বার্সেলোনা যেভাবে ‘দেশি’, রিয়াল মাদ্রিদ ‘বিদেশি’

বার্সার একাডেেমি থেকে উঠে আসার দুজন ফুটবলার ইয়ামাল ও কুবারসিবার্সেলোনার ওয়েবসাইট

ক্লাব ফুটবলে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে একটা দিক থেকে বার্সেলোনা কিছুটা আলাদা। সে জন্য তাকাতে হবে ক্লাবটির স্কোয়াডে। বার্সার স্কোয়াডে ২৩ খেলোয়াড়ের মধ্যে ১৩ জনই তাদের একাডেমির। অর্থাৎ বার্সার একাডেমি লা মাসিয়া থেকেই উঠে এসেছেন এসব ফুটবলার।

বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের অবস্থা উল্টো। বিদেশি খেলোয়াড় খেলানো বিবেচনায় লা লিগায় দুই বছর ধরে শীর্ষে মাদ্রিদের ক্লাবটি। জাবি আলোনসোর স্কোয়াডে ২৫ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ১৮ জনই বিদেশি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে রিয়ালের স্কোয়াডে ৭২ শতাংশ খেলোয়াড়ই স্প্যানিশ নন।

মূল দলের জন্য খেলোয়াড় সংগ্রহে বার্সা নির্ভর করে নিজেদের একাডেমি ‘লা মাসিয়া’র ওপর। লামিনে ইয়ামাল, পাও কুবারসি এবং ফারমিন লোপেজের মতো নতুন প্রতিভার উত্থান হয়েছে বার্সার একাডেমি থেকে। বিপরীতে রিয়াল মাদ্রিদ তাকিয়ে থাকে বাজারে। তাদের সব নির্ভরতা দলবদলের বাজার ঘিরে। রিয়াল এভাবে দলে ভিড়িয়েছে কিলিয়ান এমবাপ্পে, জুড বেলিংহাম কিংবা ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনের মতো ফুটবলারদের।

আরও পড়ুন

শতাংশের হিসাবে বর্তমানে বার্সায় স্প্যানিশ খেলোয়াড়ের হার ৫৬.৫ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান অনুসারে বার্সেলোনা পৃথিবীর সবচেয়ে দামি দশটি ক্লাবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘লোকাল’ বা ‘স্থানীয়’ খেলোয়াড় খেলায়। রিয়ালে ২৫ জনের স্কোয়াডে মাত্র সাতজন খেলোয়াড় স্প্যানিশ (ব্রাহিম দিয়াজ মালাগায় জন্মগ্রহণ করেছেন, তবে মরক্কোর হয়ে খেলেন), যেটা রিয়ালকে বানিয়েছে ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে ‘নন–লোকাল’ দল।

রিয়াল মাদ্রিদের তারকা খেলোয়াড়দের বেশিরভাগই বিদেশি
ইনস্টাগ্রাম

বিদেশি খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভরতায় রিয়ালের পরই আতলেতিকো মাদ্রিদ। তাদের ২৪ খেলোয়াড়ের মধ্যে ১৬ জন বিদেশি (৬৬.৭%)। আতলেতিকোর পরে সেভিলা এবং রিয়েল ওভিয়েদো রয়েছে। এ দুটি ক্লাবে ১৫ জন করে বিদেশি খেলোয়াড় (প্রায় ৬০%) আছে। ভিয়ারিয়াল, জিরোনা এবং রায়ো ভায়োকানোতেও এক ডজনের বেশি বিদেশি খেলোয়াড় খেলেন।

অ্যাথলেটিক বিলবাও এবং ওসাসুনার মতো দল, যারা দেশীয় খেলোয়াড়ের প্রতি নির্ভর করার কারণে পরিচিত, তাদের দলে যথাক্রমে মাত্র তিন এবং চারজন বিদেশি খেলোয়াড় রয়েছেন। লেভান্তে এবং এস্পানিয়লে দেশীয় ফুটবলারদের আধিক্য আছে। এই দুই দলে সাতজন করে বিদেশি খেলোয়াড়।

আরও পড়ুন

ইউরোপিয়ান শীর্ষ ক্লাবগুলোর মধ্যেও রিয়ালের অবস্থান কিন্তু ওপরের দিকেই। যদিও প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর চেয়ে খানিকটা পিছিয়েই তারা। যেমন টটেনহাম হটস্পার্স ৭৯.৩% বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে শীর্ষে। দ্বিতীয় লিভারপুলে বিদেশি খেলোয়াড়ের হার ৭৭.৮%।

ম্যানচেস্টার সিটি এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে বিদেশি খেলোয়াড়ের হার ৭৩.১%। অন্যদের মধ্যে আর্সেনাল এবং চেলসিতে বিদেশি খেলোয়াড় প্রায় ৬৮%। ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে বিদেশি খেলোয়াড় ৬০.৯% এবং জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখে বিদেশি খেলোয়াড় ৪৮.৫%।

আরও পড়ুন

বার্সা ও রিয়ালের এই দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান একটি বিষয় স্পষ্ট করে। বার্সা যেখানে নিজেদের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে লা মাসিয়াকে খেলোয়াড় তৈরির কারখানা বানিয়েছে, সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান দল রিয়াল বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুতিশীল ও প্রতিভাবান তরুণদের ঐক্যবদ্ধ করার ওপরই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।