সেলোনায় অভিষেক: সেপ্টেম্বর ২০২১

জর্দি আলবার জায়গা কেউ কি নিতে পারবে আদৌ? প্রশ্নটা ছিল এমনই কঠিন। কিন্তু উত্তরটা বার্সার ঘরেই ছিল—আলেহান্দ্রো বালদে।

প্রথম ম্যাচ থেকেই মনে হচ্ছিল, আধুনিক ফুলব্যাক হিসেবে যা যা লাগে, এই ছেলেটার মধ্যে সবই আছে। গতিময়, ওপর থেকে নিচ পুরো লেফট উইং কাভার করেন তিনি। রক্ষণেও ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছেন।

১৯ বছর বয়সেই বিশ্বকাপে খেলেছেন। পরে চোট তাঁকে কিছুদিন বাইরে রাখলেও ২০২৪–২৫ মৌসুমে আবার সেরা ফর্মে ফিরেছেন। রাফিনিয়ার সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া বার্সার আক্রমণকে করেছে আরও শাণিত।

২১ বছর বয়সেই বিশ্বসেরা লেফট ব্যাকদের একজন এবং এখনো তাঁর অনেক কিছু দেওয়ার বাকি।

পাউ কুবারসি

পাউ কুবারসি
রয়টার্স

বার্সেলোনায় অভিষেক: জানুয়ারি ২০২৪

খুব সাহসী একটা মন্তব্য করে ফেলা যায় এখনই—জেরার্দ পিকের পর বার্সা কুবারসির মতো এমন প্রতিভাবান সেন্টারব্যাক আর পায়নি।

২০২৩–২৪ মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে হঠাৎ করেই উঠে এলেন কুবারসি। এক বছরেরও কম সময়ে তিনি হয়ে উঠেছেন বার্সার রক্ষণভাগের অন্যতম স্তম্ভ। মাত্র ১৮ বছর বয়স, খেলা দেখে অবশ্য মনে হয় অনেক অভিজ্ঞ। বল দখলে রাখতে, সঠিক জায়গায় দাঁড়াতে কিংবা আক্রমণ গড়তে—সব জায়গায় আত্মবিশ্বাসী। লম্বা পাস দেওয়ার দক্ষতায় ইতিমধ্যেই ইউরোপের অন্যতম সেরাদের একজন।

স্পেনের জাতীয় দলে জায়গা নিয়মিত হয়ে গেছে এরই মধ্যে। আগামী এক দশক স্পেন ও বার্সার রক্ষণভাগ তিনিই সামলাবেন।

গাভি

গাভি
এএফপি

বার্সেলোনা অভিষেক: আগস্ট ২০২১

মেসি-পরবর্তী প্রথম মৌসুমে বার্সা যখন ছন্নছাড়া, তখনই আলো হয়ে আসেন এক তরুণ—গাভি।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে শিরোনামে চলে আসেন। সাহসী, লড়াকু, বলের জন্য যুদ্ধ করে যান শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। আর বল পায়ে দক্ষতায় তো একেবারে ‘টপ ক্লাস’।

মাঝমাঠে খেলার ছন্দ ধরিয়ে দিতে পারেন তিনি। প্রথম টাচে বল নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিখুঁত পাস দেওয়া—সবকিছুতেই অব্যর্থ। ২০২২ বিশ্বকাপে গোল করেছেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে। ওই বছরই কেপা ট্রফি জিতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তরুণদের মধ্যে তিনিই সেরা। ২০২৩ সালে গুরুতর চোটে পড়লেও ফিরে এসে আবার নিজের সেরা রূপে দেখা দিতে শুরু করেছেন।

লামিনে ইয়ামাল

লামিনে ইয়ামাল
এএফপি

বার্সেলোনা অভিষেক: এপ্রিল ২০২৩

লা মাসিয়ার ইতিহাসে মেসির পর সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। এই দশকে ফুটবলেরই সবচেয়ে বড় আবিষ্কার বলা যায় ইয়ামালকে।

১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যা করেছেন, তা ইতিহাসে আর কেউ করেননি। তাঁর বাঁ পায়ের জাদু, বল নিয়ে এগোনোর ধাঁচ, গোল বা পাস—সবই যেন অন্য জগতের।

২০২৪–২৫ মৌসুমে তিনি যেভাবে একের পর এক ম্যাচে চমকে দিয়েছেন, তা আর কেউ পারেনি। এই বয়সেই বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের তালিকায় ঢুকে গেছেন। ব্যালন ডি’অরের অন্যতম দাবিদারও। বার্সা ও স্পেন—দুই দলেরই সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক। প্রতিপক্ষরা তাঁকে আটকাতে মরিয়া, তিনিই ওদের জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক।

লামিনে ইয়ামাল শুধু প্রতিভাবান নন, ভবিষ্যতের কিংবদন্তি।