প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে মতামত প্রকাশ করা যাবে না

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনছবি: শামসুল হক

কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) ফুটবলের বৈশ্বিক সংস্থা ফিফা ও সরকারের দেওয়া অর্থ নিয়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধান করে চার মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে গত ১৫ মে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা অথবা চার মাস যেটি আগে হয়—এই সময় পর্যন্ত অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো ধরনের মতামত প্রকাশ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার রুলসহ এ আদেশ দেন। তবে আদালত বলেছেন, কোনো নাগরিকের কাছে অনুসন্ধান–সম্পর্কিত তথ্য থাকলে, তা দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের সহায়তা করার স্বাধীনতা থাকবে।

আরও পড়ুন

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে থাকা ‘অসত্য’ ও ‘মানহানিকর’ বক্তব্য অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে গত সোমবার কাজী সালাউদ্দিন আবেদনকারী হয়ে রিটটি করেন। প্রচারমাধ্যমে তাঁকে জড়িয়ে সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদনের সূত্র ধরে করা এ রিটে স্বরাষ্ট্রসচিব, তথ্য ও সম্প্রচারসচিব, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান, একাত্তর টিভি, কয়েকজন সাংবাদিক ও ক্রীড়া সংগঠন এবং আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে বিবাদী করা হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ মামুন। একাত্তর টিভির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী লিটন আহমেদ। বিবাদী হিসেবে থাকা আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক নিজে শুনানিতে অংশ নেন।

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান চেয়ে গত মাসে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৫ মে হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

আরও পড়ুন
সংবিধানের ১০২ ও ৪৪ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিজের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন
ছবি: প্রথম আলো

রুলে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ বাফুফের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধান করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা বা ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

একই সঙ্গে বাফুফেতে ফিফা ও সরকারের দেওয়া অর্থ নিয়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে যুব ও ক্রীড়াসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এবিআর) চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৭ আগস্ট দিন ধার্য রয়েছে।

আরও পড়ুন

কাজী সালাউদ্দিনের করা রিটের শুনানিতে ১৫ মে হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চের দেওয়া আদেশের বিষয়টি তুলে ধরেছেন বলে জানান আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি (কাজী সালাউদ্দিন) বলেছেন, মানহানিকর কথা যেন আমরা না বলি। আমরা বলেছি, সত্য কথা বলেছি। আদালত বলেছেন, মানি লন্ডারিং বিষয়ে যে অনুসন্ধান করছে, এ বিষয়ে আপনারা কোনো মতামত দিতে পারবেন না।’

কাজী সালাউদ্দিনের আইনজীবী মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ মামুন প্রথম আলোকে বলেন, কাজী সালাউদ্দিনের প্রার্থনা অনুসারে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফিফার দেওয়া অর্থ নিয়ে বাফুফের বিরুদ্ধে এর আগে একটি রিট করা হয়। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মে হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল দিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেন। চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই চার মাস অথবা অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল—যেটি আগে হয় সে সময় পর্যন্ত অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিবাদীরা কোনো মতামত দিতে পারবেন না বলে আজ আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।