৩৭ গোল হজম করা দলের ডিফেন্ডার গতিতে সবার ওপরে

বল দখলের লড়াইয়ে উলভারহ্যাম্পটনের ডিফেন্ডার জ্যাকসন চাচুয়া (ডানে)এএফপি

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এমনিতেই খেলোয়াড়দের প্রচুর দৌড়াতে হয়। সে কারণে আক্রমণভাগ, উইং, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড কিংবা রক্ষণেও দৌড়ে গতি থাকা বিশেষ এক গুণ। আক্রমণভাগ হলে তো কথাই নেই। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে আক্রমণভাগের সেরা সব খেলোয়াড়কেই এই গুণটা ধারণ করতে হয়েছে।

রায়ান গিগস, মাইকেল ওয়েন, থিয়েরি অঁরি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো থেকে কাইল ওয়াকার কিংবা গ্যারেথ বেলরা এমনই ছিলেন। তাঁদের দৌড়ে যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়াত! বেল এবং রোনালদোকে নিয়ে লিভারপুলের সাবেক কোচ ব্রেন্ডন রজার্স যেমন একবার বলেছিলেন, তাঁরা অলিম্পিকেও দৌড়াতে পারবেন!

কিন্তু সেসব তো অতীতের কথা। ২০২৬ সালে পা রাখার আগে প্রিমিয়ার লিগে এমন কারা আছেন, অলিম্পিকের ট্র্যাকে যাঁরা দৌড়বিদদেরও ঘাম ছুটিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন? ম্যানচেস্টার সিটি স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ড কিংবা ফুলহাম উইঙ্গার আদামা ত্রায়োরেরকে মনে পড়তে পারে। উঁকি দিতে পারেন টটেনহাম সেন্টারব্যাক মিকি ফন ডি ফেনও। চ্যাম্পিয়নস লিগে গত মাসেই কোপেনহেগেনের ডিফেন্স–চেরা দৌড়ে নজরে পড়েন এই ডাচ ফুটবলার।

সিরি ‘আ’তেও দ্রুততম ছিলেন জ্যাকসন চাচুয়া (বাঁয়ে)
রয়টার্স

আশ্চর্যের বিষয়, অপ্টার মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন চলতি সপ্তাহে প্রিমিয়ার লিগে দৌড়ে দ্রুততম খেলোয়াড়দের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে হলান্ড কিংবা মিকি শীর্ষ দশেও নেই! শীর্ষে আছেন এমন একজন, যাঁর নাম শুনে একটু চমকে যেতেই পারেন। উলভারহ্যাম্পটনের ফুলব্যাক জ্যাকসন চাচুয়া!

বেলজিয়ান এই ফুটবলারের প্রসঙ্গে আসার আগে তাঁর দলের ব্যাপারটা বলতেই হয়। প্রিমিয়ার লিগের চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ১৭ ম্যাচ খেলে উলভারহ্যাম্পটন জয়বঞ্চিত! দুই ড্রয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে সবার তলানিতে রয়েছে দলটি। ৯ গোল করার বিপরীতে তারা হজম করেছে ৩৭ গোল। এমন একটি ক্লাবের ডিফেন্ডার যখন দৌড়ে সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন হন, তখন অবাক না লাগাটাই তো অস্বাভাবিক!

আরও পড়ুন

ইতালিয়ান ক্লাব হেল্লাস ভেরোনা থেকে এ বছর উলভারহ্যাম্পটনে যোগ দেন চাচুয়া। ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে ইতালিতেও ছুটিয়েছেন গতির স্ফুলিঙ্গ। গত মৌসুমে সিরি আ-তেও সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন খেলোয়াড় হয়েছিলেন চাচুয়া। সর্বোচ্চ ২২.৪ মাইল/ঘণ্টা (৩৬.০৪ কিলোমিটার) গতিতে দৌড়ান।

প্রিমিয়ার লিগে যোগ দিয়ে চাচুয়ার গতি আরও বেড়েছে। ফুটবলের বিভিন্ন তথ্য-পরিসংখ্যান বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান অপ্টার হিসাবে, প্রিমিয়ার লিগে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৩.২ মাইল (৩৭.৩ কিলোমিটার) গতিতে দৌড়েছেন চাচুয়া। এই গতি আসলে কেমন সেটা বোঝা যায় উসাইন বোল্টের একটি পরিসংখ্যানে। বার্লিনে ২০০৯ সালে অ্যাথলেটিকসের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ঘণ্টায় ২৭.৮ মাইল (৪৪.৭৩ কিলোমিটার) গতিতে দৌড়ান বোল্ট। রেকর্ড করা তথ্যপঞ্জি অনুসারে মানব ইতিহাসে এর চেয়ে দ্রুতগতিতে আর কেউ দৌড়াননি।

বেলজিয়ান এই খেলোয়াড়ের চেয়ে গতিতে ০.৬ মাইল পিছিয়ে দুইয়ে টটেনহামের লেফটব্যাক ডেস্টিনি উদোগিয়ে (ঘণ্টায় ২২.৬ মাইল/৩৬.৩৭ কিলোমিটার)। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ব্রায়ান এমবেউমো এ তালিকায় তৃতীয়। ঘণ্টায় ২২.৫৮ মাইল (৩৬.৩৩ কিলোমিটার) গতিতে দৌড়েছেন ক্যামেরুনের এই ফুটবলার।

আরও পড়ুন

দ্রুতগতির খেলোয়াড়দের কথা তো বলা হলো। এর উল্টোটাও জানতে ইচ্ছে হতে পারে। মানে, প্রিমিয়ার লিগে এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে মন্থরগতির খেলোয়াড় কে? নিশ্চিতভাবেই এই তালিকায় কেউ শীর্ষে থাকতে চাইবেন না। কিন্তু গোলকিপারদের তো উপায় নেই। তাঁদের যতটুকু নড়াচড়া, তার বেশির ভাগই পোস্টের সামনে, বড়জোর বক্সের ভেতরে। মেইল অনলাইন জানিয়েছে, যদি এই তালিকায় গোলকিপারদের রাখা হয় তাহলে সবার ওপরে থাকবেন নটিংহাম ফরেস্টের জন ভিক্টর।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে ধীরগতির আউটফিল্ড খেলোয়াড় জো নাইট
রয়টার্স

কিন্তু গোলকিপারদের দৌড়ের গতি নিয়ে মাথা ঘামায় কে! ফুটবল খেলায় গোলকিপারের দৌড়ের গতির প্রয়োজনীয়তা কতখানি—তা নিয়েও বিতর্ক হতে পারে। এ কারণে আউটফিল্ড খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির খেলোয়াড়দেরও তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকায় শীর্ষে থাকা খেলোয়াড়টি ব্রাইটনের মিডফিল্ডার জো নাইট। তাঁর সর্বোচ্চ গতি (ঘণ্টায়) ১২.৪৭ মাইল (২০ কিলোমিটার)। যেটা প্রিমিয়ার লিগে এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোনো খেলোয়াড়ের সবচেয়ে ধীরগতিতে দৌড়ানোর রেকর্ড। কিন্তু নাইটের ক্ষেত্রেও একটি সমস্যা আছে। ২০ বছর বয়সী এ ফুটবলার ব্রাইটনের হয়ে এবার মাঠে এক মিনিট খেলেছেন। এত অল্প সময়ে তাঁর দৌড়ের গতি দেখানোর সুযোগ পাওয়ার কথা নয়।

আরও পড়ুন

মেইল অনলাইন জানিয়েছে, এবারের মৌসুমে সবচেয়ে ধীরগতির খেলোয়াড়দের তালিকায় শীর্ষ চারে থাকা খেলোয়াড়দের সবাই দুই মিনিটের বেশি খেলেননি। ঘণ্টায় ১২.৬৯ মাইল গতিতে (২০.৪ কিলোমিটার) গতিতে দৌড়ানো ব্রাইটন উইঙ্গার নেহেমিয়া ওরিওলা খেলেছেন এক মিনিট। ক্রিস্টাল প্যালেসের হয়ে কয়েক মিনিট খেলা স্ট্রাইকার ওদসোনে এদুয়ার্দের গতি ঘণ্টায় ১৩.৭১ মাইল (২২.০ কিলোমিটার)। এভারটনের মিডফিল্ডার হ্যারিসন আর্মস্ট্রংও (১৪.৭৮ মাইল/২৩.৭৮ কিলোমিটার) কয়েক মিনিট মাঠে ছিলেন।

এই তালিকায় পাঁচে থাকা ব্রাইটনের সেন্টারব্যাক দিয়েগো কপ্পোলা মাঠে ছিলেন ১০৭ মিনিট। ইতালিয়ান এই ফুটবলারের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪.৯৯ মাইল (২৪.১২ কিলোমিটার)। মোটামুটি বেশ কিছু সময় মাঠে থাকা খেলোয়াড়দের মধ্যে আসলে কপ্পোলাই সবচেয়ে ধীরগতির।

আরও পড়ুন