৯ পয়েন্ট আর ৯৯ মিনিটের গোল: একটি আশ্চর্য পতনের গল্প

অবিশ্বাস্য এক পতনে লিগ হাতছাড়া করল আয়াক্সএএফপি

ছয় সপ্তাহ আগের কথা। আয়াক্সের ৩৭তম ডাচ লিগের শিরোপা জয় তখন শুধুই সময়ের ব্যাপার বলে মনে হচ্ছিল। বিশেষ করে ৩০ মার্চ সে সময় দ্বিতীয় স্থানে থাকা পিএসভি আইন্দহফেনের বিপক্ষে ২–০ গোলের জয়ের পর অনেকে আয়াক্সের হাতে ট্রফিও তুলে দিয়েছিলেন। ৩৪ ম্যাচের লিগে কোনো দল যদি ২৭তম ম্যাচশেষে ৯ পয়েন্টে এগিয়ে থাকে, তখন সে দলকে ট্রফি তুলে দেওয়া ছাড়া আর উপায় কী!

এমনকি লিগ শিরোপা হারানোর বিষয়টি মেনে নিয়েছিল দুই নম্বরে থাকা পিএসভি অধিনায়ক লুক দে জংও। আয়াক্সের কাছে হারের পর তিনি বলেছিলেন, ‘৯ পয়েন্ট অনেক বেশি। আমার মনে হয় না, আমরা এই ব্যবধান মেটাতে পারব। আমরা চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করার জন্য দুই নম্বরে থাকার ওপর জোর দিচ্ছি।’

প্রতিদ্বন্দ্বীও যখন হার মেনে নেয়, তখন তো শিরোপা–উৎসবের প্রস্তুতিই শেষ কথা। কিন্তু ভোজবাজির মতো সব বদলাতে সময় লাগেনি। অনেকটা আকস্মিকভাবেই অসম্ভব এক পতনের দিকে যাত্রা শুরু করে আয়াক্স। আর উল্টোরথে পিএসভি যাত্রা করে অবিশ্বাস্য এক উত্থানের দিকে, যা শেষ হয়েছে গতকাল পিএসভির শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে।

আরও পড়ুন

টুয়েন্টের বিপক্ষে নিজেদের শেষ লিগ ম্যাচে আয়াক্স জিতেছে ২–০ গোলে। তবে একই সময়ে স্পার্টা রটেরডামকে ৩–১ গোলে হারিয়ে ১ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে থেকে শিরোপা জিতেছে পিএসভি। মাঝে যা ঘটেছে, তা রীতিমতো ব্যাখ্যাতীত।

পিএসভি–আয়াক্সের সেই ম্যাচে পর দুই দলের সামনে ছিল ৭ ম্যাচ। সেই সাত ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই পয়েন্ট হারিয়েছে আয়াক্স। হাতে থাকা ২১ পয়েন্টের মধ্যে আয়াক্স পায় ১১ পয়েন্ট। অন্যদিকে পরের ৭ ম্যাচের প্রতিটিতে জিতে পিএসভি পায় ২১ পয়েন্টের সবটাই। অর্থাৎ পরের ৭ ম্যাচে ৯ পয়েন্টের পার্থক্য মিটিয়ে উল্টো ১ পয়েন্টের লিড নিয়ে নেয় পিএসভি। যার ফলে চ্যাম্পিয়নের মুকুটও শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পেরেছে তারা।

নাটক অবশ্য শুধু এটুকুতেই শেষ নয়; এফসি গ্রোনিনগেনের বিপক্ষে ম্যাচটিতে পয়েন্ট হারানোর দুঃখ আয়াক্সকে নিশ্চিতভাবে আরও অনেক দিন তাড়া করবে। সেটি ছিল লিগের ৩৩তম ম্যাচ। সেদিন নির্ধারিত সময়ের পর যোগ করা সময়েও ২–১ ব্যবধানে জয়ের পথে ছিল আয়াক্স। কিন্তু ৯৯ মিনিটে থেইমান ব্লকজেইলের গোলে হৃদয় ভাঙে আয়াক্সের। ম্যাচটা ২–২ ব্যবধানে ড্র করে ২ পয়েন্ট হারায় ৩৬ বারের চ্যাম্পিয়নরা। ১ পয়েন্টে এগিয়ে যায় পিএসভি। মৌসুমের শেষ লিগ ম্যাচে ২ পয়েন্টের জন্যই আর শিরোপা জেতা হলো না আয়াক্সের।

আরও পড়ুন

অবিশ্বাস্যভাবে শিরোপা হাতছাড়া করার বিষয়টি যেন মানতেই পারছেন না আয়াক্সের ৩৬ বছর বয়সী কোচ ফ্রান্সেসকো ফারিওলি। গতকাল ম্যাচ শেষে অঝোরে কাঁদতে দেখা গেছে তাঁকে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় একাধিকবার কথা জড়িয়ে গেছে তাঁর, নিজেকে সামলাতে চুপও থেকেছেন। যেটুকু বলতে পেরেছেন, তাতে অবশ্য শক্ত মানসিকতারই পরিচয় দিয়েছেন, ‘এটা একটা ভীষণ কঠিন শিক্ষা। আর যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। আমার কোনো ধরনের আফসোস নেই।’

এমন পতন কে কবে কে দেখেছিল
এএফপি

অন্যান্য অনেক ইউরোপীয় ফুটবলপ্রেমীর মতো সাবেক আয়াক্স ও পিএসভি মিডফিল্ডার উইম ইয়ঙ্কও শীর্ষস্থান নিয়ে এই লড়াই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। আয়াক্সের আশ্চর্য পতন নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আয়াক্স অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছিল এবং বড় ব্যবধানে এগিয়েও ছিল। কিন্তু আপনি যখনই পয়েন্ট খোয়াতে শুরু করেন, বাইরের বিশ্ব আলোচনা শুরু করে দেয়। এরপরই মনে প্রশ্ন জাগে, চাপের মুখে দলটি মানসিকভাবে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে? আয়াক্সের ক্ষেত্রেও সেটা দেখা গেছে—চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের খেলার গতি থমকে যায়। এটা গুণগত মানের অভাবের জন্য নয়। কারণ, দলটিতে বেশ কিছু ভালো খেলোয়াড় রয়েছে।’