১১২ মিনিট পর্যন্ত স্কোরলাইন ১-১। ১১৩ মিনিটে গোল করে বসুন্ধরা কিংসকে ফাইনালের টিকিট উপহার দেন ইনসান হোসেন। গতকাল ফেডারেশন কাপে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি এবং বসুন্ধরা কিংসের মধ্যে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচটি যদি এভাবে শেষ হতো তাহলে কোনো কথাই হতো না। কিন্তু দুই দলের খেলোয়াড়দের হট্টগোলের কারণে খেলা বন্ধ থাকা, এরপর পেনাল্টি–বিতর্ক ম্যাচ শেষে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রহমতগঞ্জের সভাপতি হাজী টিপু সুলতান আঙুল তুলেছেন বসুন্ধরা কিংসের প্রতি। ভিন্ন কিছু ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কাও ছিল তাঁর। আজ প্রথম আলোকে টিপু সুলতান বলেছেন, ‘এমন কিছু তারা (বসুন্ধরা কিংস) ঘটাতে পারে, আমাদের আগেই মনে হয়েছিল।’
কিংস অ্যারেনায় ম্যাচের ১২৩ মিনিটে ঘানার মামুদ ওশিকে কিংসের চন্দন রায় বক্সে ফেলে দিলে পেনাল্টির আবেদন করে রহমতগঞ্জ। কিন্তু বিষয়টি এড়িয়ে যান রেফারি জালাল উদ্দিন। তাতে আর ম্যাচে ফেরা হয়নি কামাল বাবুর দলের। পরে সেই ফাউলের ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। রহমতগঞ্জও তাদের ফেসবুক পেজে সেই ভিডিও শেয়ার করে, যা নিয়ে ফুটবল অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় বইছে।
রহমতগঞ্জের সভাপতি রেফারির এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে ম্যাচ ছিনতাই হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘তাঁরা রীতিমতো ম্যাচটা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। এত টাকাপয়সা খরচ করার ফল যদি এভাবে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে কীভাবে উন্নতিটা হবে। ফুটবল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে রেফারিদের এমন ভুল-পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের কারণে।’
তবে রেফারি জালাল উদ্দিন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি পর্তুগালের কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর উদাহরণ টেনে বলেন এটা ফাউল ধরার মতো ছিল না, ‘আমি সব দেখেছি। আপনি বলের জন্য পা বাড়িয়েছেন, পরে আমি যদি আপনার পায়ের সাথে পা লাগিয়ে পড়ে যাই, তাহলে কি ফাউল ধরা যাবে। আপনার মনে আছে কি না, রোনালদোকে এমন একটা ট্যাকলের পর ফাউল দেননি রেফারি।’ কোন ম্যাচে রোনালদোকে এভাবে ট্যাকল করা হয়েছিল, সেটা স্পষ্ট করে বলেননি জালাল উদ্দিন, ‘তাদের একটা ম্যাচে। যেটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল...এ রকমই তো!’
রেফারির এমন ব্যাখ্যা শুনে অবাক রহমতগঞ্জের মিডিয়া ম্যানেজার ইকবাল উদ্দিন, ‘ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এটা পেনাল্টি ছিল। আমরা রেফারিকে বলার পর তিনি বলছিলেন কিছু হয়নি। এখন যদি তিনি বলেন আমাদের ফুটবলার পা লাগিয়ে পড়ে গেছে, তাহলে আর কী বলব।’
এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরা কিংস ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের মধ্যকার ম্যাচে রেফারি জালালের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে তোলপাড় চলে ফুটবল অঙ্গনে। সেই সিদ্ধান্তের ভিডিও পর্যবেক্ষণের জন্য ফিফায় পর্যন্ত পাঠিয়েছিল বাফুফে।
ম্যাচে দুই দলের খেলোয়াড়দের হাতাহাতি এবং রহমতগঞ্জ গোলকিপার আহসান হাবিবকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ায় খেলা প্রায় ৫ মিনিট বন্ধ ছিল। দর্শকদের এমন আচরণেও ক্ষিপ্ত রহমতগঞ্জের সভাপতি, ‘তাদের দর্শকেরা আমাদের গোলকিপারকে পর্যন্ত ইটপাটকেল মেরেছে। পোস্টের পেছনে জটলা বেঁধে তাঁরা কটু কথা বলেছে। কীভাবে আমাদের খেলোয়াড়দের মনঃসংযোগ নষ্ট করা যায়, সেই চেষ্টাটাই করেছে তাঁরা। এভাবে তো ফুটবল খেলা যায় না।’
গত নভেম্বরে কিংস অ্যারেনায় মোহামেডান ও কিংসের ম্যাচেও অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনার সাক্ষী হয় দেশের ফুটবল। চ্যালেঞ্জ কাপের সেই ম্যাচে কিংসের একদল দর্শক মাঠে ‘স্মোক ফ্লেয়ার’ নিক্ষেপ করেন। এগিয়ে থাকা মোহামেডান ম্যাচ হেরে কাঠগড়ায় তোলে দর্শকদের। এরপর ১২ এপ্রিল প্রিমিয়ার লিগে কিংসের মুখোমুখি হওয়ার আগে পুরোনো ঘটনা বাফুফেকে মনে করিয়ে দেয় মোহামেডান। যার পরিপ্রেক্ষিতে কিংস অ্যারেনার নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিল ফুটবল ফেডারেশন।
২২ এপ্রিল ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ভালেরিও তিতার দলের প্রতিপক্ষ আবাহনী লিমিটেড। প্রথম কোয়ালিফায়ারে যাদের কাছে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হেরেছিল কিংস। রহমতগঞ্জের সঙ্গে যা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি চায় না আবাহনী। ক্লাবের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপু বলেছেন, রেফারি কারও পক্ষে কাজ করুক, সেটা একদমই তাদের কাম্য নয়, ‘আমরা চাই রেফারি সুন্দরভাবে সব সিদ্ধান্ত দেবেন এবং তাঁর সিদ্ধান্ত অবশ্যই সঠিক হতে হবে। রেফারি এমন কিছু করবেন না, যাতে একটা দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’