দি মারিয়ার দেয়াল ভাঙার গল্প: অনেক অজানাকে জানার সুযোগ
আনহেল দি মারিয়াকে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করেছেন, তাঁরা সম্ভবত দুটি বিষয়ে একমত হবেন। এক. দি মারিয়া প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ, বিশেষ করে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের প্রতি। দুই. তিনি তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা ফুটবলার। কিন্তু এই ফুটবলার দি মারিয়ার ভেতরের মানুষটা কেমন, চার দেয়ালের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে কেমন তাঁর পৃথিবী—এই প্রশ্ন আছে অনেকেরই।
শুধু তা–ই নয়, দি মারিয়ার ক্যারিয়ার নিয়েও সমর্থকদের কৌতূহলও আছে অনেক। আর্জেন্টাইন পরিচালক হুয়ান বালদানার বানানো ‘আনহেল দি মারিয়া: ব্রেকিং ডাউন দ্য ওয়াল’ তথ্যচিত্রে দি মারিয়ার দুই পৃথিবীর গল্পই আছে, যা দেখতে দেখতে কখনো চোখটা ভিজে আসতে পারে, কখনো আবার মনে হতে পারে, সার্থক জন্ম কিংবদন্তির।
বেনফিকা ছেড়ে কিছুদিন আগে শৈশবের ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রালে ফিরেছেন দি মারিয়া। বালদানা তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্রের গল্পটা শুরু করেছেন রোজারিও থেকে, থেমেছেন আর্জেন্টিনার কাতার বিশ্বকাপ জয় ও গত বছর কোপা আমেরিকা জয়ে এসে—যেটা আবার দি মারিয়ার জাতীয় দল ক্যারিয়ারে শেষ ম্যাচ। তথ্যচিত্রটি তিন পর্বে ভাগ করা হয়েছে দি মারিয়ারের ক্যারিয়ারে তিনটি বাঁক ধরে। প্রথম পর্বের নাম ‘২৬ ফুটবলস’ রাখার পেছনে রয়েছে সে গল্পটি। কারও কারও জানা থাকতে পারে—২৬টি ফুটবলের বিনিময়ে স্থানীয় ক্লাব থেকে দি মারিয়াকে কিনেছিল রোজারিও।
তথ্যচিত্রে এ গল্পটাই বলেছেন দি মারিয়ার বাবা–মা। কখনো আবার দি মারিয়া নিজে। মায়ের অবদানের প্রসঙ্গ উঠতে দি মারিয়ার শিশুর মতো কান্নার দৃশ্য দেখে কেউ কেউ চোখ মুছতে পারেন। ছেলে যেন ভুল পথে না যায়, সে জন্য বাবার যে কড়া শাসন ও যত্ন—সেই গল্প বলেছেন দি মারিয়ার বাবা মিগুয়েল। মা ডায়ানা সাইকেল চালিয়ে দি মারিয়াকে অনুশীলনে নিয়ে যাওয়া, সেখানে ছেলের অনুশীলন, এসবের প্রচুর পুরোনো ফুটেজ গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একদম সঠিক মুহূর্তে ব্যবহার করায় বালদানা ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
আরেকটি ফুটেজ দি মারিয়ার সমর্থকদের কাছে অমূল্য মনে হতে পারে। বেনফিকা থেকে রিয়াল মাদ্রিদে সই করে দি মারিয়া যেদিন স্পেনে পা রাখলেন, সেদিন বিমানবন্দরে এক তরুণী দি মারিয়াকে তাঁর প্রেমিকার সামনে একটি চিরকুটে ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় প্রায় ভেস্তে যেতে বসেছিল দি মারিয়ার রিয়ালে খেলার স্বপ্ন। রোজারিও সমর্থক থেকে দি মারিয়ার সমর্থক এবং পরে প্রেমিকা থেকে তাঁর বউ বনে যাওয়া হোর্হেলিনা কারদাসো সেই গল্প বলেছেন। আর দি মারিয়ার গল্প বলার প্রয়োজনেই একে একে এসেছেন লিওনেল মেসি, নেইমার, এজেকুয়েল লাভেজ্জি, সের্হিও রামোস, মার্সেলো, এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, জোসে মরিনিও, কার্লো আনচেলত্তি।তাঁরা সবাই একযোগে গল্প বলেছেন দি মারিয়ার।
বিশেষ করে মরিনিও বলেছেন তাঁর রিয়ালের গল্প—যেটা তথ্যচিত্রের দ্বিতীয় পর্ব ‘নো ওয়ান ইজ আ প্রফেট ইন দেওয়ার ওন ল্যান্ড’। শিরোনামেই বুঝতে পারছেন, সান্তিয়াগো বার্নাব্যু দি মারিয়ার জন্য একেবারে পুষ্পশয্যা ছিল না। ভেতরের অনেক অজানা বিষয়ই বেরিয়ে এসেছে এই পর্বে। বাদ যায়নি তাঁর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, জুভেন্টাস ও পিএসজিতে থাকার গল্পও।
‘ফ্রম কোল টু গোল্ড’ নামে শেষ পর্বটি আসলে দি মারিয়ার শাপমোচনের গল্প। জাতীয় দলে খেলার মতো ফিট নন, আর্জেন্টিনাকে কিছু জেতাতে পারেন না—এমন অপবাদ ঘুচিয়ে আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও কোপা জেতানো, একের পর এক ফাইনালে গোল করা, এসবের বয়ান আছে শেষ পর্বে। আকর্ষণীয় বিষয় হলো, সবার জানা গল্পটাই বালদানা এমনভাবে দি মারিয়ার সতীর্থদের মুখ দিয়ে বের করেছেন, যা শুনতে নতুন লাগতে পারে। কারণ, আমরা শুধু মাঠের খেলাটাই দেখতে পাই, সেসব সময়ে ড্রেসিংরুম কিংবা ভেতরকার পরিস্থিতির গল্পটা তুলে এনে নতুন কিছু উপহার দিয়েছেন বালদানা।
কয়লা বেচে সংসার চালানো এক পরিবারের একটি ছেলের বিশ্বজয়ের এই গল্প কুশলী উপস্থাপনের কারণে কখনো নীরস মনে হয় না। বরং যে দি মারিয়াকে আমরা চিনি, জানি, তাঁকে আরও গভীরভাবে চেনার সুযোগ করে দিয়েছে ‘ব্রেকিং দ্য ওয়াল’। গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব মুক্তি পায় নেটফ্লিক্সে। সব কটি পর্বই আছে এই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে।
আনহেল দি মারিয়া: ব্রেকিং দ্য ওয়াল (২০২৪)
পরিচালক: হুয়ান বালদানা
ধরন: তথ্যচিত্র
আছেন যাঁরা: আনহেল দি মারিয়া, লিওনেল মেসি, নেইমার, সের্হিও রামোস, এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, রদ্রিগো দি পল, কার্লো আনচেলত্তি ও জোসে মরিনিও।
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৮/১০
রানটাইম: প্রথম পর্ব (‘২৬ ফুটবলস’) ৫৪ মিনিট, দ্বিতীয় পর্ব (‘নো ওয়ান ইজ আ প্রফেট ইন দেওয়ার ওন ল্যান্ড’) ৫৪ মিনিট ও তৃতীয় পর্ব ‘ফ্রম কোল টু গোল্ড’ ৫৭ মিনিট।