পরশু রাতে বাফুফের বিশেষ কমিটির প্রথম সভাতেই ঠিক হয়েছিল, সাবিনা খাতুনদের ডাকা হবে কমিটির সামনে। ১৮ জন বিদ্রোহী খেলোয়াড়কে আলাদাভাবে চিঠিও দেওয়া হয় তাৎক্ষণিকভাবে। গতকাল বিকেল থেকে তাই মতিঝিল বাফুফে ভবনে সাংবাদিকদের ভিড়। পিটার বাটলার কোচ থাকলে জাতীয় দলে তাঁরা আর খেলবেন না এবং গণ–অবসরে যাবেন বলে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে ঘোষণা দেন সাবিনারা।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বাফুফে ভবনে বাফুফের বিশেষ কমিটি বিদ্রোহী মেয়েদের কথা শুনেছে। তিন ঘণ্টার বেশি সময়ে শুনেছে সাতজনের কথা। প্রথম ধাপে সাগরিকা, সাথি বিশ্বাস। এরপর মাতসুসিমা সুমাইয়া, শিউলি আজিম, মনিকা চাকমা, সানজিদা আক্তার ও অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। সবার কথা শোনা হয়েছে আলাদাভাবে। একেকজনের সঙ্গে ১৫-২০ মিনিট করে কথা বলে বলেছে কমিটি।
সবার শেষে ৯টা ২০ মিনিটে বাফুফে ভবনের দোতলায় সম্মেলনকক্ষে যান সাবিনা। তুলনামূলক কম সময় ছিলেন সাবিনা। সাংবাদমাধ্যম অপেক্ষায় ছিল তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য। কিন্তু সাবিনা কোনো কথা বলেননি। বাফুফে ভবনে দোতলা থেকে সোজা ভবনের চারতলায় চলে যান। কোচের অনুশীলন বর্জন করলেও তাঁরা সেখানেই আছেন।
সূত্রের দেওয়া তথ্য, কমিটি মেয়েদের কাছে জানতে চায়, গণমাধ্যমে বাংলায় চিঠি দিলেও বাফুফে সভাপতির কাছে ২৯ জানুয়ারি দেওয়া চিঠিটি ইংরেজিতে কেন? আর এটা কারই-বা লেখা। প্রায় সবাইকেই এই প্রশ্ন করা হয়। ইংরেজিতে চিঠি লেখার ব্যাপারে সবাই মাতসুসিমা সুমাইয়ার কথা বলেন।
জাপানে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই তরুণীও কমিটিকে জানান, সতীর্থদের হয়ে তিনিই চিঠিটি লিখেছেন। সুমাইয়া ইংরেজিতে বেশ দক্ষ এবং কমিটির সামনে বেশির ভাগ কথা ইংরেজিতেই বলেন বলে জানা গেছে। কমিটিও চিঠির ভাষার সঙ্গে তাঁর ইংরেজি দক্ষতার মিল পেয়েছে।
জানা গেছে, মেয়েরা চিঠিতে যা লিখেছেন, সেটির পাশাপাশি সাফ পর্যন্ত বাটলারের ছয় মাসের দায়িত্ব পালনে কী কী সমস্যায় তাঁরা পড়েছেন, সেসব তুলে ধরেন। কোচের একাদশ নির্বাচন, সিনিয়রদের প্রতি যত্নশীল না হওয়া, বিভিন্ন সময়ে খারাপ আচরণ করা ইত্যাদি বিষয়ও এসেছে। কমিটি আলাদাভাবে সবার কাছে জানতে চেয়েছে, ‘আপনার সঙ্গে কী করেছে কোচ? ভয় পাওয়ার কিছু নেই, নিশ্চিন্তে সব বলুন।’ মেয়েরা তাঁদের সব ক্ষোভের কথাই বলেছেন।
সাত সদস্যের কমিটিতে বাফুফের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, এমন তিনজন সদস্যই মূলত প্রশ্ন করেছেন মেয়েদের। বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে থাকা চারজন শুনেছেন বেশি। তাঁরা যেহেতু মেয়েদের সঙ্গে নানাভাবে পরিচিত, তাই মেয়েদের প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে নিজেদের একটু গুটিয়ে রেখেছেন, যাতে স্বার্থের সংঘাত না হয়। যেহেতু এই মেয়েদের অনেকেই নির্বাহী কমিটির অনেকের সঙ্গেই নানাভাবে সম্পৃক্ত।
মেয়েদের সঙ্গে কথা বলা শেষে বিশেষ কমিটির প্রধান বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ১৮ জনের মধ্যে বাকি ১১ জনের কথা কমিটি আজ শুনবে। প্রথম দিনে মেয়েরা কী বলেছেন, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ইমরুল। কোচ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, বিষয়টি টেকনিক্যাল।
বাফুফের এই বিশেষ কমিটিতে কয়েকজন থাকলে, সেটি আরও যৌক্তিক ও শক্তিশালী হতো কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন হলে ইমরুল বলেন, ‘বাফুফের জরুরি কমিটির সভায় সভাপতি এই কমিটি গঠন করেছেন। আমাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক তারকা ফুটবলার ও লাইসেন্সধারী কোচ (ছাইদ হাসান কানন)।’
অক্টোবরে সাফের শিরোপা ধরে রেখে নেপাল থেকে ফিরেছিলেন মেয়েরা। কিন্তু এরপর মেয়েদের সঙ্গে এখনো বাফুফে চুক্তি নবায়ন করেনি, বাফুফে ঘোষিত দেড় কোটি টাকা বোনাসও দেয়নি। এসব নিয়ে প্রশ্ন করলে ইমরুল বলেন, ‘মেয়েরা যে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, তার মধ্যে এগুলো নেই। মেয়েদের লিখিত অভিযোগের ওপরই আমরা কাজ করছি।’
সাফ জেতার তিন মাসের মধ্যে কেন মেয়েদের এমন চরম অবস্থানে যেতে হলো? এই প্রশ্নে ইমরুলের উত্তর, ‘পেছনের কারণটা খুঁজে বের করতেই কাজ করছে কমিটি।’
এটা জানাই ছিল যে মেয়েদের কথা শুনেই কোনো রায় দিয়ে দেবে না কমিটি। কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গেও তারা কথা বলবে। কথা বলবে নারী কমিটি ও কোচিং স্টাফদের সঙ্গেও। সবার সঙ্গে কথা বলেই আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে একটা প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করবে কমিটি।