সৌদি আরবে মেসির কী কাজ, কত টাকা দেয় সৌদি সরকার

দুই দিনের সৌদি আরব সফরে ছেলের সঙ্গে মেসিছবি: সৌদি পর্যটনমন্ত্রীর টুইটার থেকে নেওয়া

দেড় যুগের পেশাদার ক্যারিয়ারে এই প্রথম শৃঙ্খলার কারণে নিষিদ্ধ হয়েছেন লিওনেল মেসি। অনুমতি ছাড়া সৌদি আরবে যাওয়ায় তাঁকে দুই সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পিএসজি। ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মেসিকে সৌদি সফরের জন্য ছুটি চাইলে শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

শর্ত ছিল, রোববার পিএসজি লঁরার বিপক্ষে জিতলে সবাইকে দুই দিনের ছুটি দেওয়া হবে, নয়তো পরদিন অনুশীলন করতে হবে। কিন্তু ম্যাচটিতে ৩-১ গোলে হেরে যায় পিএসজি। শর্ত অনুযায়ী সোমবার অনুশীলন করা বাধ্যতামূলক হলেও সকালেই সপরিবারে সৌদি আরবে রওনা দেন মেসি। যেটিকে শৃঙ্খলাভঙ্গ বিবেচনা করে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসজি।

প্রশ্ন হচ্ছে, সৌদি আরবে মেসির এমন কী কাজ যে অনুমতি ছাড়াই চলে গেলেন? বিনিময়ে তাঁকে কত টাকাই–বা দেওয়া হয়?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া মেসি ও সৌদি আরবের পর্যটনমন্ত্রীর পোস্ট বলছে, গত দুই দিনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মেসি। সঙ্গে স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো ও তিন সন্তানও আছে।

গত বছরের মে মাসে সৌদি আরবের পর্যটনদূত হন মেসি। মূলত এরই অংশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে গেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।

সপরিবার সৌদি আরবে ঘুরে বেড়িয়েছেন মেসি
ছবি: সৌদি পর্যটনমন্ত্রীর টুইটার থেকে নেওয়া

অনেকের কৌতূহল, পর্যটনদূত হিসেবে সৌদি সরকারের কাছ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন মেসি, যে কারণে পিএসজির অনুমতি না থাকার পরও সেখানে যেতে এত মরিয়া তিনি?

গত বছর মেসিকে পর্যটনদূত হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন সৌদি আরবের পর্যটনমন্ত্রী আহমেদ আল-খাতেব। তবে দুই পক্ষের মধ্যে কত দিনের চুক্তি হয়েছে বা দূত হিসেবে কী পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে—এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম লা ন্যাসিওন বলছে, দূত হওয়ার খবরটি ছাড়া মেসি-সৌদি সরকার চুক্তির পুরোটাই গোপন রাখা হয়েছে। এর একটি কারণ সৌদি রাজতন্ত্র, অপরটি হচ্ছে মেসির বাণিজ্যিক চুক্তির তথ্য সব সময়ই অপ্রকাশ্য রাখা হয়ে থাকে। তবে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন তথ্য বিবেচনায়, মেসি-সৌদি সরকার চুক্তিটির আর্থিক মূল্য কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে ধারণা করা যায়।

সন্তানদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় মেসি
ছবি: সৌদি পর্যটনমন্ত্রীর টুইটার থেকে নেওয়া

২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের দ্য টেলিগ্রাফের এক খবরে বলা হয়, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে সৌদি আরবের দূত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য প্রতিবছর তাঁকে ৬০ লাখ মার্কিন ডলার দেওয়া হবে। তবে পর্তুগিজ তারকা ওই সময় প্রস্তাবটি গ্রহণ করেননি।

কয়েকটি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দ্য অ্যাথলেটিক জানিয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে মেসির পর্যটন চুক্তির আর্থিক মূল্য রোনালদোকে দেওয়া প্রস্তাবের চেয়ে সম্ভবত পাঁচ গুণ বেশি।

লা ন্যাসিওনের মতে মেসির বিপুল অঙ্কের অর্থ পাওয়ার কারণ দুটি। প্রথমত, রোনালদোর তুলনায় বয়স কম হওয়ায় মেসি মাঠের ফুটবলে বেশি সময় থাকার সম্ভাবনা আছে। দ্বিতীয়ত, সৌদি সরকারের সঙ্গে চুক্তির সিদ্ধান্তটা মেসি-মানের তারকাদের জন্য সহজ কিছু নয়।

রোকুজ্জোর সঙ্গে মেসি
ছবি: সৌদি পর্যটনমন্ত্রীর টুইটার থেকে নেওয়া

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতেই টেলিগ্রাফ জানায়, সৌদি পর্যটন বোর্ডের তরফ থেকে মেসিকে দূত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সে সময় সৌদি রাজতন্ত্রের নির্যাতনের শিকার হওয়া একদল ব্যক্তি মানবাধিকার সংস্থা গ্র্যান্ট লিবার্টির মাধ্যমে মেসির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে তাঁকে এসব বিষয়ে জড়াতে নিষেধ করেছিলেন।

মানবাধিকার লঙ্ঘনে পরোক্ষ সহযোগিতার বদনাম হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও সৌদির পর্যটন–দূত হন মেসি। যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইলের খবর অনুসারে, টাকার অঙ্কটা বছরে ৩ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।