‘নিষিদ্ধ’ ব্ল্যাটারই ইরানকে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধের দাবি তুললেন

দুর্নীতির দায়ে ২০১৫ সালে নিষিদ্ধ হন ব্ল্যাটারছবি: রয়টার্স

হিজাব না পরে তেহরানে ঘুরতে যাওয়া তরুণী মাসা আমিনিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর ফুঁসে ওঠে ইরানের তরুণসমাজ। দেশজুড়ে চলছে হিজাববিরোধী বিক্ষোভ, সরকারের পতন চেয়ে শুরু হয়েছে আন্দোলন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইরান সরকার সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হচ্ছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অন্তত ৩১৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ১৫ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক হাজার বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে আদালতে শুরু হয়েছে বিচার।

আরও পড়ুন

প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির এমন ‘স্বেচ্ছাচারিতাকে’ মানবতাবিরোধী বলছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তবু ইরানকে ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার অনুমতি দিয়েছে ফিফা। অথচ ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে সব ধরনের খেলা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে রাশিয়াকে। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দুই দেশের ব্যাপারে দুই রকম নীতি অনুসরণ করছে ফিফা।

তবে সেপ ব্ল্যাটার মনে করেন, ইরানকে কাতার বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত। সুইস ট্যাবলয়েড ব্লিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফিফার সাবেক সভাপতি বলেছেন, ‘ইরান সরকারের বর্বরতা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে দাবি জানাই, ওদেরকে যেন ফুটবল ও পুরো ক্রীড়া বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়।’

বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ আছে সেপ ব্ল্যাটারের বিরুদ্ধে।
ছবি: ফিফা

ইরান ইস্যুতে ফিফার বর্তমান সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ৮৬ বছর বয়সী ব্ল্যাটার, ‘বুঝতে পারছি না, কেন সে (ইনফান্তিনো) ইরানের ব্যাপারে তার অবস্থান পরিষ্কার করছে না।’

মারা যাওয়া নির্মাণশ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়েও ইনফান্তিনো চাপে আছেন বলে মনে করেন ব্ল্যাটার, ‘অবকাঠামো ও স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে গিয়ে যে সব শ্রমিক মারা গেছে, তাদের জন্য তহবিল গঠন করতে গিয়ে সে বেশ ঝামেলায় পড়েছে। ফিফায় কোনো সাহসী ব্যক্তি থেকে থাকলে তার এসব নিয়ে কাজ করা উচিত। ইনফান্তিনোর তো সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতোও সাহস নেই।’

আরও পড়ুন

কাতার বিশ্বকাপ থেকে ইরানকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গত মাসে ফিফাকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠিয়েছেন খোদ ইরানের ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। স্পেনের আইনজীবী ফার্ম রুইজ-হুয়ের্তা অ্যান্ড ক্রেসপোর মাধ্যমে এই চিঠি পেয়েছে ফিফা।

ইরানের বেশ কয়েকজন ফুটবলার এবং অন্য অ্যাথলেটরা তাঁদের দেশের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে নিষিদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন ফিফার কাছে। তবে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখনো সে চিঠির জবাব না দেওয়ার অর্থ হলো, কাতার বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে ইরান।

ইরান জাতীয় ফুটবল দল।
ছবি: রয়টার্স

বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ আছে সেপ ব্ল্যাটারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে মামলা চলেছে দীর্ঘদিন। গত জুনে ব্ল্যাটার অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেও এখনো তিনি সব ধরনের ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ।

আরও পড়ুন

কাতারকে ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক হওয়ার সুযোগ দিয়ে ভুল করেছেন বলে কদিন আগে অনুশোচনা ধরেছে ব্ল্যাটারের কণ্ঠে, ‘এটা (কাতার) খুবই ছোট দেশ। ফুটবল এবং বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য উপযুক্ত নয়। খুব বাজে সিদ্ধান্ত ছিল। সেই সময়ের সভাপতি হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমিই দায়ী।’

টুর্নামেন্ট শুরুর সপ্তাহখানেক আগেও এতটা জলঘোলা দেখেই বোঝা যায়, কাতার বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ক্রীড়া আসর। এখন বিশ্বকাপটা ভালোয় ভালোয় হলেই হয়!