‘মেসিও জানেন, আমি তাঁর মতো হতে চাই না’: ইয়ামাল

লিওনেল মেসি ও লামিনে ইয়ামালইনস্টাগ্রাম

‘আমার কাছে তিনিই ইতিহাসের সেরা।’

লামিনে ইয়ামাল এই কথা বলার পর তুলনা করা কি আর মানায়? তবু কেউ কেউ জোর করে লিওনেল মেসির সঙ্গে তুলনা টেনে আনেন। অথচ ইয়ামালের ক্যারিয়ারের সেই সময়টা এখনো আসেনি। সামনে তাঁর আরও অনেক পথ।

হ্যাঁ, ইয়ামালের খেলার ধরন দেখে কারও কারও মনে মেসির কথা আসে। এটুকুই। কিন্তু তুলনা? সে পথে হাঁটতে রাজি নন ইয়ামাল নিজেই। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিবিএস নিউজ’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই বার্সেলোনা উইঙ্গার পরিষ্কার বলেছেন, তিনি মেসির মতো হতে চান না। নিজের পথটা তিনি গড়তে চান নিজের মতো করে। আর মেসিও নাকি সেটা জানেন।

ইয়ামাল যেন অনুচ্চারে বোঝাতে চাইলেন—‘যাদের নিয়ে তুলনা তাদের মাথাব্যথা নেই, আর চারপাশের পাড়া–পড়শির ঘুম নেই!’ মেসি ২০২১ সালে বার্সা ছাড়ার পর সত্যিকার অর্থে শুধু ইয়ামালের খেলাতেই তাঁর ছায়া দেখা যায়। জাতীয় দল আর বার্সা মিলিয়ে এত অল্প বয়সে ইয়ামালের সাফল্যের পথরেখাও প্রায় মেসির মতো। বার্সার হয়ে একাধিকবার লিগ জিতেছেন, স্পেনের হয়ে ইউরো। ব্যালন ডি’অরের আলোচনায়ও আছেন।

লামিনে ইয়ামাল এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার
এএফপি

আরেকটু গভীরে নামলে মিল আরও পাওয়া যায়। ইয়ামালও কিন্তু মেসির মতোই বাঁ পায়ের খেলোয়াড়। পজিশনও প্রায় একই। মেসির মতো গোল করা এবং করানোও তাঁর কাজ। তবু ইয়ামাল চান না মেসির সম্মান এতটুকু ক্ষুণ্ন হোক। তাই নিজেকে এই তুলনা থেকে দূরে রাখতে চান তিনি।

সিবিএস নিউজের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে তুলনা নিয়ে কথার শুরুতেই ইয়ামাল বললেন, ‘তিনি যা এবং ফুটবলে যা, সে জন্য তাকে সম্মান করি। মাঠে দেখা হলে পারস্পরিক সম্মানটা থাকবে। আমার কাছে তিনিই ইতিহাসের সেরা।’

আরও পড়ুন

অনেকের কাছেই তাই। বার্সার হয়ে যা জেতার সবই জিতেছেন মেসি। আর্জেন্টিনার জার্সিতেও—বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা। সামনে আরেকটি বিশ্বকাপ খেলবেন কি না, সেটা ভাবতে ভাবতেই ৩৮ বছর বয়সী মেসি এখন ইন্টার মায়ামিতে ক্যারিয়ারের শেষ দিনগুলো উপভোগ করছেন।

ইয়ামালের ভাষায়, ‘আমরা দুজনেই জানি আমি মেসি হতে চাই না। মেসিও জানেন আমি তাঁর মতো হতে চাই না। আমি নিজের পথে চলতে চাই। তাঁর মতো খেলা কিংবা ১০ নম্বর জার্সি পরা—এমন কোনো ইচ্ছেই আমার নেই।’

ইয়ামালের খেলার সঙ্গে মেসির খেলার মিল পান অনেকেই
এএফপি

লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা ইয়ামাল অবশ্য এখন এখন বার্সার মূল দলে ১০ নম্বর জার্সিই পরেন। আবার বার্সায় একসময় মেসির যে ভূমিকা ছিল, ইয়ামালেরও এখন অনেকটা তা-ই। তাই চাইলেও তিনি তুলনা এড়াতে পারবেন না।

চলতি মৌসুমে বার্সার হয়ে ১৪ ম্যাচে ৭ গোল করেছেন ইয়ামাল। তাই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নিজের খেলার ধরনকে তিনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? উত্তর শুনুন ইয়ামালের মুখেই, ‘আনন্দ—এটাই সঠিক শব্দ। আমি মানুষকে আনন্দ দিতে খেলি। আমি একজন অ্যাথলেট যে বিনোদন দেয়। সব বিশ্ব রেকর্ড ভাঙা, লাখো গোল করা কিংবা লাখো ড্রিবল করা আমার লক্ষ্য না। আমি খেলাটা উপভোগ করতে চাই। চাই ছোটরা আমার মতো হোক। হ্যাঁ, অনেক গোল করলে তো ভালোই হয়। তবে আমার বিশ্বাস, ফুটবল এর চেয়েও বেশি কিছু।’

আরও পড়ুন

১৮ বছর বয়সেই আর কী পাওয়ার বাকি ইয়ামালের! খ্যাতি, অর্থ—সবই আছে। এ বয়সে দামি গাড়ির প্রতি টান থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সর্বশেষ ব্যালন ডি’অরে দ্বিতীয় হওয়া এই তরুণের এখনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, ভবিষ্যতে গাড়ি কিনলে সেটা কেমন হবে? উত্তরে ইয়ামাল খানিকটা দার্শনিক, ‘একা চালানোর স্বাধীনতা উপভোগ করতে চাই। আমার গাড়িটা এমন হবে যেটা সব বন্ধুই চাইবে এবং উপভোগ করতে পারবে। তবে সেটা ল্যাম্বোরগিনি হবে না। অডি, মার্সিডিজ কিংবা কুপ্রা হতে পারে।’

বার্সার স্বপ্নের সারথি এখন ইয়ামাল
রয়টার্স

সাম্প্রতিক সময়ে ইয়ামালের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও চর্চা হচ্ছে। প্রেমিকা নিয়ে নানা কথাবার্তা, বিতর্ক—সবই চলছে। সাক্ষাৎকারে ইয়ামালের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর জীবনের প্রথম প্রেম নিয়ে। উত্তরটা শুনে বার্সা–ভক্তরা খুশি হতে পারেন। ফুটবলই ইয়ামালের জীবনে প্রথম ভালোবাসা। তাঁর সহজ উত্তর, ‘আমার জীবনে এটাই প্রথম এবং সব সময় তা–ই থাকবে এবং এটাই শেষ কথা। আমার বন্ধু, বাবা এবং মা-ও ফুটবল ভালোবাসেন। এটাই আমার জীবনে সবকিছু।’