মেসি–জাদুতে আর্জেন্টিনা টিকে আছে, কিন্তু কত দূর যাবে বলা কঠিন

আর্জেন্টিনাকে নিয়ে আমি শুরু থেকেই উচ্ছ্বসিত ছিলাম না, যতটা ছিলাম ফ্রান্সকে নিয়ে। ফ্রান্স চ্যাম্পিয়নের মতোই খেলছে এবং এটা বোঝাতে পারছে যে ওরা শিরোপা ধরে রাখতে প্রস্তুত। কিন্তু আর্জেন্টিনাকে দেখে আমার এখনো মনে হচ্ছে না যে কাতার থেকে শিরোপা নিতে তৈরি ওরা।

পত্র–পত্রিকা বা আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা যেভাবে মেসিদের নিয়ে বড় আশার কথা বলছেন, সেটার সঙ্গে আর্জেন্টিনার খেলার মিল পাচ্ছিলাম না। গত রাতে মেক্সিকোর বিপক্ষে মেসিরা ২–০ গোলে জেতার পরও একই কথা বলব।

প্রথম গোলটা হয়েছে মেসির ব্যক্তিগত দুরন্ত নৈপুণ্যে। এটাই আসলে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। মেসি ওভাবে জ্বলে না উঠলে কী হতো, বলা কঠিন। কারণ, অন্যরা মেসিকে সমর্থন দিতে পারছিল না মাঠে। একটা সময় তো আনহেল দি মারিয়ার মতো খেলোয়াড়কে বসিয়ে দিতে হলো।

দি মারিয়া যে ফুটবলটা খেলছিল, দেখতে ভালোই লাগছিল। বল ধরছে, ছাড়ছে। কিন্তু প্রতিপক্ষকে ভয় ধরাতে পারছিল না, যেটা তিন বছর আগে ওর খেলায় ছিল। তখন তাকে ভয় পেত প্রতিপক্ষের রক্ষণ, এখন আর সেভাবে পায় না।

মেক্সিকোর বিপক্ষে জ্বলে উঠেছিলেন মেসি
ছবি: রয়টার্স

মেসিকেও অনেকটা সে রকম লাগছিল। কিন্তু গোল যেটা করেছে, সেটা প্রশংসা পাওয়ার মতো। আসলে এটাই মেসি। গড়পড়তা মানে খেলতে খেলতে নিজের জাদুকরি রূপটা বের করে আনতে পারে। সেটাই করেছে গত রাতে। তারই কল্যাণে আর্জেন্টিনা টিকে থাকল বিশ্বকাপে। এই আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া নিয়ে আমার তেমন বড় কোনো সংশয় নেই।

আরও পড়ুন

কিন্তু এরপর কত দূর যেতে পারবে, বুঝতে পারছি না। কারণ, একটা দল হিসেবে আর্জেন্টিনা এখনো আমাকে মুগ্ধ করতে পারেনি। আর্জেন্টিনার খেলা দেখে আমার কখনোই মনে হয়নি দল হিসেবে দারুণ কিছু করবে। যদিও বিশ্বাস ছিল ব্যক্তিগত কোনো নৈপুণ্যে জিতে বেরিয়ে যাবে মেক্সিকো ম্যাচে।

মেক্সিকোর বিপক্ষে বল পজেশন অনেক বেশি ছিল আর্জেন্টিনার। কিন্তু বল পজেশন বেশি রেখে কোনো লাভ নেই, যদি না খেলাটা দারুণ কিছু হয়। আমি প্রচুর ম্যাচ দেখেছি, যেখানে অনেক কম বল পজেশন রেখেও একটা দল জিতে গেছে।

যেমন একটা ম্যাচের কথা বেশি মনে আছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বার্সেলোনা বনাম ইন্টার মিলানের ম্যাচ। তখন মিলানের কোচ জোসে মরিনিও। বার্সেলোনায় মেসিরা তখন সেরা ফর্মে। বার্সার বল পজেশন ছিল ৭২ ভাগ, কিন্তু তারা জিততে পারেনি। মিলান জিতে বেরিয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

এখনকার ফুটবলে আসলে বল পজেশন বড় কোনো বিষয় নয়। ছোট দল বড় দলকে বল পজেশন বেশি রাখতে দেয়, ওটাই তাদের কৌশল। তা ছাড়া আর্জেন্টিনা-মেক্সিকো চেনা প্রতিপক্ষ। নিয়মিত একে অন্যের সঙ্গে খেলে। তাই মেক্সিকো বুঝতে পারছিল, কীভাবে কী করতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পারেনি মেসি–ঝলকের কাছে।

তবে ম্যাচটা আমার কাছে সাধারণ মানেরই লেগেছে। আর্জেন্টিনার খেলায় গভীরতা তেমন ছিল না। এ কথা বললে অনেক আর্জেন্টাইন সমর্থক আমার ওপর রাগ করতে পারেন, জানি। তবে আমি আবেগ দিয়ে কথা বলতে পারি না। গভীরতা দেখেছি ফ্রান্সের খেলায়। ফ্রান্স দুটি ম্যাচ খেলেছে, দুটিতেই তারা প্রমাণ করে দিয়েছে নিজেদের।

ফরাসিদের সেরা স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা নেই। সেরা দুই মিডফিল্ডার পগবা আর কন্তেও দলের বাইরে। তিনজন খেলোয়াড়ের চোট। কিন্তু ফ্রান্স যখন খেলে, বোঝাই যায় না তিনজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় নেই। এটা ব্রাজিলের খেলায় ছিল ১৫–২০ বছর আগে।

আরও পড়ুন

ব্রাজিলের সেরা তারকারা না থাকলেও তখন ম্যাচ বেরিয়ে যেত। কিন্তু এই আর্জেন্টিনার মেসিই মূল ভরসা। কাজেই মেসি আগামী ম্যাচগুলোয় কেমন খেলে, সেটাই দেখার।  মেসির ওপরই অনেকটা নির্ভর করছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ–ভাগ্য। গত রাতে সেটা আবার বোঝা গেছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন