কেইন, এমবাপ্পে নাকি হলান্ড: এই মৌসুম কার

চলতি মৌসুমটা দারুণভাবে শুরু করেছেন কেইন, এমবাপ্পে ও হলান্ডইনস্টাগ্রাম

ভোরের সূর্য নাকি দিনের পূর্বাভাস দেয়। যদিও সেই পূর্বাভাস সব সময় ঠিক হয় না। রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে বিকেল গড়িয়ে নেমে আসতে পারে ঝুম বৃষ্টি। তার ওপর সাম্প্রতিক সময়ে আবহাওয়ার মেজাজও বেশ চঞ্চল—ক্ষণে রোদ, ক্ষণে মেঘ। ফলে ভোরের আলো দিন শেষে একই রকম উজ্জ্বল থাকে না সব সময়। ফুটবলেও গল্পটা প্রায় একই। মৌসুমের শুরুতে যে দল বা খেলোয়াড় ঝলমলে ছাপ রাখেন, শেষ পর্যন্ত সেই দ্যুতি টেকে না অনেক সময়।

এর পেছনে কারণও কম নয়—ছন্দ ধরে রাখা, চোট, দলীয় পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে অনেক কিছুই প্রভাব ফেলে। তবু একটা কথা ঠিক, শুরুটা পুরো মৌসুমের সুর ঠিক করে দেয়। শুরু থেকে ফর্ম ও ছন্দ ধরে রাখতে পারলে মৌসুমের শেষেও তা সাধারণত দারুণ ফল এনে দেয়।

সেই হিসেবে এ মৌসুমের শুরুতে আলো ছড়ানো খেলোয়াড়দের মধ্যে হ্যারি কেইন, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আর্লিং হলান্ড এখনই দিচ্ছেন বড় কিছুর ইঙ্গিত। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে তিনজনই দুর্দান্ত, ম্যাচের পর ম্যাচে গোল করে চলেছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

চলতি মৌসুমে হ্যারি কেইন রয়েছেন অবিশ্বাস্য ছন্দে। বুন্দেসলিগায় এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচে সব কটিতে জিতেছে বায়ার্ন মিউনিখ। দলটি গোল করেছে ২২টি, যার অর্ধেকই কেইনের (১১টি)। আরও ৩ গোলে তাঁর সহায়তা। এই ৬ ম্যাচে দুটি হ্যাটট্রিকও করেছেন তিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই ম্যাচে কেইনের গোল ৪টি। জার্মান কাপ ও সুপার কাপ মিলিয়ে করেছেন আরও ৩টি।

সব মিলিয়ে কেইনের গোলসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ ম্যাচে ১৮। যেকোনো মানদণ্ডে এ পরিসংখ্যান মুগ্ধ করার মতো। এই ধারাবাহিকতা যদি মৌসুমজুড়ে ধরে রাখতে পারেন, কেইন শেষ করতে পারেন এক অসামান্য উচ্চতায়। সেই সাফল্য বায়ার্নের শিরোপা জয়ের পথেও রাখতে পারে বড় ভূমিকা, পূর্ণতা পেতে পারে তাঁর ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলিও।

দারুণ ছন্দে কেইন
এএফপি

ইউরোপিয়ান শিরোপা জয়ের আশায় পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে গিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাঁর আগের ক্লাব পিএসজি ঠিকই জিতেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ, কিন্তু গত মৌসুমে এমবাপ্পে ছিলেন শূন্য হাতে।

আরও পড়ুন

ফলে ভালো খেলার পরও তাঁকে একটু আড়ালেই রয়ে যেতে হয়েছে। এবার তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ—নিজের পারফরম্যান্সের সঙ্গে দলের সাফল্য মিলিয়ে নেওয়া। কারণ, নিজে যত ভালোই খেলুন, দল যদি ব্যর্থ হয়, পুরস্কার মঞ্চে আলোটা পড়বে অন্যের ওপর।

তবে এখন পর্যন্ত রিয়াল ও এমবাপ্পে—দুজনেরই পারফরম্যান্স দারুণ। লা লিগায় শীর্ষে থাকা রিয়াল ৮ ম্যাচের ৭টিতেই জিতেছে, গোল করেছে ২১টি। এই দারুণ শুরুতে সবচেয়ে বড় অবদান এমবাপ্পের—৮ ম্যাচে ৯ গোল, সঙ্গে ২ অ্যাসিস্ট। শুধু একটি ম্যাচেই গোল পাননি তিনি।

এমবাপ্পে যেন গোলমেশিন
রয়টার্স

চ্যাম্পিয়নস লিগেও তাঁর পারফরম্যান্স অনবদ্য—দুই ম্যাচে একটি হ্যাটট্রিকসহ ৫ গোল। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ১০ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ১৪। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত যদি এমন পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারেন, তবে দলীয় ও ব্যক্তিগত—দুই ক্ষেত্রেই পূরণ হতে পারে তাঁর অনেক স্বপ্ন।

ম্যানচেস্টার সিটির মৌসুমের শুরুটা ভালো না হলেও আর্লিং হলান্ড ঠিকই ছন্দে আছেন। প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে ৯ গোল করেছেন তিনি, সঙ্গে একটি অ্যাসিস্ট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বোর্নমাউথের আঁতোয়ান সেমেনিয়ো তাঁর চেয়ে ৩ গোল পিছিয়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই ম্যাচে হলান্ডের গোল ৩টি। সব মিলিয়ে ৯ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ১২। বলা যায়, সিটির সাফল্য–ব্যর্থতার বড় অংশটাই নির্ভর করছে হলান্ডের ধারাবাহিকতার ওপর।

সিটিকে পথ দেখাচ্ছেন আর্লিং হলান্ড
রয়টার্স

গত মৌসুমে হলান্ডের তুলনামূলক নিষ্প্রভ পারফরম্যান্সের সঙ্গে সিটির ব্যর্থতাও জুড়ে ছিল। তবে এবার শুরু থেকেই তিনি দিচ্ছেন দারুণ কিছুর ইঙ্গিত। প্রিমিয়ার লিগে খেলা ৭ ম্যাচের মধ্যে ৬টিতেই গোল করেছেন তিনি। তাঁর সেই ধারাবাহিক নৈপুণ্যের কারণেই শুরুতে পাওয়া ধাক্কা কাটিয়ে এখন আবার ছন্দে ফিরছে সিটি।

তবু সাফল্যের চূড়ায় উঠতে হলে মৌসুমের বাকি সময়েও হলান্ডের কাছ থেকেই বড় কিছু আশা করছে দল। সেই প্রত্যাশার মানদণ্ডে শেষ পর্যন্ত তিনি উতরে যেতে পারেন কি না, সেটিই এখন দেখার। কারণ, হলান্ড যদি নিজের ছন্দটা ঠিক রাখেন, তাহলে সিটিও আলোয় ভাসবে মৌসুম শেষে।