‘অলৌকিকের চেয়েও বেশি’—অতিরিক্ত সময়ে যেভাবে অবিশ্বাস্য জয় পেল ইউনাইটেড
ওল্ড ট্রাফোর্ডের ঘড়িতে তখন ১০৯ মিনিট। গোল করলেন লিঁও ফরোয়ার্ড আলেক্সান্দার লাকাজেত্তে। তাতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মৌসুম কার্যত শেষ। কোয়ার্টার ফাইনাল ফিরতি লেগের এ ম্যাচে ৪-২ গোলে পিছিয়ে ইউনাইটেড। দুই লেগ মিলিয়ে পিছিয়ে থাকার ব্যবধান ৬-৪। অতিরিক্ত সময় শেষ হতে বাকি মাত্র ১১ মিনিট। গ্যালারি ছেড়ে ওল্ড ট্রাফোর্ডের গেট দিয়ে বাড়ির পথ ধরেন ইউনাইটেডের হাজারো সমর্থক। তাদের জন্য এই ম্যাচে আর কী বাকি থাকে!
রিও ফার্ডিনান্ডও তা–ই ভেবেছিলেন। ক্লাবটির সাবেক এ ডিফেন্ডার টিএনটি স্পোর্টসের ধারাভাষ্যে বলেন, ‘ইউনাইটেডের অলৌকিকের চেয়েও বেশি কিছু প্রয়োজন।’
ওল্ড ট্রাফোর্ডে ঠিক তারপরই অলৌকিত্ব ধরা দিল!
ম্যাচের বাকি তখন ৬ মিনিট। কাসেমিরো ফাউলের শিকার হওয়ায় পেনাল্টি পায় ইউনাইটেড। ১১৪ মিনিটে স্পটকিক থেকে গোল করেন ইউনাইটেড মিডফিল্ডার ব্রুনো ফার্নান্দেজ। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে ইউনাইটেডের আরেক মিডফিল্ডার কোবি মাইনোর জোরালো বাঁকানো শট আশ্রয় নেয় লিঁওর জালে। ফিরতি লেগে তখন ইউনাইটেড ৪-৪ গোলে সমতায়। টাইব্রেকারের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল। তাতেও ইউনাইটেডের খুব বেশি স্বস্তি পাওয়ার কথা নয়। প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে এই ওল্ড ট্রাফোর্ডেই এফএ কাপের পঞ্চম রাউন্ডে ফুলহামের কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে। কিন্তু হ্যারি ম্যাগুয়ার ভেবেছেন অন্য কিছু।
ইউনাইটেডের ধারাবাহিক পতনে ম্যাগুয়ারকে সবচেয়ে বেশি বলির পাঁঠা বানানো হয়। যদিও বড় ম্যাচে ম্যাগুয়ারই সবচেয়ে বেশি মাথা তুলে দাঁড়ান ইউনাইটেডের হয়ে। সেই ম্যাগুয়ারই ভেবেছিলেন আজ (কাল রাতে) অন্তত বিদায় নেবেন না। মাইনোর গোলের এক মিনিটের কম সময়ের মধ্যে (যোগ করা সময়) হেডে গোল করেন ম্যাগুয়ার। উন্মাদের মতো উদ্যাপনে মাতল ওল্ড ট্রাফোর্ডের গ্যালারি, উন্মাদ কি ম্যাগুয়ার নিজেও হননি? এ তো অবিশ্বাস্য এক জয়!
শেষ বাঁশি বাজার পর চোখেমুখে অবিশ্বাস ফুটিয়ে টিএনটি স্পোর্টসকে ফার্ডিনান্ড বলেছেন, ‘দর্শক হিসেবে আমি এমন কিছু কখনো দেখিনি। অসাধারণ। ৪-২ গোলে পিছিয়ে থাকতে আমরা অনেক দর্শককেই গ্যালারি ছেড়ে যেতে দেখেছি, সবাই ভেবেছিল সব শেষ হয়ে গেছে। আমি নিজেও ধারাভাষ্যে বলেছি, ঘুরে দাঁড়াতে ইউনাইটেডের অলৌকিকত্বের চেয়েও বেশি কিছু প্রয়োজন এবং আমার মধ্যে সেই বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে, কারণ এটা দুর্দান্ত ব্যাপার।’
ইংল্যান্ডের সাবেক গোলকিপার পল রবিনসনও বিস্ময়ে থ বনে গিয়ে বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভকে বলেন, ‘ওল্ড ট্রাফোর্ডের ভেতরের দৃশ্যগুলো একদমই অন্য রকম। আমি কখনো এমন কিছু দেখিনি। স্টুয়ার্ডস থেকে দর্শক কিংবা সাপোর্ট স্টাফ—সবাই মাঠে। আন্দ্রে ওনানা ভিক্টরি ল্যাপ দিচ্ছে। ওল্ড ট্রাফোর্ড অনেক বছর এমন কিছু দেখেনি। মনে হয় না এমন ম্যাচ এর আগে কখনো দেখেছি। কোনো রকম সুযোগই ছিল না। কিন্তু তাদের এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চরিত্র গোটা মৌসুমে দেখতে পাইনি। প্রশংসার ভাষা নেই।’
ইউরোপিয়ান ক্লাব প্রতিযোগিতার নকআউটে এর আগে অতিরিক্ত সময়ে কখনোই পাঁচ গোল দেখা যায়নি। তবে ‘থিয়েটার অব ড্রিমস’খ্যাত ওল্ড ট্রাফোর্ডে নতুন ইতিহাসের জন্ম হওয়াও নতুন কিছু নয়। ইউনাইটেডের সাবেক মিডফিল্ডার পল স্কোলস যেমনটা বলেছেন টিএনটি স্পোর্টসকে, ‘এই ক্লাবে বিশেষ অনেক কিছুই ঘটতে দেখেছেন। (১৯৯৯ সালে) লিভারপুলের বিপক্ষে ওলে গুনার সুলশারকে মনে পড়ছে। কিন্তু সেটা ছিল ২-১ আর এটা ৫-৪।’
তবে গতকাল রাতের অবিশ্বাস্য ফলকে সবচেয়ে ভালোভাবে বর্ণনা করেছেন ইউনাইটেডের ডিফেন্ডার লেনি ইয়োরো, ‘সত্যি বলতে কী ঘটেছে আমি বলতে পারব না। এটা পাগলামি! সমর্থকেরা এটা ঘটাতে আমাদের সাহায্য করেছে। ৪-২ গোলে পিছিয়ে থাকতেও যখন সমর্থকদের আওয়াজ শুনবেন, তখন মনে হবে এটা সম্ভব। আমাদের বিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল আর বিশ্বাসটা না থাকলে জিততে পারবেন না।’
৩২ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ টেবিলে ১৪তম ইউনাইটেড।
নিজেদের ইতিহাসে এবার তারা সবচেয়ে কম পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগের মৌসুম শেষ করবে। তবে ইউরোপা লিগে শিরোপা জয়ের আশা টিকে আছে। আগামী মাসে সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ স্পেনের ক্লাব অ্যাথলেটিক বিলবাও। জিততে পারলে ফাইনালে খেলবে বিলবাওয়ের মাঠ সান মামেসে। সেটাও জিততে পারলে চ্যাম্পিয়নস লিগের আগামী মৌসুমে জায়গা করে নেবে ইউনাইটেড।
ইউনাইটেডের সমর্থকেরা সম্ভবত এখনই এমন কিছু ভাবছেন না। কাল রাতের অবিশ্বাস্য ঘটনার রেশই তো এখনো কাটেনি।