বার্সেলোনার ‘নতুন ইনিয়েস্তা’ খ্যাতি পাওয়া কে এই ফিলিপাইনের ফুটবলার

বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিকের বেশ প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন ১৭ বছরের দ্রো ফার্নান্দেজবার্সেলোনা

মাত্র ১৮ বছর বয়সেই লামিনে ইয়ামাল হয়ে গেছেন বার্সেলোনার সবচেয়ে বড় তারকা। শুধু বার্সেলোনা কেন, স্পেন জাতীয় দলেরও বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুই-ই মনে করা হচ্ছে তাঁকে। তবে শুধু ইয়ামাল নন, বার্সেলোনা ও স্পেনের ভবিষ্যৎ রাঙাতে এমন আরও অনেকেই বড় হচ্ছেন লা মাসিয়া একাডেমিতে। তাঁদের কেউ কেউ এরই মধ্যে চলে এসেছেন আলোচনায়, দিয়েছেন বড় কিছু হয়ে ওঠার আভাস। তাঁদেরই একজন দ্রো ফার্নান্দেজ।

আরও পড়ুন

এরই মধ্যে বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিকের বেশ প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন ১৭ বছরের এই কিশোর। আবার বার্সেলোনা থেকে অনেক দূরে পৃথিবীর অন্য প্রান্তের এক জনপদের ফুটবলপ্রেমীদের নয়নমণিও এখন দ্রো ফার্নান্দেজ।

পুরো নাম পেদ্রো ফার্নান্দেজ সার্মিয়েন্তো। বার্সেলোনার লা মাসিয়া একাডেমিতে তাঁর বেড়ে ওঠা। সেখানেই একের পর এক সবাইকে মুগ্ধ করেছেন। বার্সেলোনার শুরুতে পরিকল্পনা ছিল চতুর্থ বিভাগের দল ‘বার্সা অ্যাতলেতিক’-এ খেলিয়ে ফার্নান্দেজকে আরেকটু পোক্ত করে তোলার। কিন্তু প্রাক্‌-মৌসুম প্রস্তুতিতে বার্সেলোনার সঙ্গে এশিয়া সফরে এসে দ্রো ফার্নান্দেজ তাক লাগিয়ে দিয়েছেন খোদ কোচ ফ্লিককেই।

বার্সেলোনার লা মাসিয়া একাডেমিতে বেড়ে ওঠা দ্রোর
বার্সেলোনা

জাপানের ক্লাব ভিসেল কোবের বিপক্ষে বদলি হিসেবে নামার মাত্র ৯ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে চোখধাঁধানো এক গোল করে চমকে দেন সবাইকে। সেই এক গোলেই যেন জানান দেন ‘বার্সার আকাশে নতুন এক নক্ষত্রের জন্ম হয়েছে’। ফ্লিক তাই আর দেরি করেননি। এরই মধ্যে বার্সেলোনা মূল দলের হয়ে লা লিগায় অভিষেক হয়ে গেছে তাঁর, অভিষেক হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়নস লিগেও।

আরও পড়ুন

দ্রোর এই উত্থানে স্পেনের চেয়ে বেশি শোরগোল হচ্ছে ফিলিপাইনে। কারণ, দ্রোর মা ফিলিপিনো। ১১ হাজার কিলোমিটার দূর থেকেও দেশটির মানুষ এখন বার্সেলোনার খেলা থাকলে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকেন। দলে দ্রো আছেন কি না, না থাকলে বদলি নামেন কি না। প্রায় এক শতাব্দী আগে ফিলিপাইন ও স্পেন দুই দেশের হয়েই খেলেছিলেন পাওলিনো আলকান্তারা, জিতেছিলেন বার্সার হয়ে ১০টি কাতালান চ্যাম্পিয়নশিপ। দ্রোর মাঝে এখন ফিলিপিনোরা সেই কিংবদন্তির ছায়া খুঁজছেন।

বার্সেলোনার জার্সিতে লা লিগায় ৪টি ম্যাচ খেলেছেন দ্রো

বয়স মাত্র ১৭ হলেও বড় ম্যাচে তাঁকে নামাতে ফ্লিকের খুব একটা ভাবতে হচ্ছে না। লিগে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে শুরু থেকেই খেলেছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগে অলিম্পিয়াকোসের জালে বার্সেলোনা ৬ গোল দেওয়ার দিনে দ্রো সতীর্থ ফেরমিন লোপেজকে দিয়ে করিয়েছেন চমৎকার এক গোল। হান্সি ফ্লিক তো এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, ‘ও দারুণ এক খেলোয়াড়, দিন দিন আরও ধারালো হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

হোয়ান গ্যাম্পার সেন্টারের স্কাউটদের মতে, দ্রোর ড্রিবলিং আর ওয়ান-টু-ওয়ান লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর দক্ষতা দেখার মতো। ছোটবেলায় ফুটসাল খেলেছেন বলে বলের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ দুর্দান্ত। তবে বয়সের কারণে শারীরিক শক্তি আর ফিনিশিং নিয়ে আরও কাজ করার জায়গা আছে তার।
গত মৌসুমে বার্সার হয়ে ইয়ুথ লিগ জেতা দ্রো এত জলদি মূল দলে জায়গা করে নেবেন, সেটা নিজেও ভাবেননি। তবে তাঁর কোচদের কিন্তু বরাবরই তাঁকে নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ছিল। তাঁর প্রথম কোচ লুইস পেরেজ স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বললেন, ‘শুরুতে ও খুব লাজুক ছিল। বড়দের সঙ্গে খেলতে নামলে প্রথমে খুঁজেই পাওয়া যেত না, কিন্তু একবার বল পায়ে পেলে ওর ওপর থেকে চোখ ফেরানো যায় না!’

অনেকে দ্রো-কে কিংবদন্তি আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার সঙ্গে তুলনা করা শুরু করেছেন।
বার্সেলোনা

মাঝমাঠে ‘নাম্বার এইট’ হিসেবে খেলতে পারেন, আবার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কিংবা উইঙ্গার হিসেবেও বেশ স্বচ্ছন্দ। অবশ্য দ্রোর নিজের পছন্দ উইং। সেখানে স্বাধীনতা বেশি থাকে বলে মনে করেন তিনি। এরই মধ্যে অনেকে তাঁকে কিংবদন্তি আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার সঙ্গে তুলনা করা শুরু করেছেন। তবে দ্রোর নিজের পছন্দ পেদ্রি। পেদ্রির ফুটবল–মস্তিষ্ক দেখে তিনি মুগ্ধ।

স্পেনের বয়সভিত্তিক সব দলে খেললেও ফিলিপাইনের ফুটবলপ্রেমীরা এখনো আশা করে আছেন, দ্রো তাঁদের হয়ে জাতীয় দলে খেলবেন। যদিও সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে লা মাসিয়া থেকে মূল দলের এই দীর্ঘ পথে দ্রো যেভাবে ডানা মেলছেন, তাতে মনে হচ্ছে খুব শিগগিরই স্পেনের জাতীয় দলেও তাঁর ডাক পড়বে।
ফিলিপিনোরা তখনো মনে হয় না তাঁকে নিয়ে গর্ব কম করবেন।

আরও পড়ুন